‘আমাদের জীবনটা অভিনয়ের মাস্টারক্লাস, শুধু এর রিটেক নেই,’ ইরফানকে খোলা চিঠি সুতপার

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ওয়েব ডেস্ক: ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই থামিয়ে বুধবার না-ফেরা দেশে চলে গিয়েছেন ইরফান খান। কিন্তু ইরফানের স্মৃতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছেন তাঁর পরিবার ও গুণমুগ্ধ ভক্তরা।গত দু বছর ধরে মারণরোগের সঙ্গে যখন লড়াই করেছেন ইরফান, সেই লড়াইয়ে সারাক্ষণ পাশে থেকেছেন তাঁর পত্নী। সেই লড়াই নিয়েই এবার মুখ খুললেন তাঁর স্ত্রী সুতপা শিকদার।

শুক্রবার সকালেই সুতপা জানিয়েছেন, ইরফান তাঁর কাছে শুধুই প্রাপ্তি, কোনওভাবেই হারিয়ে যাওয়া নয়। ন্যশনাল ড্রামা স্কুলে প্রথম পরিচয় তাঁদের। তারপর প্রেম-বিয়ে-সংসার-সন্তান, মাঝে কেটেছে অনেকগুলো বছর। মারণরোগের সঙ্গে ইরফানের লড়াইয়ের সহযোদ্ধা ছিলেন সুতপা। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন, “আজকাল শুধু সুতপার জন্যই বাঁচতে ইচ্ছে করে।“

বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেতার প্রয়াণের পর সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিডে ঘুরেফিরে এসেছে অভিনেতার জীবনের নানা কথা। ইরফানের ছবির দৃশ্য, সংলাপ, সাক্ষাৎকার এইসবই এখন ক্রমাগত সার্চ করে চলেছেন তাঁর ভক্তরা। এবার পরিবারের তরফে ইরফানের সম্পর্কে অনেক অজানা কথা জানালেন সুতপাও। অভিনেতার স্ত্রী লিখেছেন, “সারা বিশ্ব ভাবছে ইরফানের চলে যাওয়াটা তাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষতি। লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার সঙ্গে একই ভাবে সমব্যথী। তাই শুধু আমিই একা হয়ে গেছি এটা কীভাবে বলব? আর এটা ফ্যামিলি স্টেটমেন্ট সেটাই বা কেমন করে বলা যায়? সকলেই তো আমার মত করেই ভাবছেন। তবে সবাইকে আশ্বস্ত করে বলতে ওর চলে যাওয়াটা ক্ষতি নয় বরং পরম প্রাপ্তি। এতদিন ও আমাদের যে শিখিয়েছে বাস্তব জীবনে সেগুলো অ্যাপ্লাই করে এগিয়ে চলাই এখন আমাদের লক্ষ্য।“

আরও পড়ুন: ঋষি কাপুরের শেষকৃত্যে ফোন হাতে আলিয়া! ট্রোলিংয়ের মুখে পড়লেন রণবীরের গার্লফ্রেন্ড

তবে ইরফানের প্রতি একটা বড় অভিযোগ রয়েছে সুতপার। তিনি বলছেন, “একটা রাগ, সারাজীবনের জন্য আমায় নষ্ট করে দিয়ে গেল ও। ইরফানের ভাষায় সবই হচ্ছে ‘ম্যাজিকাল’। ও থাকুক আর নাই থাকুক ওর ভাবনাগুলো আমার জীবনে থেকে যাবে সবসময়ের জন্য। ভীষণ খুঁতখুঁতে ছিল। সবকিছুতে ওর নিখুঁত হওয়াটা আমাকেও সাধারণ থেকে অনন্য করে তুলেছে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ও ছন্দ খুঁজে বেড়াত। একনকি চিৎকার-চেঁচামেচি কিংবা হইহুল্লোড়েও। আর সেই ছন্দে আমাকেও গাইতে আর নাচতে শিখিয়ে গিয়েছে মানুষটা। জীবনটা একটা সিনেমার মত ছিল। তারপরেই সেখানে ঢুকে পড়ল এক অযাচিত অতিথি। জীবনের ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়েই তাঁর সঙ্গে যুজতে শুরু করেছিলাম। মনে করতাম ডাক্তারের বলা প্রতিটা কথা একটা স্ক্রিপ্টের সমান, যেখানে আমায় নিখুঁত পারফরম্যান্স করে পাশ করতে হবে। তাই খুঁটিনাটি কিছুই বাদ দিতাম না।“

সুতপার কথায়, “আমাদের সম্পর্কতা একটা ঐক্য। ৩৫ বছরের বোঝাপড়া। এটা শুধু বিয়ে নয়, বন্ধুত্বও। তবে শেষ আড়াই বছর নিজের গতিতে চলেছে এই ঐক্যের সম্পর্ক। ইরফান ছিল জীবনের অর্কেস্ট্রার মূল চরিত্র। বাকি সবকিছুই জীবনের নিয়মে চলেছে। শুরু থেকে শেষ সবটাই হয়েছে নিয়তির নিয়মে। প্রবল যন্ত্রণা থেকে একটু বিস্ময়, অল্প আনন্দের মুহূর্তে অনেকটা পাওনা, সুন্দরের নতুন অর্থ খুঁজে পাওয়া, আবেগে ভেসে যাওয়া—–গত আড়াই বছরে এর সবই হয়েছে।“

শেষের দু’ থেকে আড়াই বছর আমার কাছে ছিল নাটকের মধ্যান্তরের মতো। যেখানে ইরফান চূড়ান্তভাবে অর্কেস্ট্রা বাজিয়ের ভূমিকায় পালন করছে। এই সময়টা আমাদের ৩৫ বছরের সম্পর্কের চেয়ে একেবারে আলাদা। আমাদের বিয়েটা আসলে বিয়ে নয়, ওটা এটা মিলন ছিল। আমার ছোট্ট পরিবারকে আমি একটা নৌকায় দেখতে পাই। দুই ছেলে বাবিল আর অয়ন বাবার পরামর্শ মেনে প্যাডেল করে সামনে এগিয়ে চলেছে। ইরফান বলছে ‘ওখান থেকে নয় এখান থেকে ঘোরো’। তবুও জানি এটা জীবন, সিনেমা নয়-এর কোনও রিটেক হয় না।

বাবার পরামর্শ মেনেই আমার ছেলেরা যেন প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়েও সেই নৌকা নিরাপদে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে- আন্তরিকভাবে এটাই কামনা করি। বাবিল বলেছে ও ইরফানের কাছে কী শিখেছে- অনিশ্চয়তার হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে তার তালে তাল মেলাতে শেখা এবং এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতি তোমার বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে রাখা। অয়ন বলল, বাবার কাছে ও শিখেছে মনকে নিজের আয়ত্তে রাখা। মনকে কোনওভাবেই তোমাকে আয়ত্তে না আনতে দেওয়া।

গত আড়াই বছরের জার্নিতে, যেসব ডাক্তারকে সঙ্গে পেয়েছেন তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সুতপা। ধন্যবাদ জানিয়েছেন অভিনেতার সব ভক্তদেরও। আর বলেছেন, “জয়ের পথে যাত্রা করেছে ইরফান। ওকে যেখানে রেখে এলাম সেখানে ওর পছন্দের গাছটাও পুঁতে এসেছি। যেখানে ইরফান শুয়ে আছে-যুদ্ধ জয়ের পর এক প্রশান্ত ঘুমে… সময় লাগবে জানি তবুও সেই গাছেও ফুল ফুটবে..গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। যে গন্ধ ছুঁয়ে যাবে সেই সকল মানুষের অন্তর আত্মাকে যাঁরা শুধু ওঁর অনুরাগী নয়, যাঁদের  আমি আমার পরিবারের অংশ বলতেই ভালবাসি।“

আরও পড়ুন: করোনা-যোদ্ধাদের সম্মান! ৩ মে হাসপাতালে পাপড়ি বর্ষণ করবে সেনা

Gmail 4
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest