আমরা গর্বিত ভারতীয়, ভিক্ষা চাইনা, অধিকার চাই – ব্রিগেড থেকে স্পষ্ট বার্তা আব্বাস সিদ্দিকীর

‘আমার প্রিয় দেশবাসী’, বক্তব্যের শুরুতেই আব্বাসের এই শব্দবন্ধ উচ্চারণে আবেগের সঙ্গে মিশে ছিল দৃঢ়তা। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সকলেই এ দেশের মানুষ।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

বাম – কংগ্রেসের যোথ ব্রিগেড সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে উৎখাতের পাশাপাশি জোট নিয়ে কংগ্রেসকে বার্তা দিলেন ISF-এর পৃষ্ঠপোষক আব্বাস সিদ্দিকি। রবিবারের ব্রিগেডে তিনি বলেন, ভাগিদারি করতে এসেছি, তোষণ করতে হয়।

বেলা ২.১৫ মিনিট। মঞ্চে তখন বক্তব্য রাখছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আচমকাই স্লোগান উঠল, ‘আব্বাস, আব্বাস… ভাইজান…’ উত্তেজনায় তখন ফুটছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মী সমর্থকরা। ‘ভাইজান’কে একবার স্পর্শ করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওঁরা। গোটা পরিস্থিতিতে বক্তব্য থামিয়ে দিতে বাধ্য হন অধীর চৌধুরী। ভিড় সামলে দু’পাশে নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন আব্বাস। গোটা দৃশ্য তখন ভীষণভাবে রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ। স্টেজে বক্তব্য থামিয়ে দাঁড়িয়ে অধীর, আর আব্বাসকে আলিঙ্গন করে মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছেন মহম্মদ সেলিম। এগিয়ে এসে হাত মেলাতে, আলিঙ্গন করতে দেখা যায় সূর্যকান্ত মিশ্রকেও। তখনও বক্তব্য থামিয়ে দাঁড়িয়ে অধীর। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এগিয়ে এসে অধীরকে বলেন, ‘আমি এ বার বক্তব্য শুরু করতে পারেন।’ বলা শুরুও করেছিলেন অধীর, তবে তা দীর্ঘায়িত করেননি। তারপরই বলতে ওঠেন আব্বাস।

আরও পড়ুন: ব্রিগেডে থাকছেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, লিখিত বার্তায় জানালেন ‘অকল্পনীয় যন্ত্রণার’ কথা

এদিন শুরু থেকেই চালিয়ে খেলেন আব্বাস।মহম্মদ সেলিম, ‘বিমান দা’ বামফ্রন্টের শরিক দলের প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে নিজের শ্রদ্ধা জানান তিনি। লক্ষ্যণীয়ভাবে তখনও তাঁর মুখে শোনা যায়নি কংগ্রেসের নাম। গলা ফাটিয়ে আব্বাস বললেন, ‘আগামী নির্বাচনে রক্ত দিয়ে আমরা মাতৃভূমিকে রক্ষা করব। আমরা বামপন্থীর প্রত্যেকটা, যেখানে যেখানে শরিক দল প্রার্থী দেবে, সেখানে সেখানে পুরনো সব ইতিহাস ভুলে গিয়ে বিজেপি ও মমতাকে উৎখাত করে ছাড়ব।’

‘আমার প্রিয় দেশবাসী’, বক্তব্যের শুরুতেই আব্বাসের এই শব্দবন্ধ উচ্চারণে আবেগের সঙ্গে মিশে ছিল দৃঢ়তা। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সকলেই এ দেশের মানুষ। এখানে কোনও বৈষম্য আইএসএফ মানবে না। রাজ্য সরকারের তুমুল সমালোচনা করে আব্বাস বলেন, ‘আজকে বাংলার স্বাধীনতা কেড়েছে এই মমতা। নারীদের অধিকার কেড়েছে এই মমতা। একটা রেপের জন্য ২ লক্ষ টাকা মূল্য ধারণ করেছে এই মমতা। সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত নয় এমন মাদ্রাসার শিক্ষকরা, টেটের শিক্ষকরা, পার্শ্ব শিক্ষকরা, সিভিক ভলান্টিয়াররা, পুলিশ কর্মীরা মমতার আমলে বিপদে রয়েছে। এর দাদাগিরিতে কেউ কথা বলতে পারে না। একমাত্র এই বাঘের বাচ্চাটা কথা বলে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেলাম, ২০২১-এ মমতাকে জিরো করে আমরা দেখিয়ে দেবো। সঙ্গে বিজেপি নামক কালো হাতটাকে ভেঙে দেশ থেকে নিখোঁজ করে দিতে হবে’।

আব্বাসের অভিযোগ, ‘বাংলার মানুষ মমতার ওপরে ক্ষিপ্ত। এদের দুর্নীতিতে বাংলার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। বাংলার মানুষকে এতদিন প্রশাসন দেখিয়ে রুখে রেখেছিল। কিন্তু এখন আর ভয় পাওয়ার ব্যাপার নেই, কারণ দিদিমণির হাত থেকে প্রশাসন চলে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে। আর এক মাস পর বাংলা দিদির হাত থেকে চলে যাচ্ছে। আমরা বাংলা দখল করবো। আমরা গণতন্ত্র বাঁচাবো, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান দেবো, প্রত্যেকের পেটে ভাতের জোগান দেবো, শিল্প তৈরি করবো’।

আব্বাস বলেন, “এই ব্রিগেডের ময়দানে সভা করা আমার বড় স্বপ্ন ছিল। জোট যদি আরও এক সপ্তাহ আগে হত, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ডবল লোক ব্রিগেডে আনতাম।” এর পরই কংগ্রেস সম্পর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। বলেন, ‘আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে যে আপনি বললেন যেখানে যেখানে বাম শরিক দাঁড়াবে সেখানে সেখানে ভোট দেবেন, কংগ্রেসের নাম বললেন না কেন? একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই, ভাগিদারি করতে এসেছি, কারও তোষণ করতে আমি আসিনি। পিছিয়ে পড়া মানুষের হক বুঝে নিতে হবে। যদি কেউ মনে করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো দরকার, দরজা খোলা রয়েছে। আগামী দিনে তাদের হয়েও আব্বাস সিদ্দিকি লড়াই করবে, কথা দিয়ে গেলাম’। ঠিক পিছনেই মঞ্চে বসে রয়েছেন অধীর চৌধুরী, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল।

সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর কটাক্ষ, ‘আজ সব থেকে বেশি আফশোস করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ওর ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে’। ৩০ আসন ছাড়ার জন্য বিমান বসুকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বক্তব্য শেষে ‘আমরা ভারতীয়, আমরা গর্বিত, ভিক্ষা নয়, অধিকার চাই’ স্লোগান তোলেন আব্বাস।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আব্বাস একেবারে মঞ্চ থেকেই কংগ্রেসের ওপর চাপ তৈরি করলেন। উল্লেখ্য, আসন রফার ক্ষেত্রে আব্বাসকে ৫-৬টি আসনে বেশি ছাড়তে রাজি ছিলেন না অধীর। কিন্তু শেষমেশ বামেদের থেকে পছন্দের ৩০ টি আসন পেয়েছেন আব্বাস। নন্দীগ্রামও দাবি করেছেন তিনি। আসন নিয়ে যে অধীরকেই পাল্টা চাপে রাখলেন আব্বাস। বিশ্লেষকরা বললেন, আব্বাস দেখিয়ে দিলেন তাঁর রাজনৈতিক ঔদ্ধত্য।

আরও পড়ুন: ১,৯৯৯ টাকায় নতুন হ্যান্ডসেট আনছে Jio, আনলিমিটেড ভয়েস কল-৪জি ডেটা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest