Bhoot Chaturdashi 14 Shaak Ayurvedic Importance

Bhoot Chaturdashi : ভূত চতুর্দশীর ১৪ শাকই আয়ুর্বেদিক গুণে ভরপুর, জেনে নিন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

দীপাবলির আগে চতুর্দশীতে ১৪ প্রকার প্রদীপ জ্বালানো , ১৪ প্রকার শাক খাওয়ার রীতি  বহু পুরাকাল থেকেই হিন্দু সমাজ ও সভ্যতায় চলে আসছে।

কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই ১৪ প্রকার শাক খাওয়ার সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বৃহৎ সম্পর্কের কথা? আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা, অষ্টাঙ্গ হৃদয়, ভাবপ্রকাশ-এ  ছত্রে ছত্রে যার বিশেষ বর্ণনা করা আছে। সেই বৈদিক যুগ ও পরবর্তী সময়ের টীকাগুলিতেও।

১৪ শাকে কী কী থাকে?

১. ওল: বিজ্ঞানসম্মত নাম Amorphophallus paeoniifolius।  গুরুত্বপূর্ণ কন্দজাতীয় উদ্ভিদটির কচি পাতা এবং কন্দ হিসেবে ওল সবার প্রিয়। মাটির নীচে থাকা কন্দ থেকেই পাতা জন্মায়। ওলের কন্দ অর্শ, প্লিহার বৃদ্ধির রোগ  ও রক্তআমাশার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

২. কেঁউ: বিজ্ঞানসম্মত নাম Cheilocostus speciosus। এ হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভিদ। ভারতে রাস্তার ধারে, পতিত জমিতে  কেঁউ যথেষ্ট দেখা যায়। মাটির নীচে এর কন্দ জন্মায়। অসাধারণ ভেষজগুণের জন্য এই উদ্ভিদটি প্রাচীনকাল থেকে ভারতে সমাদৃত। নরম পাতা। কেঁউ পাতার রস ভাল হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ,  কৃমি, চুলকানি ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

৩. বেতো: বিজ্ঞানসম্মত নাম Chenopodium album। গ্রাম বাংলার খুব পরিচিত শাক হল বেথুয়া বা  বেতো। আপনা-আপনি জন্মায় আগাছার মতো। পাতার রঙ ফ্যাকাশে সবুজ। বেথুয়া শাকে প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও জিঙ্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তাল্পতা, অম্বল, কৃমি,  মুখে ঘা, ত্বকের রোগ, বাত ও অর্শ প্রতিরোধে বেথুয়া শাক খুব উপকারী।

৪. কালকাসুন্দা: বিজ্ঞানসম্মত নাম Senna sophera। আদতে ক্রান্তীয় আমেরিকার এই গুল্ম জাতীয় গাছটি এখন সারা ভারতে রাস্তার দু’ধারে, সর্বত্র দেখা যায়। ভোজ্য অংশ হিসেবে  নরম পাতা, অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, জ্বর, ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস ব্যবহৃত হয়।

৫. সরিষা বা সর্ষে: বিজ্ঞানসম্মত নাম Brassica juncea। সারা  ভারতে বহুদিন ধরেই রবি শস্য হিসেবে এর চাষ হয়ে আসছে। গ্রিন স্যালাড হিসেবেও সর্ষে শাক কাঁচা খাওয়া হয়। আর মশলা হিসেবে সর্ষের ব্যবহার তো সারা ভারতেই প্রচলিত।  ভিটামিন কে, ভিটামি সি এবং ভিটামিন ই এবং ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার সমৃদ্ধ উৎস হল এই শাক।

৬. নিম: বিজ্ঞানসম্মত নাম  Azadirachta indica। এই বহুবর্ষজীবী বৃক্ষটিকে আমরা সবাই চিনি।  ভোজ্য অংশ হিসেবে  কচি পাতা ও ফুল অধিক ব্যবহৃত । নিম পাতা বা পাতার রস কুষ্ঠ, চর্মরোগ, বহুমুত্র রোগের অন্যতম ওষুধ।

৭. জয়ন্তী: বিজ্ঞানসম্মত নাম- Sesbania sesban। সংস্কৃত ‘জয়ন্তিকা’ শব্দ থেকে জয়ন্তী নামের উদ্ভব। কচি সবুজ টাটকা পাতা, দরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতি, কৃমিনাশ, ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কাজ করে।

৮. শালিঞ্চ বা শিঞ্চে: বিজ্ঞানসম্মত নাম Alternanthera sessilis। অনেকে এই শাককে সাঁচিশাকও বলে। নীচু জমিতে সামান্য আর্দ্রতা থাকলেই সেখানে শালিঞ্চা জন্মায়। সাধারণ মানুষ একে আগাছা বলেই মনে করে। পাতাসহ ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য শালিঞ্চা শাক খুব উপকারী। ডায়েরিয়া, অজীর্ন, চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে।

৯. গুড়ুচী: বিজ্ঞানসম্মত নাম Tinospora cordifolia। হৃৎপিন্ড আকৃতির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় আয়ুশ মন্ত্রক একটি বছর ধরে অভিযান চালিয়ে ছিল এই গাছের গুণাবলী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায় ।

১০. পটলপত্র: বিজ্ঞানসম্মত নাম Trichosanthes dioica। সবজি হিসেবে পটল যতটা জনপ্রিয়, শাক হিসেবে পটল পাতা বা পলতা ততটাই অপরিচিত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহুল রোগে ব্যবহৃত পাতা ও ফল রক্তবর্ধক ও রক্তশোধক হিসেবে এবং লিভার ও চর্ম রোগ সারাতে পটল পাতা খুব কার্যকর। ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে ব্যবহার হয়। পটল পাতা নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পটল পাতা ক্ষিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। ক্ষতস্থানে পটল পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।

১১. শেলুকা: বিজ্ঞানসম্মত নাম Anethum graveolens। কাঁচা গাছ ও বীজ মশলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। আর শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাতাসহ ডগা। সংস্কৃতে শুলফাকে বলে শতপুষ্প। ফুলের রঙ উজ্জ্বল হলুদ। পুরো গাছেরই একটা তীব্র সুগন্ধ আছে। বীজ সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত ও স্বাদে তেতো। পাতাসহ ডগা এবং বীজ।
মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে শুলফা শাক খুব উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই শুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর ইত্যদি রোগের নিরাময়ে শুলফা খুবই কার্যকর।

১২. হিঞ্চে: বিজ্ঞানসম্মত নাম Enhydra fluctuans। হেলেঞ্চা বা হিংচে হল জলজ লতানে গাছ। এর মূল জলাশয়ের পাড়ে কাদা-মাটির মধ্যে থাকে, আর আগা ছড়িয়ে পড়ে জলে বা কাদা মাটির উপর। আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে তাই রোগপ্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।

১৩. ঘেঁটু /ঘন্টাকর্ণ: বিজ্ঞানসম্মত নাম Clerodendrum infortunatum। ঘেঁটু হল ভেষজগুণসম্পন্ন বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পাতায় প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে এছাড়া চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।

১৪. শুষনি: বিজ্ঞানসম্মত নাম Marsilea quadrifolia / Marsilea minuta। শুষনি হল উদ্ভিদ। ভারতসহ দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, চিন, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে শাক ও ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে শুষনি খুব পরিচিত। ভোজ্য অংশ পাতা, নিদ্রাহীনতায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি শাক খেলে কাজ দেয়। এ ছাড়া নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest