৫ মাসের এই মেয়ে ‘পাথর’ হয়ে যাচ্ছে ব্রিটেনে,অসহায় চিকিৎসকরা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

দূর থেকে দেখলে চিনামাটির পুতুল মনে হতে বাধ্য। নরম চাহনি, তুলতুলে গালের সেই একরত্তি শিশু বাস্তবেও সত্যি সত্যি পাথর হওয়ার পথে। চিকিৎসকরা হাত তুলে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই। রক্তমাংসের শিশু হিসেবে মায়ের কোলে জন্ম নিলেও, যত দিন জীবিত থাকবে, পাথর হয়েই তাকে কাটাতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: ‘মোদি বাবু-পেট্রল বেকাবু!’ বাংলাতেও জ্বালানির সেঞ্চুরি, মোদীকে নিশানা অভিষেকের

৩১ জানুয়ারি জন্ম। বাবা-মায়ের স্নেহের স্পর্শে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিল ছোট্ট মেয়ে। কিন্তু মাত্র পাঁচ মাস বয়সে পৌঁছতে পৌঁছতেই তার নরম তুলতুলে  শরীর পরিণত হয়ে যাচ্ছে ‘পাথরে’। রূপকথার গল্প মন হলেও এমনই অতি বিরল জিনগত  রোগের শিকার (extremely rare genetic condition) মাস পাঁচের খুদে লেক্সি রবিনস Lexi Robins। তার শরীরে সমস্ত মাংসপেশির পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে হাড়ে (turns muscles into bones)। লেক্সির এই বিরল জিনগত রোগের নাম  ফাইব্রোডিস্প্ল্যাসিয়া ওসিফিক্যান্স প্রোগ্রেসিভা [Fibrodysplasia Ossificans Progressiva (FOP)]। বিরল এই রোগ ২০ লক্ষ জনের মধ্য একজনের শরীরে দেখা যায়।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ লন্ডনের রিবনস দম্পতির কোল আলো করে জন্ম নেয় দ্বিতীয় সন্তান লেক্সি। জন্মের সময়ে আর পাঁচজনের থেকে কোনও অংশে আলাদা মনে হয়নি তাকে। এমনকি চিকিৎসকরাও কোনও পার্থক্য অনুভব করেননি। তবে মা অ্যালেক্স লক্ষ্য করেছিলেন মেয়ের পায়ের বুড়ো আঙুলের কোনও নড়াছড়া নেই (didn’t move her thumb)। এমনকি পায়ের পাতার মাপও বেশ বড় (bigger toes)। কিন্তু তাতে এমন একটি রোগ মেয়েকে গ্রাস করবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরেও মেয়ে পায়ে সমস্যা থেকে যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে চিকিৎসকের যান চিন্তিত বাবা-মা। তবে লেক্সির এই বিরল রোগ চিহ্নিত হতে কিছুটা সময় লেগেছিল।

করোনায় যখন চারিদিকে মৃত্যুমিছিল, সেই সময় ফুটফুটে শিশুটিকে পেয়ে সংসার ভরে উঠেছিল অ্যালেক্স এবং ডেভ রবিন্‌সের। এমনিতে সারা ক্ষণ হাসিখুশি লেক্সি। কোথাও কোনও সমস্যা চোখে পড়েনি। কিন্তু ধন্দ কাটে কয়েক দিন যেতেই।

অ্যালেক্স এবং ডেভ জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু তাঁরা লক্ষ্য করেন, মেয়ে হাতের বুড়ো আঙুলটি একেবারেই নাড়াচ্ছে না। পায়ের আঙুলগুলোও যে স্বাভাবিকের থেকে একটু বড়। এ ভাবে কয়েক দিন কাটার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন না হওয়ায়, চিকিৎসকের কাছে ছোটেন তাঁরা। প্রথমে কেউই রোগ ধরতে পারেননি। শুধু বলা হয়, তাঁদের মেয়ে হাঁটতে পারবে না। সুস্থ-সবল মেয়েকে দেখে তা বিশ্বাস করতে পারেননি অ্যালেক্স এবং ডেভ। তাই বিশেষজ্ঞকে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন।

 

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Alexandra Robins (@alexrobins_)

 

লেক্সির মা অ্যালেক্স জানিয়েছেন, “প্রথমে ডাক্তার এক্স-রে করায়। তাতে দেখা যায় তার পায়ে মাংসপেশির বদলে পুরোটাই হাড়। তার পায়ের বুড়ো আঙুলে দুটো  জয়েন্ট।” Fibrodysplasia Ossificans Progressiva যাদের শরীরে বাসা বাঁধে তাদের ক্ষেত্রে মানুষের শরীরে যে হাড়ের খাঁচা অর্থাৎ কঙ্কাল থাকে, তার ওপরে মাংসপেশির বদলে আবারও হাড় তৈরি শুরু হয়ে যায়। মাংসপেশি, টিস্যু সবই বদলে যেতে থাকে হাড়ে, ফলে বন্ধ হয়ে যায় নড়াছড়া। ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যায় শরীর (bodyturns into stone)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতির পরেও যদি কেউ  FOP-র শিকার হন, জন্মের ২০ বছরের মধ্যেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন, ৪০ বছরের মধ্যেই মৃত্যু অনিবার্য।

1625386211 baby main

জানা গিয়েছে, লেক্সির রোগ নিয়ে চিকিৎসক বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেছেন। লেক্সির বাবা-মা ডনেশনের আবেদন জানিয়েছেন যাতে এই গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। পাশাপাশি, অ্যালেক্স এবং তাঁর স্বামী সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু করেছেন ক্যাম্পেন, যাতে সন্তান জন্মের পরে বাবা-মায়েরা নিজেরাই সন্তান লেক্সির মত কোনওভাবে বিরল কোনও অসুখে আক্রান্ত কিনা, তা সহজেই বুঝতে পারেন। এবং বুঝতে পারলে কী করবেন, তাও জানাচ্ছেন।

লেক্সির মা অ্যালেক্স জানিয়েছেন, “জিনগত ত্রুটির ফলে মাত্র পাঁচ এমএস বয়সেই সে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীর পাথর হয়ে যাওয়ায় তাঁকে ইনজেকশন বা কোনও টিকা দেওয়া যায়নি জন্মের পর থেকেই। ফলে সামান্য বিষয়েই সে ভুগতে শুরু করে। দাঁতে সমস্যা হলেও কোনঅ চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকরা জানান, লেক্সি কোনওদিন সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন না।” অ্যালেক্স বলেন, “প্রথমে এক্স রে-র পরে আমাদের বলা হয়েছিল মেয়ের হাঁটতে পারবে না সম্ভবত। কিন্তু আমরা সে কথা বিশ্বাস করিনি, কারণ লেক্সি ছোট থেকেই ভীষণ শক্ত সমর্থ। সে আঙুল নাড়াতে না পারলে যথেষ্ট জোড়ে লাথি মারতে পারে। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। সারা রাত ঘুমায়। কোনওভাবে বিরক্ত করে না অন্য বাচ্চাদের মতো। খিল খিল করে হাসে, প্রায় কাঁদেই না।

আরও পড়ুন: দই কি মানসিক চাপও কমাতে পারে ? জেনে নিন?

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest