Let's visit Turtuk, the last village in India, nature is waiting for you

Travel: চলুন ঘুরে আসি ভারতের শেষ গ্রাম তুরতুক, প্রকৃতি আপনার অপেক্ষায়

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

আপনাদের এখন জানাচ্ছি এমন একটি গ্রামের কথা যে গ্রামটি ভারতের একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত।

প্রথমেই বলি নুব্রা থেকে তুরতুক যাওয়ার পুরো পথে একবারের জন্যও কোথাও সবুজের দেখা পাবেন না আপনি। পাহাড় থেকে বেশ সমতলে নেমে যাওয়ার সময় হঠাত এক চিলতে সবুজ চোখে পড়বে আপনার কোথাও। এরপর আবার দেখবেন সেই ধূসর রুক্ষ পাহাড়, ঝুরো মাটির দেয়াল, গোঙানো নদী, (শীতের সময় হলে) অসহ্য শীত, ধু ধু প্রান্তর, পাথর ছুটে আসা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথ। হয়তো ভাববেন তুরতুকও এমনই হবে—কোথাও সবুজের কোনো চিহ্ন নেই, চারদিকেই শুধু রুক্ষতা আর রুক্ষতা! কিন্তু তুরতুক পৌঁছে যা দেখবেন, আপনার মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসবে—এ যে বিধাতার আশীর্বাদ!

এই গ্রামের অবস্থান ভারতের লেহ শহর থেকে ২০৫ কিলোমিটার! যেতে সময় লাগবে আট থেকে নয় ঘণ্টা। তিন হাজারের চেয়ে কিছু বেশি মানুষের বসবাস এই গ্রামে। তুরতুকের গ্রামের চারপাশ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। সেসব পাহাড়ে কোথাও নেই গাছ, ঘাস বা সবুজের এতটুকু ছোঁয়া। চারপাশের পাহাড়গুলো কোনোটি পাথুরে, কোনোটি মাটির, কোনোটি বরফের, কোনোটি ইস্পাতের মতো কঠিন। শুধু অদ্ভুতভাবে এই তুরতুক নামের গ্রামটির সবটুকুই সবুজে মোড়ানো! বিধাতার বিশেষ আশীর্বাদ ছাড়া এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তুরতুক ভারতের জম্বু-কাশ্মীর রাজ্যের লেহ জেলার নুব্রা তেহসিলের অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রাম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এটি। আনুষ্ঠানিকভাবে এই পথে ভারত-পাকিস্তানে চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখান থেকে পাকিস্তান সীমান্ত মাত্র আট কিলোমিটার দূরে।

তুরতুক গ্রামে ধান থেকে শুরু করে গম, জব, আলু, কপিসহ অন্যান্য তরকারি, আপেলসহ নানা রকম ফলমূলের চাষ হয় নিয়মিত। নানা রকম ফুল, পাথুরে বাড়ি, ঝর্ণার বিশুদ্ধ জল সবই আছে এখানে। আছে উত্তাল, খরস্রোতা সায়ক নদ। গায়ে গায়ে লেপটে থাকা পাহাড়ের সারি, পাহাড় থেকে বয়ে চলা ঝর্ণা, ঝিরি ও নদী। এই গ্রামের আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই গ্রামের বাইরের পাহাড়গুলো যখন বরফে মোড়ানো থাকে, তখন এখানে বরফ পড়লেও সেটা জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার মতো খুব বেশি নয়। এখানে বরফ পড়ে ঠিকই, কিন্তু একটু রোদের পরশ পেলেই সেই বরফ দ্রুত গলে জল হয়ে পাশের সায়ক নদে চলে যায়।

আরও পড়ুন: Haunted Places: ভারতের সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়গা এগুলি, একদম শেষেরটায় রাতে একা যেতে পারবেন না আপনি

তুরতুকের সব ঘরবাড়িই পাথরের। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। প্রকৃতির দান, ট্যুরিস্টদের যাওয়া–আসা তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে। একদম সাদামাটা জীবন তুরতুকের মানুষের। যদিও সেখানে আছে বিদ্যুৎ, টিভি, ডিশের সংযোগসহ আর নানা রকম সুযোগ। এমনকি আছে মোবাইলও! তবে সবকিছু মিলে তারা খুবই দরিদ্র আর অবহেলিত একটি প্রায় বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী। যেখানে প্রকৃতি ভীষণ উদার, বিধাতা ভীষণ আবেগপ্রবণ আর মানুষ সবাই খুব সাধারণ।

তবে এই গ্রামের যারা একটু অবস্থাসম্পন্ন বা যাদের নিজেদের থাকার ঘর ছাড়াও আছে দু-একটি বেশি বা তার চেয়ে বেশি কক্ষ, সেগুলো তারা ট্যুরিস্টদের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকে হোমস্টে হিসেবে। যেখানে একদম কোলাহলমুক্ত একটি দিন বা রাত কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে নিশ্চিন্তে। এই হোমস্টের ব্যবসা এখানকার মানুষের অর্থ উপার্জনের বড় জায়গা। তুরতুকে থাকার পাশাপাশি ট্যুরিস্টদের জন্য আছে কিছু খাবার হোটেলও। যেখানে বেশ সহনীয় মূল্যে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম পছন্দের খাবার, ভ্রমণকারীদের ফরমাশের ভিত্তিতে।

তুরতুকে যাওয়া-আসা ও থাকা–খাওয়া
তুরতুকে যেতে হলে এই গ্রামের প্রকৃতি, নীরবতা, ব্যতিক্রমী জীবনযাত্রা, একেবারে সাধারণ মানুষের গ্রামীণ জীবনের সান্নিধ্য পেতে হলে আপনাকে বেশ রোমাঞ্চপ্রিয় হতে হবে। সেখানে সরাসরি প্লেনে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই পরিবেশগত কারণে। তবুও মোটামুটি কম কষ্টে একটু বেশি খরচে আর একদম কম খরচে কিন্তু দারুণ রোমাঞ্চকরভাবে তুরতুকে যাওয়ার উপায় আপনাদের জানাচ্ছি।

দিল্লি থেকে প্লেনে লেহ্ যাবেন। এ ছাড়া যেতে পারেন বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসে বা ট্রেনে। কলকাতা থেকে ট্রেনে যাবেন দিল্লি। সেখান থেকে শ্রীনগর বা মানালি হয়ে বাসে বা রিজার্ভ জিপে (দলগত ভ্রমণ হলে) করে যাবেন লেহ্ শহরে। দিল্লি থেকে সড়ক পথে লেহ্ যেতে সময় লাগবে অন্তত তিন দিন! দুই জায়গায় রাতে থাকতে হবে আপনাকে, শ্রীনগর বা মানালিতে এক রাত আর লেহ্ যেতে পথে আর এক রাত। রাতে মানালি বা শ্রীনগরে থাকা ও খাওয়ার খরচ নির্ভর করবে আপনার রুচি আর মানসিকতার ওপর। তবে এই রাস্তায় যেতে হলে বেশ কিছু ঝুঁকির ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। যেমন অধিক উচ্চতাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, ঘুমহীনতা, মাথাব্যথা, বমি ভাব, ক্ষুধা কমে যাওয়া, বিষণ্ন লাগা, এমন বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সে জন্য দরকারি ওষুধ সঙ্গে রাখা খুব জরুরি। তবে হ্যাঁ, এই পথে যদি লেহ্ শহর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারেন, সেটা হবে সারা জীবনের এক সেরা অর্জন সবার জন্য। শুধু গেলেই বুঝতে পারবেন। পৃথিবী কত ভয়ানক সুন্দর! এ পথে যাত্রা আপনার জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে।

লেহ্ শহরে পৌঁছে এক দিন অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে আপনাকে লম্বা জার্নির ধকল সামলে নিতে, সকলে তাই নেয়। এরপর নিতে হবে নুব্রা ভ্যালি হয়ে তুরতুক যাওয়ার বিশেষ অনুমোদন। সঙ্গে দিতে হবে মূল পাসপোর্ট। এরপর গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে আপনাকে। নুব্রা ভ্যালি হয়ে তুরতুক ২০৫ কিলোমিটার, সময় লাগবে ৮–৯ ঘণ্টা। ভয়ানক, পাহাড়ি পথ পেরিয়ে যেতে হবে অনেক অনেক দূর, সঙ্গে খরস্রোতা নদী পেরোতে হবে অনেক বার। নুব্রাতে গিয়ে পুলিশ স্টেশনে অনুমোদন দেখিয়ে নতুন অনুমোদনর জন্য দিতে হবে পাসপোর্টের ফটোকপি, জানাতে হবে কোথায় থাকছেন রাতে। এরপর যেতে পারবেন তুরতুক।

তুরতুকে থাকার খরচ খুব বেশি নয়, সাধ্যের মধ্যেই পাবেন সবকিছু।লেহ্ যাওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস। এরপর তুষারপাতের কারণে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় লেহ্। সে কারণে সেপ্টেম্বরের পর লেহ্ যাওয়ার অনুমতি দেয় না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। যাঁরা যেতে চান এই ভয়ংকর সুন্দর প্রকৃতি দেখতে, তাঁরা সামনের কোনও ছুটিকে কাজে লাগাতে পারেন!

আরও পড়ুন: Honeymoon প্ল্যান করছেন? আপনার জন্য রইল ভারতের ৫ রোম্যান্টিক রিসোর্টের খোঁজ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest