তিন তালাক, ৩৭০ ধারা বিলোপ,রামমন্দির থেকে CAA,দেখুন মোদি ২.০-র ‘মেজর’ সিদ্ধান্তগুলি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নয়াদিল্লি: প্রথম নরেন্দ্র মোদি সরকার জোর দিয়েছিল স্বচ্ছ ভারত, জন ধন যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনার মত জনমুখী প্রকল্পের ওপর। তিন তালাক বিল আনা হলেও লোকসভা ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় বিলটি নিয়ে এগোতে পারেনি কেন্দ্র।

মোদি সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই আগে পাশ করায় তিন তালাক বিল। একইভাবে পরপর চলে আসে দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির ম্যানিফেস্টোয় স্থান পাওয়া রাম মন্দির, ৩৭০ ধারা লোপাট ও নাগরিকত্ব সংশোধী আইন।

চলুন, দেখে নেওয়া যাক মোদী বাবুর দেওয়া চমকগুলি!

তিন তালাক: মোদী সরকার নীতিহীন এবং আইন বিরুদ্ধ বিবাহ বিচ্ছেদ হিসাবে কেবল তিন তালাক সংশোধনকেই বেছে নেন। মুসলিম মহিলা ছাড়া অন্য কোনও মহিলাদের বিচ্ছেদ নিয়ে গেরুয়ায় শিবিরের বাকিদের মত তিনিও আকুল হননি। যাইহোক, তালাক এ বিদ্দাত অর্থাৎ তাৎক্ষণিক বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলাম অনুমোদিত ছিল না। যদিও তা নিয়ে কিছু মুসলিম আবেগেঘন ছিলেন। তাঁরা চাননি মুসলিম পার্সোনাল আইনে হস্তক্ষেপ করা হোক।

২০১৬-র ৮ ডিসেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয়, তিন তালাক অসাংবিধানিক, তা মুসলিম মহিলাদের মানবাধিকার খর্ব করছে।২০১৭-র মার্চে ১০ লাখের ওপর ভারতীয় মুসলমান তিন তালাক প্রথা শেষ করার দাবিতে পিটিশন স্বাক্ষর করেন বলে জানা যায়।

সে বছরই ২২ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে, জানিয়ে দেয়, মুখে পরপর তিনবার তালাক উচ্চারণ করলেই বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় না। । ৫ বিচারপতির বেঞ্চের ৩ জনই এই প্রথা বেআইনি বলেন, যদিও বাকি ২ জন বলেন, প্রথা আইনসম্মত তবে তা নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের আইন আনা উচিত।

সে বছরই ২৮ ডিসেম্বর লোকসভায় পাশ হয়ে যায় দ্য মুসলিম উওমেন (প্রটেকশন অফ রাইটস অন ম্যারেজ) বিল, ২০১৭। বিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়, এর ফলে যে কোনও ধরনের তিন তালাক- তা মৌখিকই হোক বা লিখিত অথবা ইমেল, এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপের মত ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পাঠানো- তা বেআইনি হবে, এভাবে ডিভোর্স দেওয়ার চেষ্টা হলে স্বামীর ৩ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

২০১৯-এর জুলাইতে রাজ্যসভায় তিন তালাক বিল পাশ করিয়ে নেয় মোদী সরকার।এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবারের ভোট লড়েছিল বিজেপি, ক্ষমতায় আসার পর জুলাইতেই তারা এই বিলটি রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে  বিলও আনে প্রথম মোদি সরকার ২০১৯-এ লোকসভা ভোট জেতার পর মোদি ২.০ মন্ত্রিসভা সেটি পাশ করিয়ে ফেলে।

৩৭০ ধারা: ১৯৫৪ থেকে ২০১৯-এর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জম্মু কাশ্মীরে বহাল থেকেছে ৩৭০ ধারা। এর ফলে তাদের পৃথক সংবিধান, রাজ্যের নিজস্ব পতাকা ও স্বশাসনের অধিকার ছিল। এই ধারা কার্যকর করতে ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ নির্দেশ কার্যকর হয়।

আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণে নয়া রেকর্ড, দেশে মৃত্যু ও সুস্থতার সংখ্যা ছাড়াল পুরনো হিসাব

৩৫এ ও ৩৭০ ধারার আওতায় জম্মু কাশ্মীরের বাসিন্দারা কিছু বিশেষ আইনের সুবিধে পেতেন, নাগরিকত্ব, সম্পত্তির অধিকার ও দেশের অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দাদের তুলনায় তাঁদের কিছু বিশেষ মৌলিক অধিকার ছিল। এর ফলে অন্যান্য রাজ্যের ভারতীয় নাগরিকরা জম্মু কাশ্মীরে জমি বা সম্পত্তি কিনতে পারতেন না।

২০১৯-এর ৫ অগাস্ট দ্বিতীয় মোদি সরকার ১৯৫৪-র নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে একটি সাংবিধানিক নির্দেশ ইস্যু করে, তাতে বলা হয়, ভারতীয় সংবিধানের সমস্ত ধারা জম্মু কাশ্মীরে এবার থেকে প্রযোজ্য হবে। বিলুপ্ত করে সংবিধানের ৩৭০ ধারা।

২০১৯-এর ৫ অগাস্ট দ্বিতীয় মোদি সরকার ১৯৫৪-র নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে একটি সাংবিধানিক নির্দেশ ইস্যু করে, তাতে বলা হয়, ভারতীয় সংবিধানের সমস্ত ধারা জম্মু কাশ্মীরে এবার থেকে প্রযোজ্য হবে। বিলুপ্ত করে সংবিধানের ৩৭০ ধারা।
এতবড় সিদ্ধান্তের জন্য মোদী সরকার কাশ্মীরিদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি। বিরোধীদেরও আগাম কোনো কথা জানানো হয়নি। সবটাই করা হয় আচমকা

সংসদের দুই কক্ষেই এই প্রস্তাব দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ করিয়ে নেয়। এরপর ৬ অগাস্ট ইস্যু হয় আরও একটি নির্দেশ, তার ফলে ক্লজ ১ ছাড়া ৩৭০ ধারার যাবতীয় ক্লজ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

৩৭০ ধারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে বিজেপি, প্রতিবার তাদের ভোটের ম্যানিফেস্টোয় উঠে এসেছে এই ধারা বিলোপ করার প্রতিশ্রুতি।৩৭০ বিলুপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন রুখতে রাজ্যের বিরোধী রাজনীতিকদের গৃহবন্দি করা হয়, বিচ্ছিন্ন করা হয় ইন্টারনেট যোগাযোগ। সাধারণ মানুষের যাতায়াতেও কড়াকড়ি করা হয়।

এরপর সংসদে জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল আনে কেন্দ্র। রাজ্যটিকে দুভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়, একটি জম্মু কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ। লাদাখ থাকবে সরাসরি কেন্দ্রের অধীনে, তবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় জম্মু কাশ্মীরে ভোট হবে।

রাম জন্মভূমি: ১৯৯২-র ৬ ডিসেম্বর ধ্বংস করা হয় বাবরি মসজিদ, দেশ জুড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। ভারত, আফগানিস্তান ও নেপালের বেশ কিছু স্থান রামচন্দ্রের জন্মভূমি হিসেবে দাবি করা হয়।

২০১০-এর ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাই কোর্টের ৩ বিচারপতির বেঞ্চ রায় দেয়, অযোধ্যার ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। এক ভাগ পাবে হিন্দু মহাসভা যাঁর প্রতিনিধিত্ব করেছিল সেই রামলালা অর্থাৎ শিশু রামচন্দ্র, এক ভাগ নির্মোহী আখড়া ও অন্য ভাগ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তিন বিচারপতির বেঞ্চ মন্দির ধ্বংসের পর বিতর্কিত কাঠামো তৈরি হয় কিনা সে ব্যাপারে এক মত হয়নি তবে তারা সহমত হয়, মসজিদের আগে ওই স্থানে একটি মন্দিরের কাঠামো ছিল।

সব পক্ষই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে।  শেষ শুনানি চলে ৫ বিচারপতির বেঞ্চে, ২০১৯-এর অগাস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। ৯ নভেম্বর শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, হিন্দু মন্দির গড়ার জন্য বিতর্কিত জমি একটি ট্রাস্টের হাতে তুলে দিতে হবে। সরকারকে ৫ একর জমি দিতে হবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে, যাতে তারা একটি মসজিদ গড়ে নিতে পারে। এ বছর ৫ ফেব্রুয়ারি শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টটি তৈরি করে ভারত সরকার।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন: গত বছর ১১ ডিসেম্বর তিনটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য একটি বিল পাশ করে ভারতীয় সংসদ। ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে এই বিল পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যাঁরা ধর্মের কারণে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে। এঁদের মধ্যে ছিলেন হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান শরণার্থীরা। কিন্তু মুসলিমদের এই অধিকার দেওয়া হয়নি। ভারতীয় আইনের আওতায় এই প্রথমবার ধর্ম নাগরিকত্ব পাওয়ার  মাপকাঠি হিসেবে উঠে এল।

বিজেপির নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোয় প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ধর্মীয় কারণে ভারতে আশ্রয় নেওয়া জনগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। নতুন সংশোধনীতে নাগরিকত্ব পেতে এ দেশে থাকার সময়সীমাও ১২ থেকে কমিয়ে ৬ বছর করা হয়।  কিন্তু ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর রেকর্ড বলে, এর ফলে মাত্র হাজারতিরিশের বেশি শরণার্থী উপকৃত হবেন।

নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন হয়। পোড়ানো হয় একাধিক ট্রেন, বাস, রেল স্টেশন। সমালোচকরা বলেন, এটা বিজেপির অ্যাজেন্ডা, এর ফলে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়, স্থানীয় মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সীমান্তের ওপার থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন বিজেপি বলে, এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে এ দেশে আসা অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীর ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করবে।

খেয়াল করলেই বুঝতে অসুবিধা হবে না যে মোদী সরকারের এই সাফল্যের সবকটির পিছনে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষে মুসলিম বিষয়টি রয়েছে। জনগনের আর্থিক কল্যাণ , কিংবা কর্মসংস্থানের মতো সার্বিক কোনো বাস্তবমুখী কাজ সেখানে নেই। ভক্তের চোখে না দেখলে সেটি বুজতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

আরও পড়ুন: মোদীর জয়ের ভবিষ্যতবাণী! করোনা উপসর্গে মৃত্যু ‘তারকা’ জ্যোতিষী বেজান দারুওয়ালার

Gmail 3

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest