Site icon The News Nest

অযোধ্যার মসজিদে নামাজ ‘হারাম’! ব্যাক্তিগত দাবি ওয়েইসির, আপত্তি অনেকের

asaduddin owaisi

অযোধ্যা মসজিদের (Ayodhya Masjid) নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে সাধারণতন্ত্র দিবসে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে কাজ শুরু করেছে ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। মসজিদের যে মডেল প্রকাশ্যে আনা হয়েছে তা অনেকেরই মন জয় করেছে। বিশেষ করে মসজিদ সংলগ্ন অডিটোরিয়ামটি দেখে মুগ্ধ নেটিজেনরা। মসজিদটির গঠনশৈলীও ট্রাডিশনাল নয়।

অযোধ্যার মসজিদ নিয়ে মঙ্গলবার এক জনসভায় বিস্ফোরক মন্তব্য করেন AIMIM সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়েইসি (Asaduddin Owaisi)। অযোধ্যার নির্মীয়মাণ মসজিদে প্রার্থনা করলে তা ‘হারাম’ হবে বলে কটাক্ষ করেন তিনি। এবার তাঁকে পালটা দিল ট্রাস্ট। জানিয়ে দিল, যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লার উদ্দেশে প্রার্থনা করা হয়, তা কখনও ‘হারাম’ হতে পারে না।

আরও পড়ুন: করোনাকালেও ধারাবাহিক পরিষেবা, মমতা সরকারের প্রশংসায় UNICEF ও বিশ্বব্যাঙ্ক

মঙ্গলবার ওয়াইসি বলেন, অযোধ্যায় যে মসজিদ হবে সেখানে প্রার্থনা করা কিংবা তার জন্য চাঁদা দেওয়া হারাম। তাঁর কথায়, ”ওই মসজিদে কোনও মুসলিমের প্রার্থনা করা উচিত নয়। মসজিদটির জন্য চাঁদা দেওয়ার থেকে কোনও গরিব মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করা উচিত।” তাঁর আরও দাবি, একথা তিনি নিজে থেকে বলছেন না। ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’-এর উলেমা থেকে শুরু করে বহু ধর্মীয় উচ্চশিক্ষিতর সঙ্গে এই নিয়ে কথা হয়েছে তাঁর। এবং সকলেই এই দাবি করেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই ওয়েইসির এই ধরনের কথায় প্রবল অসন্তুষ্ট ট্রাস্ট। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাস্টের সম্পাদক আফতার হোসেন ওয়েইসির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ওয়েইসি এমন এক অঞ্চলে বড় হয়েছেন, যেখানে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের তেমন প্রভাব পড়েনি। তিনি এও দাবি করেন, ওয়েইসির পূর্বপুরুষরা হয়তো ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহেও অংশ নেননি।

অযোধ্যা যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক পুণ্যভূমি সেকথা উল্লেখ করে আহমাদুল্লা শাহের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। মনে করিয়ে দেন, ফৈজাবাদকে ইংরেজদের হাত থেকে অন্তত এক বছরের জন্য স্বাধীন করেছিলেন আহমাদুল্লা। তাঁর প্রশ্ন, ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনকে উৎসর্গ করা হয়েছে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে। এটাও কি ওয়েইসির কাছে ‘হারাম’?

ওয়েইসির মন্তব্য এবং ট্রাস্ট্রের প্রতিক্রিয়া দুটোই নিজের জায়গায় ঠিক বলে মনে করছেন অনেকে। নাকের বদলে আর একটা নাক হতে পারে। কিন্তু নরুন হতে পারে না। সেদিনের বাবরি রায় শুনে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষজনও হতাশ হয়েছিলেন। যে ধারাবাহিক ছকে মসজিদটির ওপর কব্জা জমানো হয়েছিল, তা আদালতও মেনে নিয়েছিল। কিভাবে রামলালার মূর্তি মসজিদে ঢোকানো হয়েছিল,তার উল্লেখ করা হয়েছিল। মসজিদটি ভাঙা ঠিক হয়নি বলেও আদালত উল্লেখ করেছিল। তারপরও রায় গিয়েছিল মন্দিরের পক্ষে।

অনেকের অভিযোগ, সেদিন দেশের শীর্ষ আদালত রায় দিয়ে গিয়ে বুঝেছিল, সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুন্ন রইলো না। তাই তারা বিবেকের তাড়নায় মসজিদের জন্য জমি বরাদ্দ করেছিল। দেশে বহু মসজিদ আছে। মুসলিমরা নিজেদের উদ্যোগেই মসজিদ বানান। সেটাই ইসলামী দস্তুর।

বিতর্কিত জমিতে নতুন করে মসজিদ হয় না। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট মসজিদের জন্য জায়গা বরাদ্দ করেছে। সেটা তারা এমনি করেনি। এটি করা হয়েছে বাবরির বিনিময়ে। সেখানেই আপত্তি ওয়েইসি সহ বহু মুসলিমের। তাদের বক্তব্য, সেখানে হাসপাতাল হতে পারত, লাইব্রেরিও ঠিক আছে। অন্য সমাজ সেবামূলক সেকোনও প্রতিষ্ঠান বানানো যেতে পারে। কিন্তু মসজিদ বানানো ঠিক হয়নি । কাল ফের একটা ঐতিহাসিক মসজিদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হতে পারে। আবারও তার বদলে অন্য জায়গায় জমি দেওয়া হতে পারে। এইভাবে মুসলিমদের ঐতিহাসিক চিহ্ন মুছে ফেলা হতে পারে। তার বদলে দেওয়া হতে পারে জমি। তাতে গড়ে উঠবে আধুনিক নকশা। যার সঙ্গে মুসলিমদের ইতিহাসের কোনও সম্পর্ক নেই।

তবে যারা অযোধ্যার আধুনিক নকশার এই মসজিদটি বানাচ্ছেন, তাদের বক্তব্য এখানে বেআইনি কিছু হচ্ছে না।  সবটাই হচ্ছে আইন মেনে। গোটা ব্যাপারটাকে কেবল ধর্মাচরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে না। চেতনাকে আরও বিকশিত করার জন্য পড়াশোনার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আপাতত স্থগিত ৭২ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট, ৩ দিনের বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার

Exit mobile version