কাশ্মীর এক সময় কাগজ শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। একটি গোটা মহল্লার নামই ছিল কাগজগরি। পাণ্ডুলিপির জন্য তৈরি টেকসই কাগজ এখানে বানান হত। সে কাগজ ছিল অতি মসৃণ এবং পাতলা। অথচ তা চলত বহু দিন। এই কাগজে পাণ্ডুলিপি লেখা হলে তা নষ্ট হত না। মধ্য এশিয়ার ইতিহাস লেখা রয়েছে এই কাগজে।
ঐতিহাসিকদের মতে কাশ্মীরের তৈরী কাগজ খুবই টেকসই ছিল। সে কারণেই বহু কালজয়ী পাণ্ডুলিপি এই কাগজেই লেখা হত। বলা হয় উমর খৈয়ামের রুবায়েত নাকি এই কাগজেই লেখা। যা আজও নষ্ট হয়নি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে কাশ্মীরের পরিচয়।
আরও পড়ুন : আসে বসন্ত ফুল বনে, আসে বসন্ত মনে… জীবনে…
মধ্য এশিয়ায় পেপার মিল আসার পর কাশ্মীরের এই হাতে তৈরী কাগজ শিল্প একটু একটু করে ধ্বংস হতে শুরু করে।এই পাণ্ডুলিপিগুলির অধিকাংশই ফারসি কিংবা আরবিতে লেখা। জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন মিউজিয়ামে এগুলি সংরক্ষিত রয়েছে।
বহু ইতিহাসবিদ মনে করেন, কাশ্মীরে কাগজের এই ব্যবসা শুরু হয়েছিল মুগল শাসনকালে। বাদশাহ জয়নুল আবেদিনের সময়। ইতিহাসবিদরা বলেন, বাদশা কাগজ তৈরী ও বই বাঁধায়ের কাজের ধারা নিয়ে এসেছিলেন সমরখন্দ থেকে।সেখান থেকেই নিয়ে এসেছিলেন লোকজন।উপত্যকায় বিশাল এলাকাজুড়ে তাদের জমি জিরেতের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই ব্যাবসায়ীরা কাশ্মীরে পাকাপাকিভাবে বসত করার পর স্থানীয় এলাকার নাম হয় কাগজগরি মহল্লা।
আফগানদের সময়েও এই হাতে তৈরী কাগজের এই শিল্প বেঁচে ছিল। এমনকি ডোগরা যুগেও তা টিকে ছিল। কিন্তু বিংশ শতকের শুরু থেকে এর পতন শুরু হয়।আফগানদের সময়েও এই হাতে তৈরী কাগজের শিল্প বেঁচে ছিল। বিংশ শতকের শুরু থেকে এর পতন শুরু হয়।
হাতে তৈরী কাগজের মণ্ড তৈরী হত মূলত শণ এবং কম্বলজাতীয় জিনিস দিয়ে। খুব ভালো করে উপাদানগুলোকে মেশানো হত। তাতে চুন দেওয়া হত। আর দেওয়া হত সোডা। যাতে কাগজের রং সাদা হয়।
১৯১৭ তে সেলুলস এক্সপার্ট উইলিয়াম রেইট এই কাজের জন্য ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট খোলেন। কাশ্মীর দরবারের অনুরোধে দেরাদুনে আসেন উইলিয়াম। কিভাবে এই কাগজ শিল্পকে আরও উন্নত করা যায় তার জন্য তাঁর কাছ থেকে উপদেশ নেওয়া হয়।
কিভাবে কাশ্মীরে এই কাগজ তৈরী হত তা ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন উইলিয়াম রেইট। ডুকুমেন্টেশনের জন্য তিনি ২৬ টি ছবি তোলেন। ১৯৩৯- এ ‘কাশ্মীরি পেপার মেকিং ফটোজ’ নামে এই ছবিগুলি প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন : এবার ‘সুপার মারিও’র ভূমিকায় মমতা, অভিনব প্রচারে বাজিমাত তৃণমূলের