চাপে পড়লে অনেকে বাপের নাম উচ্চারণ করেন। মোদী চাপে পড়লে কংগ্রেসের নাম নেন। আর কাজ হচ্ছে না কোনও জুমলায়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছিল, আছে এবং থাকবে, সোমবার সংসদে দাঁড়িয়ে ফের জোর গলায় দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, আলোচনার মাধ্যমেই যে সমাধান সম্ভব, সে বার্তাও দিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর পূর্বসূরি যে বিষয়ে কথা বলেছিলেন, মোদী সরকার সেটা বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছে।
মজার কথা হল, তিনি আলোচনার কথা মাঝে মধ্যেই বলে। কিন্তু কিভাবে, কোথায়, কখন, সেসব কিছু জানান না। মোদীর টিম, কৃষকদের দেশবিরোধী প্রমাণ করতে মরিয়া। তাদের কাছ দেশ মানে জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে মোদীর বক্তিমে। আরএসএস মোদী এবং দেশকে সমার্থক করে দেখতে চাইছে। মোদীর অভিব্যক্তিকে কাজ লাগিয়ে তারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। কিন্তু কিছু বিষয়ে তারা মোদী ও তাঁর কর্পোরেট বন্ধুদের সঙ্গে সহমত নয়।
আরও পড়ুন: আমিই ফিরবো, শেষ দিনে বিধানসভা ছাড়ার আগে আত্মপ্রত্যয়ী মমতা
ডক্টর মনমোহন সিংয়ের পুরনো এক বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে মোদী সংসদে বলেন, “মনমোহনজি বলেছিলেন, ১৯৩০ সালের বিপণন ব্যবস্থার রীতিনীতি অনুযায়ী কৃষকরা ফসল সর্বাধিক মূল্যে বাজারে বিক্রি করতে পারতেন না। এই ধরনের বাধাগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এবং একটা বৃহৎ সাধারণ বাজার তৈরি করতে হবে, যেখানে কৃষকরা সর্বাধিক মূল্যে তাঁদের ফসল বিক্রি করতে পারবেন’।”
মোদী বলেন, “মনমোহনজি সেই বৃহৎ সাধারণ বাজারে ফসল বিক্রি করার স্বাধীনতা তো দিয়েছিলেন। আজ আমরা সেটা বাস্তবায়িত করেছি।” কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, “আপনাদের গর্ববোধ করা উচিত, মনমোহন সিংহ এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু মোদী আজ সেটা বাস্তবায়িত করছে। এর জন্যও গর্বিত হওয়া উচিত।”
সোমবার আন্দোলনকারীদের বার্তা দিয়ে মোদীর উক্তি, “আপনারা আন্দোলন তুলে নিন। আসুন, একসঙ্গে বসে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করি।” সরকার যে আলোচনার জন্য সর্বদা প্রস্তুত, সে কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।মোদী কৃষকদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁরা যেন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে কোনও রকম ভ্রান্তির স্বীকার না হন।
সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের বিরুদ্ধে নয় বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। এর পরই বিরোধীদের বিরুদ্ধে কৃষি আইন নিয়ে সুর চড়াতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর কথায়, “আগেও অনেকে এই সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এখন উল্টো সুর গাইছেন।” এই প্রসঙ্গে আসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের প্রসঙ্গ।
খেয়াল করলে দেখবেন, আগে দল ও সরকার বলে দুটো শব্দ ছিল। মোদী সেটা শেষ করে মোদী ও দেশ বলে দুটি শব্দতে রূপান্তরিত করেছেন। মোদীর বিরোধিতা মানেই দেশ বিরোধিতা। মোদীর সমর্থন মানেই ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’।
এমনিতে মোদী বাবুরা বলেন, কংগ্রেস নাকি দেশটার ১২ টা বাজিয়েছে। কিন্তু চাপে পড়লেই সেই কংগ্রেসের আড়ালেই আত্মসমর্পন করতে হয় মোদী বাহিনীকে। আসলে দেশ চালানোর জন্য কিছু আর্থিক নীতি লাগে। কিন্তু বিজেপিতে রামের নামে ও মোদীর নামে স্লোগান দেওয়া মন্ত্রীদের এই নীতি প্রণয়নের যোগ্যতা নেই। ফলে কংগ্রেসের ফেলে আসা জুতোতে পা গলানোর চেষ্টা করা ছাড়া মোদী বাবুর উপায় নেই। এই দেশ চালাতে গেলে যে কোনও দলকে কংগ্রেসের নীতিতে চলতেই হবে। রাজনৈতিক স্লোগান তাদের যাইহোক না কেন ।
আরও পড়ুন: মেলেনি প্রশাসনের অনুমতি, বেলডাঙায় থমকে নাড্ডার উদ্বোধন করা রথের চাকা