বুক চাপড়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেছিলেন, কিষান সম্মান নিধিতে (পিএম-কিষান) কোনও ফাঁকফোকর নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গর্বের ফানুস থেকে হাওয়া বের হতে সপ্তাহতিনেকও লাগল না। কেন্দ্র সরকারই স্বীকার করল, প্রকল্পের প্রায় ১,৩৬৪ কোটি টাকা ভুল হাতে চলে গিয়েছে। দেশজুড়ে প্রায় ২০.৪৮ লাখ অযোগ্য ব্যক্তির অ্যাকাউন্টেও টাকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র।
বেঙ্কটেশ নায়েক নামে এক ব্যক্তির তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) প্রশ্নের জবাবে কৃষি মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, যে অযোগ্য ব্যক্তিরা টাকা পেয়েছেন, তাঁদের ৫৫.৫৮ শতাংশই আয়কর দেন। বাকি ব্যক্তিরা (৪৪.৪১ শতাংশ) প্রকল্পের অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে পারেননি।
অযোগ্য ব্যক্তিদের নিরিখে প্রথম স্থানে আছে কংগ্রেস-শাসিত পঞ্জাব। সেখানে প্রায় ৪.৭৪ লাখ (২৩.১৬ শতাংশ) অযোগ্য মানুষ টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে বিজেপি-শাসিত অসম। সেখানকার ৩.৪৫ লাখ অযোগ্য মানুষের হাতে কিষান সম্মান নিধির টাকা গিয়েছে। তারপর আছে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র (২.৮৬ লাখ বা ১৩.৯৯ শতাংশ), গুজরাত (১.৬৪ লাখ বা ৮.০৫ শতাংশ) এবং উত্তরপ্রদেশ (১.৬৪ বা ৮.০১ শতাংশ)।
আরও পড়ুন: ‘বিজেপিতে আসছেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়’, বললেন সৌমিত্র খাঁ, জবাব প্রাক্তন ফুটবলারের
পশ্চিমবঙ্গে যত ভোট এগিয়ে আসছে, প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি নিয়ে প্রচার বাড়াচ্ছে বিজেপি। মোদী সরকারের দাবি, প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি (পিএম-কিষান) দেশের ছোটো চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মাঝপথে কেউ টাকা হাতিয়ে নিতে পারছে না। তার ফলে লাভবান হচ্ছেন ছোটো কৃষকরা। কিন্তু সেই দাবি অনেকটাই ধাক্কা খেল। তবে বিজেপি প্রেমীরা অনেকে বলতে পারেন, তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ মোদীর বাণীতে মানুষ ‘আস্থার’ সঙ্গে গ্রহণ করেন। আস্থায় তর্ক চলে না। নোট বন্দির কথা কি সকলে ভুলে গেলেন? সকলে তাঁর বাণী আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করেছিল !
কেন্দ্রের শর্ত মোতাবেক, যে ব্যক্তিরা কৃষিকাজের জন্য জমি ব্যবহার করেন না, তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না। কোনও ভাগচাষি যদি অন্যের জমিতে চাষবাস করেন, তাহলে তিনি প্রকল্পের আওতায় আসবেন না। যদি কৃষক পরিবারের কেউ আয়কর জমা দেন, মাসে ১০,০০০ টাকার বেশি পেনশন পান, সাংবিধানিক পদে থাকেন, সরকারি কর্মী বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী হন, জনপ্রতিনিধি হন, তাহলে কৃষক নিধির তিন কিস্তির টাকা মিলবে না। পরিবারের কেউ চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, উকিল হলেও সেই প্রকল্পের সুবিধা মিলবে না বলে জানানো হয়েছে।
বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রকল্পের এত টাকা যে কেন্দ্রের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, তার দায় কার? প্রথম পাঁচ রাজ্যের মধ্যে তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় আছে বিজেপি। তাহলে কোথায় গাফিলতি হচ্ছে? ওই তথ্যের অধিকারের আইনের কর্মী অবশ্য জানিয়েছেন, যে অযোগ্য ব্যক্তিদের টাকা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের টাকা ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কি বলছে হাওয়া! বাংলার তখতে কী দিদিই, না কি শাহ-মোদীর প্রতিনিধি?