Site icon The News Nest

‘অসহিষ্ণুতা’ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকার বার্তা, পাল্টা খোলা চিঠি ৬১ বিদ্বজ্জনের

outrage

#নয়াদিল্লি: ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিলেন বিদ্বজনেরা৷ এবার আগের ৪৯ জন নন৷ নতুন করে ৬১ জন বিশিষ্ট নাগরিক এই চিঠি দিয়েছেন৷

দেশের ভিতরে ক্রমাগত ঘটে চলা গণপ্রহারে মৃত্যু, আক্রমণের স্লোগান হিসেবে ‘জয় শ্রীরাম’–এর ব্যবহার সহ একাধিক ‘দুঃখজনক ঘটনা’তে উদ্বিগ্ন দেশের ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বুধবার খোলা চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে। এ বার সেই চিঠির পাল্টা হিসেবে দেশের ৬১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি চিঠি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রীকে। এই চিঠিতে সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রসূন জোশী, অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত, পরিচালক মধুর ভান্ডারকর  পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী, নৃত্যশিল্পী ও রাজ্যসভার সাংসদ সোনাল মানসিং, কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র, পার্নো মিত্র, কল্যাণ চৌবে, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় সহ-৬১ জনের বক্তব্য, যে ৪৯ জন আগে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাঁরা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে মিথ্যে ধারণা তৈরি করতে চাইছেন জনমানসে। তাঁদের দাবি, মোদী সরকারের সময়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অনেক বেশি সুস্থির।

তাঁরা প্রশ্ন তুললেন, ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দেওয়ার ‘অপরাধে’ যখন কাউকে জেলে পোরা হচ্ছে, কাউকে খুন করা হচ্ছে, তখন কেন মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন ওই বিদ্বজ্জনরা? কেন তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটে অভূতপূর্ব হিংসার ঘটনার পরেও মুখ খোলেননি? কেন তাঁরা কিছু বলেননি পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে হিংসার প্রেক্ষিতে? অপর্ণা, বেনেগাল-সহ ৪৯ জন বুদ্ধিজীবী গত ২৩ জুলাই খোলা চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁদের ‘স্বঘোষিত অভিভাবক’ বলেছেন এ দিনের চিঠিতে সই করা ৬১ জন বিদ্বজ্জন। শুক্রবার যে খোলা চিঠি লিখেছেন ৬১ জন বিদ্বজ্জন, তাতে ১২টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, যার বিরুদ্ধে অপর্ণা সেন-সহ বিদ্বজ্জনদের অংশটি মুখ খোলেননি বলে অভিযোগ। সেই ১২টি ঘটনার মধ্যে ৭টি ঘটনাই পশ্চিমবঙ্গের।

তাঁরা আরও জানিয়েছেন, “আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো এই চিঠি একটি মিথ্যেকে প্রচার করার প্রচেষ্টা বলেই মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনদরদী কাজকে নেতিবাচকভাবে দেখানোর উদ্দেশ্যেই এই চিঠি দেওয়া। যাঁরা এই খোলা চিঠিতে সই করেছেন, তাঁরা কেন সেই সময় চুপ ছিলেন, যখন নকশালদের হাতে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের প্রাণ গিয়েছে। তখন কেন চুপ ছিলেন, যখন কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্কুলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তখন কেন চুপ ছিলেন, যখন দেশের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা হয়েছে।”

এ দিনের চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য যখন পুরুলিয়ায় জগন্নাথ টুডুকে খুন করা হয়েছিল, তখন কোথায় ছিলেন ওই বিদ্বজ্জনরা? যখন উর্দু ভাষায় পড়াশোনা করবেন না আর বাংলা, ভূগোল ও কম্পিউটার শিক্ষার জন্য শিক্ষকের দাবি করায় ইসলামপুরে দাড়িভিট হাইস্কুলের ছাত্রদের গুলি করা হয়েছিল, তখন কেন অপর্ণা-সহ বিদ্বজ্জনদের ওই অংশটি প্রতিবাদ করেননি, এ দিনের চিঠিতে সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। কেন গত লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালির হিন্দুদের ভোটদানে বাধা দেওয়া হলে বিদ্বজ্জনদের ওই অংশটি মুখ খোলেননি, তোলা হয়েছে সেই প্রশ্নও।

মোদী জমানাতেই যে দেশে বিরোধী মতামতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, মূল্য দেওয়া হয় সহিষ্ণুতার আদর্শকে, শুক্রবারের খোলা চিঠিতে তারও উল্লেখ করেছেন ৬১ জন বিদ্বজ্জন।

২০১৪-য় মোদী-জমানা শুরুর পর থেকে দলিত-সংখ্যালঘুদের উপরে ঘৃণাপ্রসূত হিংসার ঘটনা বেড়েছে বলে অভিযোগ ছিল আদুর গোপালকৃষ্ণন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শ্যাম বেনেগাল, রামচন্দ্র গুহ, বিনায়ক সেন, মণিরত্নম, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, শুভা মুদ্গল, অনুরাগ কাশ্যপ, কৌশিক সেন, কঙ্কনা সেনশর্মা, রূপম ইসলাম প্রমুখ বিভিন্ন ক্ষেত্রের যশস্বীদের। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠাবশত লেখা চিঠিতে, গণপিটুনির প্রতিবিধানে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়েও বিঁধেছিলেন তাঁরা।

বুধবার চিঠিতে নিজেদের ”শান্তিপ্রিয় ও গর্বিত ভারতবাসী” হিসেবে পরিচিতি দিয়ে ৪৯ জন লিখেছিলেন, ”প্রিয় প্রধানমন্ত্রী… মুসলিম, দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনাবলী এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এনসিআরবি (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো)–র রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি ২০১৬ সালে ৮৪০ জন দলিতের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে। এবং একই সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে শাস্তির অনুপাত। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ধর্মকে কেন্দ্র করে ঘৃণাবশত আক্রমণের ২৫৪টি ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ৫৭৯।”

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিটি একটি প্ররোচনামূলক ‘ওয়ার ক্রাই’ বা রণহুঙ্কারে পরিণত হওয়াই যে বর্তমানে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার অন্যতম কারণ সেই বিষয়টির উল্লেখ করে উদ্বিগ্ন স্বাক্ষরকারীরা জানান, ধর্মের নামে এমন অনৈতিক আচরণ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়। ”দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের কাছে রাম একটি পবিত্র নাম। দেশের সর্বোচ্চ আধিকারিক হিসেবে আপনার উচিৎ রাম নামের এই বিকৃতি বন্ধ করা।”

 

Exit mobile version