বারাণসীর বুকে একরকম বিনা প্রতিবাদেই ভাঙা পড়লো ‘সানাই সম্রাট’ ওস্তাদ বিসমিল্লা খানের বসত ভিটা । শিল্পীর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক দু’দিন আগে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হল তাঁর ঘর ।
বারাণসীর (Varanasi) হাদহা সরাইয়ের ওই বাড়িটির দোতলার একটি ঘরে প্রতিদিন রেওয়াজ করতেন বিসমিল্লা খান। কখনোই সেটি ছেড়ে যেতে চাননি। আমেরিকায় বসবাসের প্রস্তাব এলেও সেটা প্রত্যাখ্যান করতেও দু’ বার ভাবতে হয়নি তাঁকে।২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর শিষ্য এবং ভক্তরা দাবি করেছিলেন, এই বাড়িটিকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দিয়ে এখানে সংগ্রহশালা তৈরি হোক। প্রদর্শিত হোক বিসমিল্লাহর বিভিন্ন স্মারক। কিন্তু কেউই এ বিষয়ে এগিয়ে আসেননি।
তাঁর পালিতা কন্যা ও সংগীতশিল্পী সোমা ঘোষ এই ঘটনার পর বিরক্তি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘‘বাবার ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এটা শোনার পরই আমি ভেঙে পড়েছি। খুব অবাক হয়েছি। ভেঙে ফেলার পর তাঁর মহামূল্যবান জিনিসপত্রগুলোও ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘরটি শুধুমাত্র একটি ঘর নয়, সংগীত অনুরাগীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান ছিল। এটির একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। তাঁর সব জিনিসপত্র সংরক্ষিত করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদন করব।’’
আরও পড়ুন: কলেজের কাছ থেকে উদ্ধার মেডিক্যাল ছাত্রীর রক্তাক্ত দেহ, ধৃত ডাক্তার
মাত্র ৬ বছর বয়সে বিহার থেকে বারাণসী চলে আসেন বিসমিল্লা । ১৯৩৬ সালে বেনিয়াবাগের কাছে বাড়িটি কিনে আমৃত্যু সেখানেই সাধনা করে গিয়েছেন এই ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী । দোতলা বাড়ির উপরের একটি ঘরে, তিনি থাকতেন। রোজ স্নান করে ওই ঘরে রেওয়াজ করতেন তিনি।বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে বর্তমানে উস্তাদের উত্তরসূরীরা তীব্র পারিবারিক কলহে জড়িয়ে পড়েছেন । তাঁর পাঁচ পুত্র মেহেতাব হুসেন , নাজিম হুসেন , কাজিম হুসেন , নাইয়ার হুসেন , জামিন হুসেন এবং দুই কন্যা জরিনা বেগম ও আজরা বেগম । মেহেতাব ও নাইয়ার মারা গিয়েছেন বেশ কিছু বছর হলো । বর্তমানে শিল্পীর পরিবারে সমস্ত মিলিয়ে মোট ষাট জন বংশধর জীবিত আছেন । নাজিম , কাজিম এবং দুই কন্যা এবং পৌত্র আফাক হায়দার এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ।
বিসমিল্লার আরেক নাতি সিবতাইন হোসেন বর্তমানে বাড়ি ভেঙে শপিং কমপ্লেক্স করতে চান বলেই জানিয়েছেন হায়দার । অপর দিকে নাজিম ও কাজিম বাড়ি মেরামত করে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার দাবিতে অনড় । অপরদিকে সিবতাইনের স্ত্রী নাজমি ফিরোজা জানান,’ বর্তমানে বাড়ির যা পরিস্থিতি , যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে । উস্তাদজির সারাজীবনের যাবতীয় সম্মানকে রক্ষা করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিলো । তাই তাঁরা বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘। এক তলায় যাবতীয় দোকান পাট তৈরী হলেও নতুন চার তলা বিল্ডিঙের দোতলায় একটি ঘরে মিউজিয়াম নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ফিরোজা । তবে এই কথায় আশ্বাস রাখতে পারছেন না অনেকেই । বছর তিনেক আগে তাঁর এক নাতি মাত্র ১৭০০০ টাকার বিনিময়ে তাঁর চারটি সানাই বিক্রি করে দিয়েছিলেন স্থানীয় গয়নার দোকানে । উত্তর প্রদেশ এসটিএফ -এর তৎপরতায় তার তিনটি অবিকৃত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছিল ।সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব টুইটারে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে প্রশাসনের পদক্ষেপ দাবি করেছেন । সঙ্গীতশিল্পী পদ্মশ্রী শ্রী রাজেশ্বর আচার্যও বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন । সঙ্গীতশিল্পী অনূপ জালোটা টুইট করেন সেতার দর্শন যদি পণ্ডিত রবি শঙ্করকে স্মরণ করায় তবে সানাইয়ের ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হলেন উস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ ।
শেষ পাওয়া খবর অনুসারে বারাণসী ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ( VDA ) পর্যবেক্ষক দল বুধবার বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন এবং সিবতাইন হুসনের নামে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে পুনরায় কোনো নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে না স্পষ্টতই বলা হয়েছে সেই নির্দেশিকায় । সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল পাণ্ডে জানান আমাদের কর্মীরা গিয়ে কাজ বন্ধ করে এবং এই সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হয়েছে বারাণসী নগর নিগমকে।
আরও পড়ুন: করোনায় রেকর্ড ! দেশে একদিনে সংক্রমণ প্রায় ৭০ হাজার, মৃত আরও ৯৭৭