প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির লালকেল্লার হিংসার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত দীপ সিধুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। দিল্লি পুলিশের বিশেষ বিভাগের অফিসাররা মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতার করেছেন তাঁকে। পঞ্জাবের এই অভিনেতা এবং সমাজকর্মী সমর্থন করেছিলেন কৃষক আন্দোলনকে। যদিও তাঁকে ‘বিজেপির চর’ আখ্যা দেন বিক্ষুব্ধ কৃষকদের একাংশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে যে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল নিখোঁজ দীপ সিধুকে গ্রেফতার করেছে। তার সম্পর্কে খোঁজ দিতে পারলে এক লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে ইনাম ঘোষণা করেছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ল সে। পঞ্জাবে চণ্ডীগড় ও আম্বালার মধ্যে জিরাকপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর মিছিলের দিন বিক্ষোভকারীদের একটি দল পৌঁছে যায় লালকেল্লায়। সেখানে ভাঙচুরের পাশাপাশি পতাকাও ওড়ানো হয়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিল দীপ। তার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদী কৃষকদের খেপিয়ে তোলার অভিযোগ উঠেছিল। এই ঘটনার পর থেকেই ‘ফেরার’ ছিলেন দীপ। তবে সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিয়ো আপলোড করে আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি দায় এড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন।কিন্তু কে এই দীপ সিধু?
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্জাবের মুখ্তসর জেলায় ১৯৮৪ সালে জন্ম সিধুর। আইন নিয়ে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য তা-ই পেশা করেছিলেন সিধু। এর পর ম়ডেলিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। ‘কিংফিশার মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতা জিতে অভিনয় জগতে পা রাখেন ২০১৫ সালে। সে বছর ‘রামতা যোগী’ নামে একটি পঞ্জাবি ফিল্মে আত্মপ্রকাশ করেন সিধু। তবে ফিল্মি পর্দায় সাফল্য আসে তার বছর তিনেক পর। ২০১৮-তে মুক্তি পায় ‘জোড়া ‘দশ নম্বরিয়া’। ওই পঞ্জাবি ফিল্মে গ্যাংস্টারের চেহারায় সিধুকে দেখা গিয়েছিল মুখ্য ভূমিকায়। এর পর খান তিনেক ফিল্মেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে ২০১৯ সাল থেকে সিধুকে রাজনীতির আঙিনায়ও দেখা যেতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: দেবদেবীদের অবমাননার প্রমাণ মেলেনি, সুপ্রিম কোর্টে জামিন Munawar Faruqui-র
লালকেল্লার ওই ঘটনার পর থেকে থেকে সমাজ মাধ্যমে সিধুর একের পর এক ছবি এবং পোস্ট ঘুরতে থাকে। তারই একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেতা সানি দেওলের প্রচারসঙ্গী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিধু। গুরুদাসপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সানি। অন্য একটি টুইটে সানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশেও সিধু রয়েছেন। ইউটিউবার ধ্রুব রাঠী সেই ছবিটি পোস্ট করেছেন। একটি ছবিতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রয়েছেন সিধুর পাশে। এই দু’টি ছবিই টুইট করেছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও।
বিজেপি-র হেভিওয়েটদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসার মাঝেই গত বছর কৃষক আন্দোলনেও শামিল হন সিধু। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় শম্ভু এলাকায় তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বহু সমাজকর্মী-আন্দোলনকারী তথা শিল্পী। ওই বিক্ষোভে কৃষকদের সঙ্গে ধর্নায় বসেন সিধুও।
লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করার পর নিজের পক্ষে সাফাই দেন সিধু। ফেসবুকে একটি লাইভ ভিডিয়োবার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রয়োগ করে লালকেল্লার কেবলমাত্র নিশান সাহিবের পতাকা (শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পতাকা) উত্তোলন করেছি আমরা। সেখান থেকে জাতীয় পতাকা সরানো হয়নি’। তবে তখনই সিধুর ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবি তোলেন আন্দোলনকারী তথা স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রধান যোগেন্দ্র যাদব। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দীপ সিধু মাইক হাতে কী ভাবে লালকেল্লায় পৌঁছলেন, তা তদন্ত করে দেখা উচিত।’’
কৃষকদের র্যালিতে ঘিরে হিংসায় ইন্ধনেরও অভিযোগ উঠেছে সিধুর বিরুদ্ধে। তাঁর ভূমিকায় বিজেপি তথা আরএসএসের হাত রয়েছে বলেও দাবি করেছেন কৃষক ইউনিয়নের নেতারা। ৪১টি কৃষক ইউনিয়ন যে ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন সেই সংযুক্ত কিসান মোর্চার দাবি, গোটা ঘটনায় ‘দুষ্কৃতীদের’ হাত রয়েছে। অন্য দিকে, ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (বিকেইউ)-এর প্রধান গুরনাম সিংহ অভিযোগ করেন, ‘‘দীপ সিধুই আন্দোলনকারীদের উস্কানি দিয়েছিলেন। তিনিই তাঁদের বিপথে চালিত করেন।’’
Deep Sidhu, an accused in 26th January violence case arrested: Delhi Police Special Cell
— ANI (@ANI) February 9, 2021
সেই থেকেই গা-ঢাকা দেন দীপ। অবশেষে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হল তাঁকে।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে BJP-র চাপ? কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে সচিন-লতাদেরদের টুইটের তদন্ত করবে মহারাষ্ট্র পুলিশ