সমলিঙ্গে বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করল কেন্দ্র। বরং নিজের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দাবি করলেন, সমলিঙ্গে বিবাহ শুধুমাত্র বিধিবদ্ধ নিয়মের পরিপন্থী নয়, তা সেই ধরনের বিবাহকে স্বীকৃতি দেয় না সমাজ ও মূল্যবোধ।
এ দিন দিল্লি হাইকোর্টে মুখ্য বিচারপতি ডি এন পটেল এবং বিচারপতি প্রতীক জালানের ডিভিশন বেঞ্চে এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ওই মন্তব্য করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর মতে, “আমাদের আইন, মূল্যবোধ বা সমাজ সমলিঙ্গের বিবাহকে মান্যতা দেয় না। এটি সমলিঙ্গে যুগলের মধ্যে প্রতিশ্রুতিমাত্র।” ১৯৫৬ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের আওতায় সমলিঙ্গে বিবাহে স্বীকৃতি ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিজিৎ আইয়ার মিত্র, গোপী শঙ্কর এম, গীতি ঠান্ডানি এবং জি ঊর্বশীর মতো আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন: বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট, দুষ্কৃতী হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক
আবেদনকারীদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালেই সমলিঙ্গের সম্পর্ক অপরাধের আওতা থেকে বাদ দিয়েছে। ফলে সমলিঙ্গের মানুষদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের স্বীকৃতি দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে তাঁদের আরও যুক্তি ছিল, হিন্দু বিবাহ আইনের ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যুগলের এক জন নারী ও অপর জনকে পুরুষ হতেই হবে— তা উল্লেখ করা নেই। দু’জন হিন্দুর মধ্যে বিবাহের কথা বলা হয়েছে। তবে সেই যুক্তি খণ্ডন করে সলিসিটর জেনারেলের দাবি, এক জন পুরুষ ও নারীর মধ্যেই বিবাহ হতে পারে, যাতে ওই আইনের আওতায় তা নিষিদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে না পড়ে। পাশাপাশি, তুষার মেহতার আরও যুক্তি, “২০১৮ সালে নভতেজ সিংহ জোহর মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ ধারা আংশিক রদ করে সমলিঙ্গের মানুষদের উপর থেকে কেবলমাত্র অপরাধীর তকমা সরিয়ে দিয়েছিল, এর বেশিও নয়, এর কমও নয়।”
আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী রাঘব অবস্থি আদালতে জানিয়েছিলেন, সমলিঙ্গের যুগলের মধ্যে বিবাহ হলেও তাতে আইনি বৈধতা না থাকায় স্বীকৃত হচ্ছে না। এর ফলে এই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের সাম্যের অধিকার খর্ব হচ্ছে। এমনকি, এতে তাঁদের জীবনের অধিকারও লঙ্ঘিত হচ্ছে। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী। দু’পক্ষের যুক্তি শোনার পর আবেদনকারীদের আদালত জানিয়েছে, এমন ঘটনা বা উদাহরণের রেকর্ড জমা করতে যেখানে সমলিঙ্গ যুগলের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। পাশাপাশি, এই আবেদন মুক্তমনা হয়ে ভাবা উচিত বলেও জানিয়েছে আদালত। আগামী ২১ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: ইরানে বাসমতি চালের বাজার হারাচ্ছে ভারত, দখল নিচ্ছে পাকিস্তান