ওয়েবডেস্ক: পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হাহুতাশ যে আসলে কুম্ভীরাশ্রু তা আবার প্রমাণিত হল। রবিবার সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটা ছবি দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল সারা দেশ। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মধ্য প্রদেশের শিবপুরী জেলায় রাস্তার ধারে বন্ধুর কোলে বেঁহুশ হয়ে নেতিয়ে পড়ে আছেন এক যুবক। এবং তাঁর বন্ধু, আরেক যুবক অসহায়ভাবে সাহায্য চাইছেন। তবে বন্ধুর চেষ্টা বিফল করে কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যান অমৃত নামে ২৪ বছরের ওই যুবক।
পুলিশ সূত্রে খবর, গুজরাটের সুরাটের একটি কাপড় কারখানার কর্মী অমৃত এবং ইয়াকুব উত্তর প্রদেশের বস্তি জেলার বাসিন্দা। পকেটে কানাকড়ি নেই। শেষ সম্বলটুকু যা ছিল সবই লকডাউনের দুমাসে শেষ হয়ে গেছে। তাই বাড়ি ফিরতেই হবে। এই জেদকে সম্বল করে মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী (Shibpuri) থেকে হাঁটতে শুরু করেন বছর ২৪-এর এই যুবক, নাম অমৃত। বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে ৪০০০ টাকা দিয়ে একটি ট্রাকে দাঁড়ানোর জায়গা পেয়েছিলেন দুজনে। কিন্তু মাঝপথে অমৃত অসুস্থ হয়ে পড়ায় শিবপুরীর কাছে তাঁকে ট্রাক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অমানবিক অত্যাচার , ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের উপর লাঠিচার্জ পুলিশের
অমৃতকে ট্রাক থেকে নেমে যেতে দেখে সঙ্গ ছাড়েননি বন্ধু ইয়াকুব। তিনিও নেমে পড়েন ট্রাক থেকে। এরপর শুরু হয় দুই বন্ধুর পথচলা। সেখান থেকেই হাঁটতে শুরু করলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন অমৃত। তখন বন্ধু ইয়াকুবের কোলেই মাথা রেখে রাস্তায় শুয়ে পড়েন অমৃত। বন্ধুকে ক্রমশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন ইয়াকুব। কিন্তু কেউ গাড়ি থামায় না। রাস্তায় চলার পথে এক স্থানীয় সেই ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় তৎখনাত তা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর খবর পেয়ে শিবপুরী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ জানান, “আমরা গিয়ে জানতে পারি অমৃতের জ্বর হয়েছে। ও রাস্তায় বমি করতে শুরু করে। আমাদের মনে হয় ও প্রচন্ড রোদে হেঁটে আসার ফলেই হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে ওঁর করোনা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার পরেই জানা যাবে।”
পুলিশের সহায়তায় অমৃতকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তবে ইয়াকুবকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তার করোনা পরীক্ষা করা হবে জানায় শিবপুরী থানার পুলিশ। এভাবেই করোনার জেরে সমাপ্তি হয় ইয়াকুব ও অমৃতের বন্ধুত্বের। অমৃতের মত বাড়ি ফিরতে গিয়ে নিত্যদিন প্রাণ হারাচ্ছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিকরা। কেউই হয়তো জানেন না যে কবে শেষ হবে তাদের পথচলা। কী হবে তাদের ভবিষ্যত।
আরও পড়ুন: বাচ্চা সমস্যায় পড়লে বাবা-মা কী ঋণ দেয় ? করোনা প্যাকেজ নিয়ে কেন্দ্রকে প্রশ্ন রাহুলের