Site icon The News Nest

ধর্ষককে বিয়ে করতে বলেননি, পদত্যাগের দাবি উঠতেই তড়িঘড়ি সাফাই প্রধান বিচারপতির

bobde

নিদান দেননি। শুধু প্রশ্ন করেছিলেন। ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ধর্ষিত কিশোরীকে তিনি বিয়ে করবে কি না! কিন্তু বিয়ে করতে বলেননি। অথচ তাঁর বক্তব্যের তেমনই ব্যখ্যা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সাফাই দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে।

দেশ জুড়ে নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা তীব্র সমালোচনা করেছে বোবদের। গত ১ মার্চের ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত সেই রায়ের পর তাঁকে ‘খলনায়ক’ প্রতিপন্ন করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেও বলা হয় বোবদেকে। সোমবার কিছুটা চাপে পড়েই সম্ভবত নিজের বক্তব্যের ব্যখ্যা দিলেন প্রধান বিচারপতি। বোবদে বললেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতকে এমনভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যাতে মনে হয়, মহিলাদের অসম্মান করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অথচ এটা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ সুপ্রিম কোর্ট বরাবরই নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে এসেছে।’’

ধর্ষণের মতো অপরাধকে ‘লঘু’ করার চেষ্টা করেছে সুপ্রিম কোর্ট, এমনই অভিযোগ উঠেছিল দেশের প্রধান বিচারপতি বোবদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার, ১ মার্চ, একটি ধর্ষণ মামলার রায় নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই মামলায় ধর্ষণে অভিযুক্ত মোহিত সুভাষ চভনের জামিনের আবেদনের শুনানি চলছিল আদালতে। মহারাষ্ট্রের সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার কর্মী মোহিতের বিরুদ্ধে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল।

পকসো আইনে অভিযুক্ত মোহিতের বিরুদ্ধে ওই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্ট মোহিতকে বলে, ‘‘যদি তুমি (ধর্ষিতকে) বিয়ে করতে চাও, আমরা সাহায্য করতে পারি। যদি না চাও, তবে তুমি তোমার চাকরি খোয়াবে। তোমাকে জেলেও যেতে হবে।’’ সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির শুনানি চলছিল প্রধান বিচারপতি বোবদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। মামলাটির শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘তুমি মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেছ। তবে আমরা তোমাকে জোর করছি না। কারণ সেক্ষেত্রে পরে তুমি বলবে আদালত তোমাকে বাধ্য করেছে।’’ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়েরই নিন্দায় সরব হয় দেশের বিভিন্ন মহল।

আরও পড়ুন: রাজনীতি থেকে আচমকা সন্ন্যাস জয়ললিতা ঘনিষ্ট শশীকলার, সরগরম তামিলনাড়ুর ভোট বাজার

বিষয়টিকে নারীদের প্রতি অবমাননাকর আখ্যা দেন দেশের বিদ্বজ্জন ও নারীবাদীরা। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ধর্ষণের মতো অপরাধকে কী ভাবে প্রধান বিচারপতি এ ভাবে ‘লঘু’ করে দেখাতে পারেন। তিনি কি বিয়েকে ধর্ষণের মতো অপরাধের ‘প্রতিকার’ হিসাবে প্রতিপন্ন করতে চাইছেন? বিষয়টির তীব্র নিন্দা করে প্রধান বিচারপতিকে ক্ষমা চাইতে বলেন তাঁরা। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সই করেন ৫ হাজারের বেশি মানুষ।

মনে করা হচ্ছে, এরই জবাবে সোমবার ‘সাফাই’ দিয়েছেন বিচারপতি বোবদে। এদিন তিনি বলেন, ‘‌এই সংস্থা তথা বেঞ্চ নারীদের সবচেয়ে বেশি সম্মান দিয়ে থাকে। আমরা কখনই অভিযুক্তকে বলিনি নির্যাতিতাকে বিয়ে করতে। আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি কী মেয়েটিকে বিয়ে করতে চান?‌ কিন্তু এটাকে নিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছিল।’‌ এটা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কারণ ১৪ বছরের মেয়েটি ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। তার প্রেক্ষিতেই এই প্রশ্ন করেছিল সর্বোচ্চ আদালত বলে জানা গিয়েছে।

এই বিষয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘‌পরিস্থিতি সাপেক্ষে এই প্রশ্ন একেবারেই যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু সেই মন্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বরাবর মহিলাদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে এসেছে। নারীর অবমাননার কথা এই বেঞ্চ ভাবতেই পারে না।’‌

আরও পড়ুন: পালিয়েছিলেন ৪ যুবকের সঙ্গে, লটারির মাধ্যমে পাত্র বেছে নিলেন তরুণী

Exit mobile version