উনিশের পর চোখ ছিল একুশে। কারণ একটাই, বাংলা। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election) নিয়ে আগ্রহ যত না বেশি, তার চেয়েও অনেক বেশি আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। শুক্রবার দুপুর ১২ টা বাজার আগেই অপেক্ষার প্রথম দফার অবসান ঘটায় নির্বাচন কমিশন। সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয় বিকেল সাড়ে ৪ টেয়। সেখানেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে, তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল জল্পনা। সব জল্পনায় ইতি টেনে বিকেলেই সাংবাদিক বৈঠকে বসেন সুনীল আরোরা। জানান, ৮ দফায় হবে বিধানসভা ভোট।
পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরালা, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতে ভোট হলেও সবথেকে হাইপ্রোফাইল লড়াই হতে চলেছে বাংলায়। যে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নজাল বুনছে বিজেপি। তবে লড়াইয়ে কোনওরকম ফাঁক দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। কেরালায় বাম-কংগ্রেসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনুমান করছেন পর্যবেক্ষকরা। অপর এক দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ুতে মূল লড়াইটা এআইএডিএমকে-বিজেপি জোটের সঙ্গে ডিএমকে জোটের। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে সেখানে ডিএমকে যথেষ্ট ভালো ফল করেছিল। দিনকয়েক আগে পুদুচেরির কংগ্রেস সরকার পড়ে যাওয়ায় সেখানকার লড়াই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। অসমে আবার লড়াইটা বিজেপি বনাম কংগ্রেসের।
এক নজরে দেখে নিন ভোটের নির্ঘণ্ট
প্রথম দফা: ২৭শে মার্চ – ৩০টি কেন্দ্র (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ভাগ ১, পূর্ব মেদিনীপুর ভাগ ১)
দ্বিতীয় দফা: ১লা এপ্রিল – ৩০টি কেন্দ্র (বাঁকুড়া ভাগ ২, পশ্চিম মেদিনীপুর ভাগ ২, পূর্ব মেদিনীপুর ভাগ ২, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভাগ ১)
তৃতীয় দফা: ৬ই এপ্রিল – ৩১টি কেন্দ্র (হাওড়া ভাগ ১, হুগলি ভাগ ১, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভাগ ২)
চতুর্থ দফা: ১০ই এপ্রিল – ৪৪টি কেন্দ্র (হাওড়া ভাগ ২, হুগলি ভাগ ২, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভাগ ৩, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার)
পঞ্চম দফা: ১৭ই এপ্রিল – ৪৫টি কেন্দ্র (উত্তর ২৪ পরগনা ভাগ ১, নদিয়া ভাগ ১, পূর্ব বর্ধমান ভাগ ১, দার্জিলিং, কালিম্পঙ, জলপাইগুড়ি)
ষষ্ঠ দফা: ২২শে এপ্রিল – ৪৩টি কেন্দ্র (উত্তর ২৪ পরগনা ভাগ ১, নদিয়া ভাগ ১, পূর্ব বর্ধমান ভাগ ২, উত্তর দিনাজপুর)
সপ্তম দফা: ২৬শে এপ্রিল – ৩৬টি কেন্দ্র (মালদা ভাগ ১, মুর্শিদাবাদ ভাগ ১, পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ কলকাতা, দক্ষিণ দিনাজপুর)
অষ্টম দফা: ২৯শে এপ্রিল – ৩৫টি কেন্দ্র (মালদা ভাগ ২, মুর্শিদাবাদ ভাগ ২, বীরভূম, উত্তর কলকাতা)
আরও পড়ুন: শর্ত সাপেক্ষে ছ’মাসের জামিন পেলেন অশীতিপর কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাও
- পুদুচেরিতে ভোটগ্রহণ হবে এক দফায়। ভোটগ্রহণ হবে ৬ এপ্রিল।
- ৩৮ টি জেলায় তামিলনাড়ুতে ভোট হবে এক দফায়। ভোটগ্রহণ হবে ৬ এপ্রিল।
- কেরালায় এক দফায় ভোট হবে। আগামী ৬ এপ্রিল ভোট হবে। একটি উপনির্বাচন হবে একইসঙ্গে।
- অসমে তিন দফায় ভোট হবে। প্রথম দফা : ২৭ মার্চ। দ্বিতীয় দফা : ১ এপ্রিল। তৃতীয় দফা : ৬ এপ্রিল। ভোটগণনা হবে ২ মে।
অরোরা জানিয়েছেন পুদুচেরিতে বিধানসভাপিছু খরচ করা যাবে ২২ লাখ টাকা। বাকি চার রাজ্যের ক্ষেত্রে তা ৩০.৮ লাখ টাকা।আজ থেকেই কার্যকর হবে আদর্শ আচরণবিধি। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর তা লাগু হবে।
পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ পর্যবেক্ষক : অজয় নায়েক (১৯৮৪ ব্যাচের ক্যাডার, অবসরপ্রাপ্ত, বিহারে নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন)। পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র দু’জন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক থাকছেন – বিবেক দুবে এবং মৃণালকান্তি দাস।
সব স্পর্শকাতর চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে। একটি কমিটি থাকবে, যে কমিটি নির্ধারণ করবে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেমনভাবে মোতায়েন করা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ, ওয়েবকাস্টিং থাকবে।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীর সঙ্গে দু’জন থাকতে পারবেন। গাড়িও সর্বোচ্চ দুটি রাখা যাবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থী-সহ পাঁচজন প্রচার করতে পারবেন। রোড শো করা যাবে। তবে পাঁচটি গাড়ির পর কনভয়ে ফাঁক থাকবে।
৮০ ও তার বেশি বয়স্ক, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে তা বাধ্যতামূলত নয়।
২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বুথ সংখ্যা ছিল ৭৭,৪১৩। ২০২১ সালে তা হয়েছে ১০১৯১৬ লাখ। ৩১ শতাংশ বাড়ল। প্রতি বুথে সর্বোচ্চ ভোটার ১,০০০। সব বুথ বাধ্যতামূলকভাবে হবে নিচের তলে।
মোট বিধানসভা আসন ৮২৪। মোট ভোটার ১৮.৬৮ কোটি। বুখ সংখ্যা ২.৭ লাখ।
আরও পড়ুন: আচ্ছে দিন! মধ্যবিত্তের চাপ বাড়িয়ে এক মাসে তিনবার দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের