বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদের উচ্চকক্ষে ধ্বনিভোটে পাশ করিয়ে নিল কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত দু’টি বিতর্কিত বিল।করোনা আবহের মধ্যেও এদিন সামাজিক দূরত্ব-বিধি কার্যত শিকেয় তুলে ওয়েলে নেমে, চেয়ারম্যানের আসনের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। ‘জবাবে’ জড়ো হয়ে বিলের পক্ষে স্লোগান দেন সরকারপক্ষের সদস্যেরাও।
বিবার রাজ্যসভায় বিতর্কিত কৃষিবিলগুলি পেশ করেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমর (Narendra Singh Tomar)। দীর্ঘ আলোচনা এবং বিতর্কের পর বিরোধী শিবিরের প্রবল বিক্ষোভের মধ্যেও দুটি কৃষি বিল পাশ করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
সভা পরিচালনা করছিলেন ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ কয়েকজন বিরোধী সাংসদকে তাঁর আসনের সামনে গিয়ে কাগজপত্র ও মাইক টানাটানি করতে দেখা যায়। প্রসঙ্গত, বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই সাংসদদের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানোয় বিধিনিষেধ জারি হয়েছিল।
Rajya Sabha passes the Farmers' and Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Bill, 2020 and Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm Services Bill, 2020, amid protest by Opposition MPs https://t.co/JqGYfi8k4x
— ANI (@ANI) September 20, 2020
কৃষক কল্যাণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বলেন, ‘‘কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার পথে এই বিল কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।’’ বিল পাশ হওয়ার পরে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোজীজির নেতৃত্বে ভারতীয় কৃষকেরা ৭০ বছরের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেলেন।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, এই বিল আসলে ‘কৃষকদের মৃত্যু পরোয়ানা’। বিতর্কে অংশ নিয়ে রাজ্যসভার ডিএমকে সাংসদ টি কে এস ইলানগোভানের মন্তব্য, ‘‘ওই কৃষি বিল ফের চাষিদের ক্রীতদাসে পরিণত করবে।’’ এমনকী, বিজেপির সবচেয়ে পুরনো সহযোগী শিরোমণি অকালি দলের সাংসদ নরেশ গুজরাল কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘‘পঞ্জাবের কৃষতদের দুর্বল ভাবার ভুল করবেন না। তাঁরা এই কৃষক-বিরোধী বিল মেনে নেবেন না।’’
পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান-সহ বিভিন্ন রাজ্যে এদিন সকাল থেকেই কৃষি সংস্কার বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন চাষিরা। উত্তর ভারতের প্রভাবশালী কৃষক সংগঠন ‘ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন’ এদিন দুপুর ১২টা থেকে তিন ঘণ্টার পথ অবরোধ আন্দোলন শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় এই অর্ডিন্যান্সগুলি বিল আকারে ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায়। যদিও কৃষকদের ধারণা, এই বিল পাশ হওয়ার ফলে বাজার থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরে যাবে। সরকার ধীরে ধীরে ন্যূনতম সমর্থন মুল্যে ফসল কেনা বন্ধ করে দেবে। ফলে কৃষকদের পুঁজিপতিদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা এই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। আগামী ২৪-২৭ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে রেল রোকো কর্মসূচি নিয়েছে কৃষকদের একটি সংগঠন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ডাকা হয়েছে ভারত বনধ।
বিবার রাজ্যসভায় বিলগুলি পেশ করেন কৃষিমন্ত্রী। অনেকদিন বাদে প্রায় সম্মিলিতভাবে বিরোধী শিবির এই বিলের বিরোধিতা করে। কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডি, ডিএমকে, বামেরা এবং অকালি দল যৌথভাবে এর বিরোধিতা করে। এমনকী বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গ দেওয়া বিজেডি এবং টিআরএসও এর বিরোধিতা করে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সেসবে গ্রাহ্য করেনি মোদী সরকার।