#ম্যাঙ্গালুরু: নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েছে ক্যাফে কফি ডে (সিসিডি)-র মালিক ভি জি সিদ্ধার্থের দেহ। বুধবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ সময় মেঙ্গালুরুর হইগে বাজারের কাছে নেত্রাবতী নদী থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ।
ম্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনার সন্দীপ পাটিল জানিয়েছেন, “আজ ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ আমরা দেহ পেয়েছি। উল্লালের কাছে নেত্রাবতী নদীর পাড়ে দেহ দেখতে পান স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। তাঁরাই আমাদের খবর দেন। দেহ চিহ্নিত করা হয়েছে। জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে সিদ্ধার্থের। আমরা পরিবারকে খবর দিয়েছি। দেহ ওয়েনলক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে ময়নাতদন্তের জন্য। আমরা আমাদের তদন্ত জারি রাখব।”
সিদ্ধার্থ প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ও কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের জামাই। সোমবার রাতে বেঙ্গালুর থেকে সকলেশপুরের দিকে রওনা হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। চালকের দাবি, মাঝপথে সিদ্ধার্থ নির্দেশ দেন ম্যাঙ্গালুরুর দিকে যেতে। এর পর ম্যাঙ্গালুরুর কাছে নেত্রাবতী নদীর সেতুর উপর গাড়ি থামাতে বলেন। ‘একটু হেঁটে আসছি’ বলে গাড়ি থেকে নেমে যান তিনি। সিদ্ধার্থের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে প্রথমে তাঁকে ফোন করেন গাড়িচালক বাসবরাজ পাতিল। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। এরপর তিনি ফোন করেন ছেলে ঈশানকে। তিনিও তাঁর বাবার ফোন সুইচড অফ পান। প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও সিদ্ধার্থ না ফেরায় পুলিশে খবর দেন বাসবরাজ।
তল্লাশি শুরু হতে পুলিশকে স্থানীয় এক মৎস্যজীবী জানান, তিনি এক জনকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর কাছে পৌঁছতে পারেননি। এরপরে ক্রমেই দৃঢ় হতে থাকে তাঁর আত্মহত্যার আশঙ্কা। সোমবার রাত থেকে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চলতে থাকে নেত্রাবতী নদী ও তার সংলগ্ন এলাকা। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরে বুধবার সকালে তাঁর দেহ উদ্ধার হল।
সিদ্ধার্থের রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই নানা জল্পনা শুরু হয়। জল্পনা আরও জটিল করে নিজের সংস্থার কর্মীদের লেখা সিদ্ধার্থের একটি চিঠি প্রকাশ্যে এনেছিল সংবাদ সংস্থা এএনআই। চিঠিতে, তেমন ভাবে লাভ না হওয়ার জন্য সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। লিখেছিলেন, ‘সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, আমি লাভ ঘরে তুলতে ব্যর্থ। আমার দায়িত্বেই প্রত্যেকটি আর্থিক লেনদেন হয়েছিল। আইনের কাছে একমাত্র আমিই জবাবদিহি করতে বাধ্য।’
ওই চিঠির সূত্রে স্পষ্ট, ব্যবসায় তেমন ভাবে লাভ হচ্ছিল না সিদ্ধার্থের। প্রসঙ্গত, গত ২০১৭ সালে সিদ্ধার্থের সংস্থায় হানা দেয় আয়কর বিভাগ। চলতি বছরেই মাইন্ডট্রি নামক সংস্থায় থাকা তাঁর ২০ শতাংশ শেয়ার বিক্রিও করে দেন তিনি।পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ব্যবসায়ে আর্থিক মন্দার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন ভি জি সিদ্ধার্থ।
তাঁর চিঠির বক্তব্যকে সমর্থন করে তাঁর উপর আয়কর দফতরের নির্যাতনের অভিযোগে সরব হয়েছেন বিধায়ক টি ডি রাজেগৌড়া।নিজেকে সিদ্ধার্থের পারিবারিক বন্ধু হিসাবে উল্লেখ করে রাজেগৌড়া অভিযোগ করেছেন, গত চার-পাঁচ দিন ধরে আয়কর দফতরের হেনস্থা নিয়ে সিদ্ধার্থ ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, কর্নাটকের জন্য তো বটেই দেশের অর্থনীতিতে ভাগিদার ছিলেন সিদ্ধার্থ। তিনি প্রায় ৩০-৩৫ হাজার গরিব গ্রামবাসীর হাতে কাজ জুটিয়ে দিয়েছিলেন।