প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, শল্য চিকিৎসক, সমাজসংস্কারক ও দেশের প্রথম মহিলা বিধায়ক, বিস্তারিত জেনে নিন ডঃ মুক্তালক্ষ্মী রেড্ডি সম্পর্কে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

#নয়াদিল্লি: দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, বিধায়ক, শল্য চিকিৎসক তথা সংস্কারক ডঃ মুক্তালক্ষ্মী রেড্ডির জন্মদিনে মঙ্গলবার বিশেষ ডুডল প্রকাশ করে উদযাপন করছে গুগল। নিজের জীবনে বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ের সাক্ষ্মী হয়েছেন তিনি। মহিলার জন্যেও জীবনভর নানা কাজ করেছেন দেশের প্রথম মহিলা বিধায়ক। নিজের জীবনে অবিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসক রেড্ডি জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি, অগণিত যুবতী মেয়েদের জীবনকেও এক নতুন দিশায় চলার পথ দেখান তিনি।

১৯৮৩ সালের এই দিনটিতে তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন মুক্তালক্ষ্মী রেড্ডি।তাঁর বাবা এস নারায়ণস্বামী আইয়ার ছিলেন মহারাজাস কলেজের অধ্যক্ষ। মা চন্দ্রাম্মাল ছিলেন মন্দিরের প্রাক্তন দেবদাসী। তাঁকে বিয়ে করার জন্য রক্ষণশীল সমাজ একঘরে করেছিল নারায়ণস্বামীকে।

প্রাইভেট ক্যান্ডিডেট হিসেবে মুথুলক্ষ্মী ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯০২ সালে। এরপরই বাঁধল গোল। তিনি ভর্তি হতে চাইলেন মহারাজাস কলেজে। মেয়ে হয়ে কলেজে ছেলেদের সঙ্গে পড়বে? তীব্র প্রতিবাদ করলেন অভিভাবকরা। শুরু হল মেয়েকে পাত্রস্থ করার উদ্যোগ। কিন্তু বেঁকে বসল কিশোরী নিজে। বিয়ে সে করবে না, বাড়িতেই চালিয়ে যাবে পড়াশোনা। অনেক ছাত্র কলেজ থেকে নাম কাটিয়েও নিলেন। কিন্তু মুথুলক্ষ্মী অনড়। শেষে তাঁর জেদের কাছে হার মেনে পুড়ুকোট্টাইয়ের তৎকালীন রাজা মার্তণ্ড ভৈরব থোণ্ডামান মুথুলক্ষ্মীকে কলেজে পড়ার অনুমতি দিলেন।

১৯০৭ সালে তিনি ভর্তি হলেন মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে। ১৯১২ সালে তাঁর ডাক্তারি-পাঠ শেষ হল। গভর্নমেন্ট মেটারনিটি অ্যান্ড অপথ্যালমিক হসপিটালে তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা হাউস সার্জেন। ডাক্তার হয়েই তিনি ‘ওয়েট নার্সিং’-এর বিরুদ্ধে সরব হলেন। এই প্রথায় দলিত মহিলারা অভিজাত বংশের নবজাতকদের স্তন্যপান করাতেন। এই প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা গডে় তোলেন মুথুলক্ষ্মী।

১৯১৪ সালে বিয়ে করেন চিকিৎসক সুন্দর রেড্ডিকে। বিয়ের পরে নতুন উৎসাহে কাজ শুরু করলেন মুথুলক্ষ্মী। অ্যানি বেসান্তের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘উইমেন্স ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’। ১৯২৭ সালে এই প্রতিষ্ঠান তাঁকে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে মনোনীত করল। সর্বসম্মতিক্রমে তিনি ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। ফলে তিনিই পরাধীন ভারতের প্রথম মহিলা লেজিসলেটর।

m5

আজীবন তিনি মহিলাদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। নারী পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বন্ধ করেছিলেন বহু পতিতালয়ের দরজা। কিন্তু লবণ আন্দোলনের জেরে গান্ধীজিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মুথুলক্ষ্মী কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করেন ১৯৩০ সালে। ফলে ‘মাদ্রাজ দেবদাসিস ( প্রিভেনশন অব ডেডিকেশন) অ্যাক্ট’ পাশ হয় পরে, ১৯৪৭ সালে।

১৯৩১ সালে তিনি আদিয়ারে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘আভ্ভাই হোম’। আশ্রয় দিয়েছিলেন বাল্যবিধবা, সন্তান-সহ পরিত্যক্ত স্ত্রী, অনাথ শিশুকন্যা এবং কুমারী মায়েদের। সেই আশ্রয় এখনও আছে। অনেক বেড়েছে কাজের পরিধি। ক্যানসার গবেষণাতেও তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৪ সালে একটি ছোট্ট কুটিরে তিনি শুরু করেছিলেন ‘আদিয়ার ক্যানসার ইনস্টিটিউট’। এখন সেটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে ক্যানসার নিয়ে গবেষণাতেও।

এ বার থেকে তাঁর জন্মদিন ৩০ জুলাই তামিলনাড়ুতে প্রতি বছর পালিত হবে ‘হাসপাতাল দিবস’ হিসেবে। সোমবারই এই ঘোষণা করেছে তামিলনাড়ু সরকার। জীবনভর কাজের স্বীকৃতি এসেছিল নানা ভাবে। ১৯৫৬ সালে ভূষিত হয়েছিলেন পদ্মভূষণ সম্মানে। কর্মযোগী মুথুলক্ষ্মী প্রয়াত হন ৮১ বছর বয়সে, ১৯৬৮-র ২২ জুলাই। তাঁর হাতে তৈরি সামাজিক কল্যাণমূলক সংস্থাগুলি কাজ করে চলেছে আজও। তাদের মাঝেই বেঁচে আছেন তিনি এবং তাঁর আদর্শ।

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest