হাথরসকাণ্ডে সাসপেন্ড করা হল হাথরসের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং আরও দুই পুলিশকর্মীকে। শুক্রবার রাতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। ওই ঘটনায় গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে। হাসরথের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট চাপে যোগী সরকার। বিরোধীদের ঠেকিয়ে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক তারা।
রাজনৈতিক রোষ ইতিমধ্যেই আছড়ে পড়েছে রাজধানী দিল্লিতে। আট বছর আগে নির্ভয়া-কাণ্ডের সময় তৎকালীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবে সমবেতকণ্ঠে গর্জে উঠেছিলেন দিল্লিবাসী, শুক্রবার সন্ধ্যায় যন্তর মন্তর-সহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে সেই দৃশ্যই ফিরে এল।
আরও পড়ুন : হাথরাস–কাণ্ড এবং তৃণমূল সাংসদদের হেনস্থার প্রতিবাদ, আগামীকাল বিকেলে কলকাতায় মিছিল মুখ্যমন্ত্রী
নির্যাতিতা যাতে ন্যায়বিচার পান, তার জন্য রাজধানীর রাজপথে ভিড় জমাচ্ছেন শ’য়ে শ’য়ে সাধারণ মানুষ। রয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরাও।
হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন শুরুতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে জমায়েত করে প্রতিবাদ জানানো হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি তেতে উঠতে পারে আশঙ্কা করে ইন্ডিয়া গেটের সামনে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা বসায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশ।
ইন্ডিয়া গেট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করেন ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। বিকেল ৫টা থেকে সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের সামনেই অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন কয়েক’শো মানুষ।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি মানুষ প্রতিবাদে অংশ নেন। পরিস্থিতি যাতে হিংসাত্মক আকার না-নেয়, তার জন্য ‘জনপথ’ মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ‘রাজীব চক’, ‘পটেল চক’ মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোনর সব পথ বন্ধ রাখা হয় কিছুক্ষণ। ঠিক হয়, ওই স্টেশনগুলিতে ট্রেনই দাঁড়াবে না। পরে যদিও স্টেশনে ঢোকা বেরোনর সব পথ খুলে দেওয়া হয়।
গাঁধীজয়ন্তীর দিনে এই প্রতিবাদ মিছিলে মহাত্মা গাঁধীর বেশেই অংশ নেন কংগ্রেস সমর্থকরা। এক হাতে মোমবাতি, অন্য হাতে লাঠি নিয়ে, খদ্দরের ধুতি পরে, খালি গায়ে উত্তরীয় চাপিয়ে মিছিল করে যন্তর মন্তরে পৌঁছন তাঁরা। বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন, ভীম আর্মির সদস্যরাও মিছিল করে, স্লোগান দিতে দিতে যন্তরমন্তরে পৌঁছন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালও।
জমায়েতে কেজরিওয়াল বলেন, ‘‘গোটা দেশের একটাই দাবি, দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। তাদের আড়াল করার যে একটা চেষ্টা চলছে, তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার। এমন পরিস্থিতিতে নির্যাতিতার পরিবারকে সাধ্যমতো সাহায্য করতে হবে আমাদের।’’
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকারই নেই। আমরা ন্যায্যবিচার চাই। এই ধরনের জঘন্য অপরাধ ঘটে গেলেও কেন্দ্রীয় সরকার নীরব। বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বও চুপ। গোটা ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকার যে ভাবে এগিয়েছে, তাতে শাসকদলের স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক চেহারা, চাল, চরিত্র এবং চিন্তাভাবনার উপর থেকে পর্দা সরে গিয়েছে।’’
প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘‘আমাদের বোনের জন্য ন্যায্য বিচার আদায় করেই ছাড়ব। তা না হওয়া পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। নির্যাতিতার পরিবারকে কোনও সাহায্যই করেনি সরকার। অত্যন্ত অসহায় বোধ করছেন ওঁরা। এমনকি, রীতি মেনে সৎকারটুকুও করতে দেওয়া হয়নি। সরকারের উপর চাপ বাড়াতেই হবে। ’’
আরও পড়ুন : মোবাইল,মিষ্টি ও আয়কর সহ হরেক, অক্টোবরেই চালু ১০ নয়া নিয়ম