‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে চিনের উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারল না ভারত। বরং সীমান্ত সঙ্ঘাতের জেরে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলেও, ফের এক বার ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী দেশ হিসেবে উঠে এল চিন। কোভিডের প্রকোপে উদ্ভুত অতিমারি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও চিনের সঙ্গে প্রায় ৭ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন বয়েছে ভারতের, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চিন থেকে পণ্যই কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারের, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।
২০১৭ এবং ২০১৮ সালেও ভারতের সঙ্গে ব্যবসার সবচেয়ে এগিয়ে ছিল চিন (China)। কিন্তু ট্রাম্প (Donald Trump) আমলে ২০১৯ সালে সেই প্রথম স্থান ছিনিয়ে নেয় আমেরিকা। তারপরেও ২০২০ সালে ফের প্রথম স্থানে উঠে এল ড্রাগন। গালোয়ান সংঘর্ষ থেকে শুরু করে মোদীর ডিজিটাল স্ট্রাইক- সবটাই যে লোক দেখানো তা প্রমান হল আরও একবার।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অর্থনৈতিক সংস্থা ব্লুমবার্গ। তাতে দেখা গিয়েছে, চিনের পাশাপাশি আমেরিকা এবং সংযুক্ত আমিরশাহির সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। কিন্তু চিনের উপর ভারতের নির্ভরশীলতা তুলনামূলক বেশি।
আরও পড়ুন: দেশে এবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা বানাচ্ছে আম্বানি
২০২০ সালে ভারত ও চিনের মধ্যে ব্যবসা হয়েছে ৭ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের। গত বর্ষে প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকার সঙ্গে ভারতের ব্যবসা হয়েছে ৭ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারের। যার ফলে ২০২০ সালে ভারতের সঙ্গে ব্যবসায় প্রথম স্থানে উঠে এসেছে বেজিং। আর চিনের প্রথম স্থানে উঠে আসা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এই ২০২০ সালের জুন মাসেই গালোয়ানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল লালফৌজ ও ভারতীয় সেনা। এরপর টিকটক-সহ প্রায় শ’খানেক চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্র।
কিন্তু ভৌগলিক কারণই হোক অথবা পড়শি হিসেবে পারস্পরিক সমঝোতা, ২০২০ সালে সীমান্ত সঙ্ঘাত, অতিমারি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারত এবং চিন একে অপরের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
তবে শুধুমাত্র ভারতই চিন থেকে পণ্য আমদানি করেনি। গত বছর চিনও ভারতের কাছ থেকে পণ্য আমদানির ১১ শতাংশ বাড়িয়েছে। গত বছর চিনকে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকার (১৯০০ কোটি ডলার) পণ্য বিক্রি করেছে ভারত। বাণিজ্য ক্ষেত্রে দুই পড়শি দেশের এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা খুব শীঘ্র মিলিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। আর প্রধানমন্ত্রী মোদী যতই হাঁকডাক করুন আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার পথ যে অনেক দূরে তা আরও একবার প্রমান করে দিল এই তথ্য।
আরও পড়ুন: রাজ্যের থেকে অনেক বেশি কর কেন্দ্রের! পেট্রল, ডিজেলের দাম কমাতে নারাজ মোদী সরকার