#নয়াদিল্লি: জয় শ্রীরাম’ এখন যুদ্ধের স্লোগান। মুসলিম-দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের গণপিটুনি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। গণপিটুনিতে দোষীদের জামিন অযোগ্য ধারা এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান করতে হবে। এটা মধ্যযুগ নয়। এক ঝাঁক বিদ্বজ্জনের লেখা চিঠিতে এমনই সব মন্তব্যে তোলপাড় গোটা দেশ। আদুর গোপালকৃষ্ণন, মণিরত্নম, অনুরাগ কাশ্যপ, অপর্না সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ৪৯ জন সেলিব্রিটি তথা বিশিষ্ট জনের সই করা এই চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কেন্দ্র তথা মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে অবিলম্বে ধর্মের নামে এই উন্মাদনা বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিখ্যাতরা। আদুর গোপালকৃষ্ণন, শ্যাম বেনেগালের মতো চিত্র পরিচালকরা যেমন রয়েছেন, তেমনই এ রাজ্য থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনের মতো বিশিষ্টরা।
চিঠিতে তাঁরা খোলাখুলি লিখেছেন, “প্রিয় প্রধানমন্ত্রী…মুসলিম, দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির উপর গণপিটুনির ঘটনাগুলি অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। আমরা জেনে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি যে এনসিআরবি (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো)-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ সালে গোটা দেশে দলিতদের মধ্যে কমপক্ষে ৮৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, এটা অবশ্যই সামগ্রিক ভাবে অত্যন্ত চিন্তার বিষয়”। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘সংসদে গণপিটুনির মতো ঘটনার নিন্দা করেছেন আপনি। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আমরা দৃঢ় ভাবে মনে করি, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করতে হবে এবং দ্রুত ও নিশ্চিত ভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। খুনের ক্ষেত্রে যদি প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান থাকে, তাহলে গণপিটুনির ক্ষেত্রে কেন নয়, যেটা বরং আরও ঘৃণ্য? কোনও দেশেই কোনও নাগরিক ভয়-ভীতির মধ্যে থাকুক এটা কাম্য নয়।’’
পাশাপাশি লেখা হয়েছে, “রামনাম নিয়ে যে ভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এক দিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, অন্য দিকে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যাও বাড়ছে। দেশের একটি বৃহত্তর অংশের মানুষের কাছে রামনাম পবিত্র। কিন্তু এই নামকে ব্যবহার করে যে ভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, দেশের প্রধান হিসাবে, আপনার অবিলম্বের ব্যবস্থা নিয়ে বন্ধ করে উচিত”।
“অসহিষ্ণুতা হল একপ্রকার মধ্যযুগীয় বর্বরতা”, ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে এই কথা উল্লেখ করেছেন বিশিষ্টজনরা। পাশাপাশি, দলিত ও সংখ্যালঘুদের উপর বেড়ে চলা হামলার বিরুদ্ধেও সওয়াল করেছেন তাঁরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোজ কোথাও না কোথায় গণপিটুনিতে নিহত হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। স্বজনহারা হচ্ছে কত পরিবার। শুধু সংখ্যালঘুই নয়, হামলা হচ্ছে জয় শ্রীরাম না বলা মানুষগুলির উপরও। এই প্রসঙ্গে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দাবি করেছেন তাঁরা।
এ রাজ্যের রাজনীতিতে শাসক তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে কম বিবাদ হয়নি। কিন্তু সেই রাজনৈতিক লড়াইয়ের বাইরেও হিংসাত্মক ঘঠনার নজির রয়েছে বহু। ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় মারধর, গণপিটুনির মতো ঘটনা আকছার ঘটছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। হাতে গরম উদাহরণ রয়েছে কিছু দিন আগেই বিহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবককে ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় গণপিটুনির জেরে মৃত্যুর ঘটনা। এই নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদ্বজ্জনরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘জয় শ্রীরাম এখন এক ‘যুদ্ধের হুঙ্কার’। এই স্লোগানকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে আতঙ্কের, এই উন্মাদনা, এই বিশৃঙ্খলা হচ্ছে ধর্মের নামে। এটা তো মধ্যযুগ নয়। …রামের নামে এই উন্মাদনা আপনি অবিলম্বে বন্ধ করুন।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে ভর করেই দ্বিতীয় বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি তথা এনডিএ দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সরকার বা শাসক দলের বিরুদ্ধ কোনও মতামত প্রকাশ করলেই দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেও মনে করেন ওই পর্যবেক্ষকরা। এই প্রবণতার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন বিদ্বজ্জনরা।