পুদুচেরিতে তুঙ্গে রাজনৈতিক ডামাডোল, রাজ্যপাল পদ থেকে অপসারিত কিরণ বেদী

কিরণ বেদির অপসারণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। বেদীর অপসারণকে তিনি সাধারণ মানুষের জয় বলেই আখ্যা দেন।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ভোটের আর মাস দুয়েক বাকি। তার আগেই দ্রুত বদলাচ্ছে পুদুচেরির রাজনৈতিক সমীকরণ। লাগাতার চারজন কংগ্রেস বিধায়কের ইস্তফার পরে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতে আচমকাই রাষ্ট্রপতি ভবন জানালো যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পুদুচেরির লেফট্যানেন্ট গভর্নর কিরণ বেদীকে। আপাতত তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলসাই সৌন্দরারাজনরে অস্থায়ী ভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাতে বলা হয়েছে যতদিন নয়া এলজি নিযুক্ত হয়।

দিল্লিতে বিজেপির মুখ ছিলেন কিরণ বেদী ২০১৫-র ভোটে। সেই ভোটে উড়ে যায় বিজেপি। তার পর এই প্রাক্তন পুলিশ অফিসারকে কেন্দ্রীয় শাসিত পুদুচেরির এলজি করে দেওয়া হয়। সেখানে পদে পদে নারায়ণস্বামী সরকারের সঙ্গে সংঘাত বেঁধেছে এই একদা দুঁদে পুলিশ অফিসারের। তবে কিরণ বেদীকে সরিয়ে রাজনৈতিক চালই খেলল বিজেপি বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, যে দুই কংগ্রেস বিধায়ক আগের মাসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্তত একজনের পূর্বশর্ত ছিল যে কিরণ বেদীকে সরাতে হবে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, পুদুচেরিতে বিধানসভা ভোটের প্রচারে বেদীকেই লক্ষ্য করে আক্রমণ শানানোর কথা ভেবেছিল কংগ্রেস। কেন্দ্রের মদতে বেদী পুদুচেরির উন্নয়ন করেননি জানিয়ে প্রচার চালানোর কথা ভেবেছিল কংগ্রেস। এই পদক্ষেপে তাদেরও থামিয়ে দেওয়া গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

এমনিতে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ৩০ টি আসন-বিশিষ্ট পুদুচেরিতে ১৫ টি আসনে জয়লাভ করেছিল কংগ্রেস। সমর্থন দেন ডিএমকের তিনজন এবং একজন নির্দল বিধায়ক। কিন্তু নির্দল বিধাযক এবং ডিএমকের সমর্থন নিয়ে এখন কংগ্রেস সরকারের হাতে আছে ১৪ জন। অন্যদিকে বিরোধী এআইএডিএমক এবং অল ইন্ডিয়া এনআর কংগ্রেসের দখলে আছে যথাক্রমে চারটি এবং সাতটি আসন। সঙ্গে বিধানসভায় বিজেপির তিনজন মনোনীত সদস্য আছেন। তার জেরে স্বভাবতই ভোটের মাত্র মাসদেড়েক আগে পুদুচেরিতে কংগ্রেস সরকারে সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই কিরণ বেদীকে সরানোর সিদ্ধান্ত কাকতালীয় নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।

অপসারণের পর সমালোচনার আশা করা হলেও কিরণ বেদী আজ সকালে টুইট করে সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি যা কিছু করেছেন, সেটি তাঁর পবিত্র কর্তব্য ছিল।” পুদুচেরির মঙ্গলকামনা করে টিম রাজনিবাসকেও ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি তিনি।

আরও পড়ুন: বিচার ব্যবস্থা এখন আর ‘পবিত্র’ নয় মন্তব্য মহুয়ার, লোকসভায় ধুয়ে দিলেন মোদী সরকারকে

টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, “পদুচেরির উপ রাজ্যপাল পদে কাজ করতে দেওয়ার সুযোগের জন্য আমি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই। জনসাধারণের উদ্দেশে কাজ করার জন্য টিম রাজনিবাস যেভাবে কাজ করেছে, তাতে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। যাই-ই কিছু হয়েছে, তা পবিত্র দায়িত্ব ছিল। সাংবিধানিক ও নীতিগত দায়িত্বই পূরণ করেছি আমি। পুদুচেরির সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, যা বর্তমানে সাধারণ মানুষের হাতেই রয়েছে।”

এদিকে, কিরণ বেদির অপসারণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। বেদীর অপসারণকে তিনি সাধারণ মানুষের জয় বলেই আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর অপসারণ চাইছিলেন। তিনি স্বৈরাচারীর মতো ব্যবহার করছিলেন। নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েই তিনি আলাদাভাবে বিভিন্ন নির্দেশ জারি করছিলেন। নিয়মভঙ্গ করে তিনি সমান্তরাল একটি সরকার পরিচালনা করার চেষ্টা করছিলেন। এখন কেন্দ্র জেগে উঠেছে। জনিনা আসন্ন নির্বাচনের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা, তবে এতদিনে যা ক্ষতি হওয়ায় ছিল, তা তিনি করে ফেলেছেন। সেটি ঠিক করা সম্ভব নয়। পুদুচেরির মানুষ এই বিষয়টিকে সবসময় মনে রাখবে।”

একদিকে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো, অন্যদিকে নির্বাচনের ঠিক আগেই উপ রাজ্যপালের অপসারণ- দুই মিলিয়ে উত্তাল পুদুচেরির রাজনীতি। কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পরই বিজেপির তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করা হলেও তিনি জানিয়েছেন, আমাদের সরকার মোটেও সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়নি। সাধারণ মানুষেরাও বলছেন যে “পদ্ম অভিযান” চালিয়েই বিধায়ক ও মন্ত্রীদের কিনে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: মিঠুন চক্রবর্তীর বাড়িতে RSS প্রধান মোহন ভাগবত, এবার কি বিজেপিতে যোগদান? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest