সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করলেই কাউকে জেলে ভরে দেওয়া যায় না, দিশা মামলায় আদালতের ভর্ৎসনার মুখে শাহের পুলিশ

দিল্লির কৃষক আন্দোলনের টুলকিট সংক্রান্ত মামলায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২২ বছরের পরিবেশকর্মীকে।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

টুলকিট মামলায় জামিন পেয়েছেন পরিবেশ কর্মী দিশা রবি। মঙ্গলবার রাতে দিল্লির তিহাড় জেল থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। তাঁর জামিনের শুনানিতে অতিরিক্ত সেশনস আদালতের বিচারক ধর্মেন্দ্র রানা জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ যে প্রমাণ দাখিল করেছে তা খুবই অল্প ও অসম্পূর্ণ। তাই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করার কোনও অকাট্য যুক্তি নেই।

দিল্লি পুলিশের উদ্দেশে বিচারক ধর্মেন্দ্র রাণার নির্দেশ, যে যে অভিযোগ তারা এনেছে তা প্রমাণ করার জন্য অনেক বেশি ও স্পষ্ট তথ্য দরকার। নইলে শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে কোনও নাগরিককে এভাবে হেনস্থা করার অধিকার পুলিশের নেই। কারণ যে যে অভিযোগ পুলিশ এনেছে তা প্রমাণ করতে না পারলে দেশের আইন ব্যবস্থার উপর থেকেই মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে বলেই আশঙ্কা বিচারকের। অতিরিক্ত দায়রা বিচারক বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকরাই সরকারের বিবেক রক্ষক। সরকারি নীতির সঙ্গে একমত না হলেই সেই নাগরিকদের জেলে পুরে দেওয়া যায় না।”

কৃষি আন্দোলনের সমর্থনে একটি টুলকিট সম্পাদনা করা এবং নেটমাধ্যম সেটি পোস্ট করার জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে ২২ বছরের দিশাকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। সেই থেকে তিহাড় জেলে ছিলেন তিনি। শেষমেশ মঙ্গলবার আদালতে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়। দিশাকে জামিন দিয়ে দিল্লি পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করে আদালত। জানিয়ে দেওয়া হয়, দিশার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা শুধু অসম্পূর্ণ এবং আরোপিত। এর আগে কোনও অপরাধে নাম জড়ায়নি তাঁর। তাই তাঁকে জামিন না দেওয়ার কোনও কারণ নেই।

প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে যে হিংসা মাথাচাড়া দিয়েছিল, তার সঙ্গে দিশার কী যোগ, তার সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করতে আগেও দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত তেমন কিছুই আদালতে তুলে ধরতে পারেনি তারা। তাই কোন যুক্তিতে দিশাকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে তা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দিল্লি পুলিশকে। এ ভাবে কারও বাক্‌স্বাধীনতা এবং বিরোধী মত পোষণের খর্ব করা যায় না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আদালত।

আরও পড়ুন: পামেলা কাণ্ডে গলসি থেকে গ্রেফতার বিজেপি নেতা রাকেশ সিং, ধৃত দুই পুত্রও

বিরোধীদের অনেকেরই অভিযোগ, সরকার বিরোধী মত পোষণ করলেই কাউকে দেশদ্রোহী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার ‘রেওয়াজ’ গত কয়েক বছরে অহরহ ঘটতে দেখা গিয়েছে। সেই সূত্র ধরেই বিচারক রাণার সাফ যুক্তি, ‘‘নিজে হাতে যাঁরা এই দেশের ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন, তাঁরা বাক্‌স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। বিরুদ্ধ মতকে যথাযথ সম্মান জানানোর কথা বলেছিলেন। সংবিধানের ১৯তম অনুচ্ছেদ সেই অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। তাই সরকার এবং মন্ত্রীদের অহংবোধে আঘাত হলেই যে কারও বিরুদ্ধেদেশদ্রোহের মামলা ঠুকে দেওয়া যায় না।’’

দিশার জামিনের নির্দেশে বিচারক রাণা আরও বলেন, ‘‘মতানৈক্য, বিরুদ্ধাচারণ, ভিন্নমত পোষণ, সরকারি নীতির বিরোধিতা, এ সব কিছুরই গুরুত্ব রয়েছে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে। সুস্থ এবং প্রাণোচ্ছ্বল গণতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য সচেতন নাগরিকেরও প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের ৫ হাজার বছর পুরনো সভ্যতা বরাবরই সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে, বিরুদ্ধ মতকে কখনও খারিজ করেনি। ঋগ্বেদে বলা রয়েছে, সব দিক থেকেই মহৎ চিন্তা আসুক। অর্থাৎ সেখানেও বিরুদ্ধ মতকে সম্মান জানানো হয়েছে।’’

দিশা এবং সমাজকর্মী শান্তনু মুলুক এবং আইনজীবী নিকিতা জেকবের বিরুদ্ধে খালিস্তানপন্থী সংগঠন পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশন (পিজেএফ)-এর সঙ্গে ষড়যন্ত্র কষে ওই টুলকিট তৈরি করেছিলেন এবং তা নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, দিল্লি পুলিশের এই অভিযোগও খারিজ করে দেন বিচারক রাণা।

এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার আদালত জানায়, যদি তাঁদের মধ্যে কথা হয়ে থাকে তাতে এটা প্রমাণ হচ্ছে না যে তাঁরা দেশবিরোধী চক্রান্ত করছেন কিংবা দিল্লিতে সংঘর্ষের পিছনে তাঁরা যুক্ত। কারণ কী কথা হয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে কাউকে দিনের পর দিন জেলের মধ্যে রাখা যায় না এবং স্রেফ সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করলেই কাউকে জেলে ভরে দেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন: ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে টাইগার উডস, পায়ে বড়সড় চোট, প্রশ্নের মুখে গল্ফারের কেরিয়ার

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest