কে, কী খাবেন, তা একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দ। এ ব্যাপারে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। হালাল নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে একটি আবেদনের শুনানিতে এমনটাই জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনকারীর অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, শীর্ষ আদালত ওই আবেদনটি খারিজও করে দিয়েছে।
আসলে গেরুয়া দল ও সংগঠনগুলি মনে করছে সুপ্রিমকোর্টও তাদের। কেবল মনে করা নয় বিজেপি বহু নেতা তা মুখে উচ্চারণ করেছেন। যেমন ভারতীয় সেনাকে মোদীজির সেনা বলেছেন। অনেকের ধারণা বাবরি মালার রায় ‘আস্থার’ মাপকাঠিতে হওয়ার কারণে গেরুয়া দল ও সংগঠনের লোকেদের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে ‘পক্ষপাতমূলক’ ধারণা জন্মেছে। বাবরি রায় দেবার কয়েক মাস পরেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির রাজ্যসভায় যোগদান এই লোকেদের ধারণাকে পোক্ত করেছে বলে অনেকে মনে করছেন। সে কারণেই তারা মুসলিমদের ধর্মীয় জীবনের পরিসরেও বলপূর্বক ঢুকতে চাইছে।
আরও পড়ুন : দিদির রাজ্যে কমছে বাল্য বিবাহের সংখ্যা, ফের কেন্দ্রের রিপোর্টে সাফল্যের জয়গান
পশুদের উপর নির্মম অত্যাচার প্রতিরোধী আইনের ২৮ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী পশু হত্যার যে আলাদা আলাদা পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলি অপরাধ বলে গণ্য হবে না। অর্থাৎ মুসলিমদের হালাল পদ্ধতিতে মাংস কাটা এবং হিন্দুদের ঝটকা পদ্ধতিতে মাংস কাটার প্রথাকে অপরাধের বাইরেই রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি ওই আইনকেই শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ জানায় অখণ্ড ভারত মোর্চা নামের একটি দক্ষিণপন্থী সংগঠন। তারা দাবি করে, ঝটকা পদ্ধতিতে এক কোপেই জীবন শেষ হয়ে যায় পশুর। কিন্তু হালাল পদ্ধতিতে যন্ত্রণা পেয়ে মরতে হয়। হালালের নামে এই যন্ত্রণাদায়ক হত্যা চলতে দেওয়া যায় না।
কিন্তু তাদের এই যুক্তি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউলের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। জানিয়ে দেওয়া হয়, মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নাক গলাতে পারে না আদালত। বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী বলেন, ‘‘কে নিরামিষ খাবেন আর কে আমিষ খাবেন, তা আদালত ঠিক করে দিতে পারে না। যাঁরা হালাল করা মাংস খেতে চান, খেতে পারেন। যাঁরা ঝটকা মাংস খেতে চান, খেতে পারেন।’’
আবেদনটি খারিজ করার আগে আবেদনকারী ওই সংগঠনের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। বলা হয়, ‘‘আপনাদের আবেদনটি অভিসন্ধিমূলক।’’
সত্যি কথা বলতে কি বাবরি মালার রায়ের পর এদেশের মুসলিমদের মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে। তা হল তাদের নিয়ে কেবল রাজনীতিই হবে। তাদের ইনসাফ দেবে না কেউই। বাবরির মত এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি রায়ের পর মুসলিমদের তরফে কোনো প্রতিবাদ হয়নি। বাবরি রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই কয়েকটি বিষয়কে প্রায় শেষ করে দিয়েছে। প্রথমত, রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে মন্দির ধ্বংস করে যে মসজিদ হয়েছে এমন কোনও প্ৰমাণ মিলেনি। যার অর্থ এতদিন যে মিথ্যাচার চলছিল তা সর্বৈব ভিত্তিহীন। দ্বিতীয়ত, দশকের পর দশক ধরে চলে আসা বিজেপির বাবরি ইস্যুও খতম করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়ে নিজের এতদিনের গরিমা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। রায় হয়েছিল ‘আস্থায়’। যদি এই আস্থায় রায় হবে তাহলে দশকের পর দশক মামলা চালানোর দরকারটাই বা কি ছিল ? জবাব দেবার কেউ নেই। কারণ সব জবাব আস্থায় হয় না।
২০১৮-য় হনুমান জয়ন্তীতে তলোয়ার হাতে বাইক মিছিল বার করেন সংগঠনের সদস্যরা। সেই সময় পূর্ব দিল্লির চারটি মসজিদে রং মাখানো এবং গেরুয়া পতাকা ঝোলানোর অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। পুলিশের চোখের সামনেই গোটা ঘটনা ঘটে। সেই নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিল্লি পুলিশ।
প্রাক্তন বিজেপি নেতা বৈকুণ্ঠলাল শর্মা ১৯৯৮ সালে অখণ্ড ভারত মোর্চা সংগঠনটি গঠন করেন। তবে সেটি রেজিস্টার্ড হয় ২০১৪ সালে। তার পর থেকে একাধিক বার ঝামেলায় জড়িয়েছে তারা। লভ জিহাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হওয়ার পাশাপাশি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন : IPL 2020 :আজ ময়দানে কোহলির আরসিবি বনাম কার্তিকের কেকেআর, কেমন হতে পারে ব্যাটিং অর্ডার?