মাংস কোন পদ্ধতিতে কাটা হচ্ছে, তা জানাতে হবে গ্রাহককে। অর্থাৎ হালাল নাকি ঝটকা পদ্ধতিতে প্রাণীটিকে কাটা হয়েছে, তা গ্রাহকদের জানানোর নির্দেশ দিল উত্তর দিল্লি পুরসভা ।এর আগে পূর্ব ও দক্ষিণ দিল্লিতেও এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। এ বার তালিকায় নতুন সংযোজন হল উত্তর দিল্লিও।
উত্তর দিল্লি পৌরসভায় সর্বসম্মতিতে এই প্রস্তাব পাশ হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, মাংস ঝাটকা না হালাল পদ্ধতিতে কাটা হয়েছে, তা দোকানের বাইরে লিখে রাখতে হবে। এতে গ্রাহকদের সুবিধা হবে।
মুসলিমরা অনেকেই বাইরে মাংস কিনতে ইতস্তত করেন। হালাল কিনা তা সামনে জিজ্ঞাসা করতেও কুন্ঠিত হন। পাছে কেউ মৌলবাদী মনে করে। কেউ খাটো করে। অহেতুক ধর্মীয় পরিচয় সামনে আনতে চাননা মুসলিমরা অনেকেই। অগত্যা চেনা মুসলিমের দোকান ছাড়া তারা অনেকেই মাংস কিনতে পারেন না।
মাংস কাটার পদ্ধতি নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। জল গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট অবধি । সেই সময় শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়েছিল, হালাল নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মাংস কাটার পদ্ধতিও ভিন্ন হয়, সেক্ষেত্রে এটিকে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না।২০২০ সালে হালাল পদ্ধতিতে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, জনগণের খাদ্যাভাস নিয়ে আদালত কোনও মন্তব্য বা পদক্ষেপ করতে পারে না। যাঁরা হালাল করা মাংস খেতে চান, তাঁরা খেতেই পারেন।
আরও পড়ুন: প্যান কার্ড চালু রাখতে আজকের মধ্যেই করুন এই কাজটি…
সম্প্রতি পূর্ব ও দক্ষিণ দিল্লি পুরসভার তরফে জানানো হয়েছিল যে কোন পদ্ধতিতে মাংস কাটা হচ্ছে, তা ক্রেতাদের জানাতে হবে। এ বার একই নির্দেশিকা জারি করল উত্তর দিল্লি পুরসভা। নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পুরসফভার অন্তর্গত ছ’টি জনের সমস্ত দোকান, রেস্তরাঁ, ধাবা ও মাংসের দোকানগুলিতে মাংস কোন পদ্ধতিতে মাংস কাটা হচ্ছে, তা গ্রাহকদের জানাতে হবে।
অনেকেই রেস্তোরাঁতে পছন্দের মাংসের পদ খেতে পারেন না। বিঝতে পারেন না তা ‘ঝটকা’ নাকি ‘হালাল’। ঝটকার ক্ষেত্রে রক্ত ভিতরে জমে যায়। এই রক্তই হল সংক্রমণের সবথেকে ভালো বাহন। রক্তের মাধ্যমেই সংক্রমণ ছড়ায়। ইসলামে রক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ। অন্যদিকে হালালের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব রক্ত বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ফলে মাংসে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়।
একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে বহু মুসলিম মাংসবিক্রেতার দোকানে যথাযথভাবে হালাল হয় না। এমনিতে হালের জন্য কমপক্ষে দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষিকভাবে সুস্থ মানুষ লাগে। কিন্তু মাথায় টুপি পরে একহাতে মুরগির গলা ধরে অন্যহাতে মুরগি জবাব করতে আকছার দেখা যায়। কেবল হালাল শব্দে না মজে এই বিষয়টির দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। মনে করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই রেড মিট ম্যানুয়াল থেকে ‘হালাল’ শব্দ সরিয়েছিল কেন্দ্র। রপ্তানি করা রেড মিট ম্যানুয়ালে ‘হালাল’ শব্দের উল্লেখ থাকলে তা মুসলিম মাংস ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত সুবিধা পান। এমনই অভিযোগ ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-সহ একাধিক ডানপন্থী সংগঠনের। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এই শব্দ ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন মুসলিম ব্যবসায়ীরা। সংগঠনগুলির যুক্তি, ভারত ইসলামিক দেশ ছাড়াও চিন, শ্রীলঙ্কার মতো দেশে মাংস রপ্তানি করে। যেখানে ‘হালাল’ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে না। উলটে শ্রীলঙ্কায় হালাল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংগঠনগুলির দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে মাংস রপ্তানিতে সুবিধা পাবেন দেশের সমস্ত মাংস ব্যবসায়ীরা। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: অসমে বিজেপি প্রার্থীর গাড়িতে ইভিএম পাচার, বিরোধীদের প্রতিবাদে উত্তাল এলাকা, চলল গুলিও