পর পর বিতর্কিত রায়ের জেরে চাকরি পাকা হচ্ছে না বম্বে হাইকোর্টের মহিলা বিচারপতি পুষ্পা গনেরিওয়ালার। সূত্রের খবর, গনেরিওয়ালাকে স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কেন্দ্রীয় সরকারকে যে সুপারিশ করেছিল, তা প্রত্যাহার করে নিতে চলেছে।
শীর্ষ আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন কলেজিয়ামের অন্য ২ সদস্য বিচারপতি এনভি রামানা এবং বিচারপতি আরএফ নরিম্যান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমানে বম্বে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে কর্মরত গনেড়িওয়ালা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গনেরিওয়ালাকে নিয়ে ‘আপত্তি’ জানিয়েছেন দুই প্রবীণ বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং এএম খানউইলকর।
গত কয়েক সপ্তাহে পর পর বেশ কয়েকটি বিতর্কিত রায় এবং পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন গনেরিওয়ালা। তার জেরেই কলেজিয়ামের এই সিদ্ধান্ত ত্বরান্বিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গোপনাঙ্গ প্রদর্শন পকসো আইনে যৌন নিগ্রহ নয়! রায় বম্বে হাইকোর্টের সেই মহিলা বিচারপতির
১৯ জানুয়ারি নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি গনেড়িওয়ালা বলেছিলেন, “ত্বক স্পর্শ না করে কোনও নাবালিকার বুকে হাত দেওয়া হলে তা নাকি পকসো আইনে যৌন নিগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ ত্বকে-ত্বকে সংস্পর্শ না হলে তা পকসো আইনে বিচারাধীন নয়।” বম্বে হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পর্যবেক্ষণের জেরে পকসো আইনের শাস্তি থেকে অব্যাহতি পায় ৩৯ বছর বয়সী অভিযুক্ত। তবে, কয়েকদিনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট নাগপুরের পর্যবেক্ষণে স্থগিতাদেশ জারি করে। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেছিলেন, “হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি হতে পারে।”
তার আগে, ১৫ জানুয়ারি শিশুদের যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে গনেরিওয়ালা বলেন, ‘‘কোনও নাবালিকা মেয়ের হাত ধরে টানা এবং একই সঙ্গে সেই সময় প্রকাশ্যে প্যান্টের জিপ খুললে তা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী যৌন নির্যাতন হিসাবে গণ্য হবে না।’’
২৮ জানুয়ারি একটি মামলার পর্যবেক্ষণে ওই মহিলা বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘ধস্তাধস্তির চিহ্ন মেলেনি ‘ধর্ষিতা’র শরীরে। কোনও এক জনের পক্ষে একই সময়ে তার নিজের জামাকাপড় খুলে, অন্য কারও জামাকাপড় খুলিয়ে ‘ধর্ষণ’ করা আদৌ সম্ভব নয়। দু’জনের সম্মতিতেই হয়েছে ওই শারীরিক মিলন।’’ এই যুক্তিতে ধর্ষণের দায়ে শাস্তি পাওয়া এক আসামিকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। তারও আগে ১৪ জানুয়ারি ‘যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে’ এক ‘ধর্ষক’-এর নিম্ন আদালতের সাজার রায় বদলে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই সব রায় বা পর্যবেক্ষণ প্রকাশ্যে আসতেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
আরও পড়ুন: ইউপির মোরাদাবাদে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মৃত অন্তত দশ