সৈয়দ আলি মাসুদ
এতদিন পর্যন্ত ভারতের প্রকাশিত ও প্রচারিত শত্রু ছিল পাকিস্তান। জওয়ানদের লাশ বিছিয়ে রাজনীতি করেছে দুই দেশই। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ছায়া যুদ্ধ করেছে। সেই অর্থে ভারতের পড়শিদের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়া আর কেউ ঘোষিত শত্রু ছিল না। গোটাটা বদলে গেল মোদী জমানায়।
শপথ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ করে ইনিংস শুরু করেছিলেন মোদী। তারপর বিরিয়ানি। এরপর পুলওয়ামা। তারপর বালাকোট। তারপর লোকসভা। ব্যাস। শানদার দ্বিতীয় ইনিংস। সবার জানা।
আরও পড়ুন : গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সঙ্গে সংঘর্ষ, হত তিন ভারতীয় সেনা
নরেন্দ্র মোদীর হাতে যে দলের পতাকা সেই দল চলে একটি অরাজনৈতিক গেরুয়া সংঘঠনের কথায়। সংগঠনটি না ধর্মীয় , না রাজনৈতিক। এরা হিন্দু আধিপত্যের কথা বলে ঠিকই, কিন্তু সবটাই মনুর প্রেসক্রিপশন মোতাবেক। যার অর্থ ব্রাহ্মণ্যবাদ শেষ কথা। তবে মনুর প্রেসক্রিপশনে একটা ছোট সংশোধনী হয়েছে। সেটি হল দলিত এবং নিম্নবর্ণের মানুষকে বোঝানো হয়েছে তাদের শত্রু আসলে মুসলমান এবং ক্রিস্টান। মুসলমানরাই আসলে তাদের কাজ দখল করে নিচ্ছে।
বিদ্বেষকে সম্বল করে গেরুয়া পতাকার নিচে ভিড় বেড়েছে। এর কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে খানিকটা না দিলের বাস্তবতার প্রতি অবিচার হয়। যাকগে সে কথা। মূল কথাই আসা যাক। ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে…’ কথাটি কি বেমালুম ভুলে গেলেন জিনপিঙ! মোদী-বাবু কত সুন্দর করে তাঁকে আপ্যায়ন করলেন। তার এই প্রতিদান!
বহুদিন ধরে অরুণাচলে দাগ কাটছে চিন। অরুণাচলকে নিজেদের মানচিত্রে ঢুকেও নিয়েছে তারা। কিন্তু এই নিয়ে গেরুয়া বাবুরা কিছু বলেন না। আসলে ব্যাপারটা ঠিক পাকিস্তানের মত জমে না। পাকিস্তানকে সামনে রেখে ঝিকে মেরে বৌকে শিক্ষা টাইপ একটা মজা হয়। সেটা চীনের বেলায় হয় না। তবে বিজেপির নেতারা মাঝে মাঝে বলেন, ১৯৬৫ এর ভারত আর আজকের ভারতে বহু ফারাক। তাদের ‘ফেসবুকি’ ও ‘টুইটারি’ আস্ফালন শুনে মনে হয় চীন বুঝি সেই ১৯৬৫ সালেই পরে রয়েছে।
যেকোনও দেশের বিদেশ নীতি হঠাৎ বদলায় না। স্লোগান বদলায়, আভ্যন্তরীন নীতি বদলায়। জনগণকে ‘বোকা বানানোর’ কৌশল বদলায়, কিন্তু বিদেশনীতিতে চট করে কেউ হাত দেয় না। সেটাই এবার হল। সে কারণে নেপালের মত এতদিনের বন্ধুও আজ চোখ রাঙাচ্ছে। ওরাও নিজেদের সংসদে পাশ করে নিল মানচিত্র বিল। ভারতের ভিতরে নেপাল তার অংশ বুঝতে চাইছে। দাবি করছে ভারত তাদের মাটি জবর-দখল করে রেখেছে। সবটা নাকি চীন করাচ্ছে। সেনা প্রধান তো বলেই ফেলেছিলেন সে কথা।
অনেকে ভাবছেন এত রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে অজস্রবার করমর্দন করে তাহলে মোদী করলেন টা কী ? মোদীর দেশপ্রেম এবং আরএসএস প্রেম দাঁড়িপাল্লায় চাপালে কোনদিকের পাল্লা ভারী হবে তা তিনিই জানেন। যা হচ্ছে তা সংঘের জানা। কোনওটাই অকস্মাৎ হচ্ছে না। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ভরা সংসদে অমিত শাহ বলেছিলেন এবার আকসায় চীন দখল করব। চীন বিষয়টিকে তখন থেকেই অন্য চোখে দেখছে।
অনেকে ভাবছেন এতে মোদী হয়তো বিপাকে পড়বেন। কিন্তু আসলে তেমন কিছু হবে না। মোদী এই দেশে তার ভোটারদের মানসিকতা এমন চেনেন, যেমন চেনে সার্কাসের রিং মাস্টার জানোয়ারদের চেনে। উনি তার অগণিত ভক্ত ও সমর্থকদের বুঝিয়ে দেবেন ভারতকে সবাই ভয় পাচ্ছে। ভারত এখন প্রবল শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। চারিদিকে ভারতের শত্রু।কিন্তু ভারত মাথা নত করবে না কারও কাছে।
তিনি আবারও কন্ঠস্বরের সুনিপুন ব্যবহারে এমন ভাষণ দেবেন , তাতে অনেকেরই মনে হবে এখন পড়শিদের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটাই আসল। কর্মসংস্থান কিংবা রুজি রুটির ব্যাপারটা গৌণ। সময়মত পড়শী শত্রুর নাম বদলে যেতে পারে। যেভাবে ভক্তরা নোট বাতিলকে সমর্থন করেছিল, সেইভাবেই ‘নয়া দেশপ্রেমে’ তারা মোদির পাশেই দাঁড়াবেন। ফলে বাতাসে ফের স্লোগান উঠবে ‘ভারত মাতা কি জয়’। কিংবা ‘জয় শ্রী রাম’। যাই হোক মাঠ কিন্তু মোদী বাবুর দখলেই থাকবে। তাই বিপি না বাড়িয়ে, উত্তেজিত না হয়ে শান্ত থাকুন। যেকোনও সময় ‘নয়া দেশপ্রেমের’গান নতুন করে শোনানো হতে পারে, তৈরী থাকুন।
আরও পড়ুন : দেশকে ‘আত্মনির্ভর’ করার কথা কপচালে হবে না,লাগাম দিতে হবে জ্বালানির দামে, মোদীকে চিঠি সনিয়ার
অভিমত ব্যক্তিগত