পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী যেন জোশে ভরপুর ‘আর্তুগরুল গাজী’, কাঁপন ধরাচ্ছেন শাসক দলের অন্দরে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

গুলাম সিদ্দিকী

বহুদিনের জল্পনার অবসান হল। অবশেষে দল গঠনের কথা জানলেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। অনেকদিন ধরেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল যে ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করতে চলেছেন তিনি। রবিবার ভাঙড়ের ভরা জনসভায় স্পষ্টতই জানিয়ে দিলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দল ঘোষণা করা হবে।

এই সভাতেই রাজনৈতিক মেধার পরিচয়ও রাখেন তিনি। স্পষ্ট করে দেন যে এই দল  কেবল মুসলিমদের কথা বলবে এমন নয়। এই দল আসলে বঞ্চিতদের আওয়াজ তুলে ধরবে। ভাঙড়ের জনসভায় সে কারণেই তিনি বলেন, ‘‌আগামী নির্বাচনে রাজ্যে যদি তাঁর দল ক্ষমতায় আসে তবে দলিত অথবা আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করা হবে। এবং মুসলিম সম্প্রদায় থেকেই যোগ্যতম ব্যক্তিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হবে।’‌

আরও পড়ুন : বিজেপির মতো অশুভ শক্তির বিনাশে পৃথিবীতে আসেন মা দুর্গা! জাগো বাংলা-র শারদ সংখ্যায় লিখলেন তৃণমূল নেত্রী

উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি–সহ বিভিন্ন জেলার একাধিক আসনে তাঁরা প্রার্থী দেবেন। রবিবার ভাঙড়ের চণ্ডীপুর ফুটবল ময়দানে হওয়া জনসভায় এই কথা বলেন তিনি। এদিন আব্বাস সিদ্দিকি বলেন, ‘‌ডিসেম্বর মাসে নতুন দল ঘোষণা করা হবে। আর জানুয়ারি মাসে জীবনতলায় লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতে সভা হবে।’‌

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে রীতিমতো হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তৃণমূলের শক্ত ঘাটি বলে পরিচিত ভাঙড়, ক্যানিংও দখল করবে আমাদের দল। ‌দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূল কংগ্রেস একটিও আসন পাবে না। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলায় আমরা অনেক আসন পাচ্ছি।’‌

একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে আব্বাসের এই ঘোষণা শাসক দলকে খানিকটা চাপে রাখবে। এমনিতেই মিম রয়েছে। তারা ক্রমশ সংগঠন বাড়াচ্ছে। এর ওপর আব্বাসের দল ময়দানে নামলে তা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। তাছাড়া দুই দলের কর্মসূচি ও লক্ষ যেহেতু খানিকটা কাছাকাছি তাই তারা রাজনৈতিক কারণে কাছে আসতেও পারে। এমনটা মনে করছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে তা হবে শাসক দলের কাছে ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝেছেন ইমামভাতা, এবং ভুল টাইমিংয়ে ‘খোদা হাফেজ’, ‘ইনস আল্লাহ’ বলে আগের মত মুসলিম ভোট একচেটে দখলে রাখা কঠিন। তাই এবার তিনি কেবল মুসলিম ভোটের ওপর ভরসা করছেন না। তাঁর কাজগুলি লক্ষ করলে দেখবেন বাঙালি হিন্দুদের র জন্য এই সময়ের মধ্যে তিনি বহু কিছু করেছেন। তারপরও মিডিয়ার একটা অংশ ইমাম ভাতার পিছনেই পড়ে থাকে। বিধানসভা ভোটের আগে তাই তিনি ব্যালেন্স করতে পুরোহিত ভাতার কথা ঘোষণা করলেন। মমতা মুসলিম দরদী এই প্রচারটা আগে তাকে মাইলেজ দিয়েছে। কিন্তু এখন সেটাই সমস্যায় ফেলেছে নেত্রীকে। তিনি বর্ণ হিন্দুদের মন জয়ের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অনেকে বলেছেন আব্বাস সিদ্দিকীর ব্যাপারটা দিদিমনির দলকে চিন্তায় রাখছে। এর আগেও পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী শাসক দলকে চাপে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি যে কায়দা অবলম্বন করতেন তা কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা শাসক দল জানত। সেই অর্থে ‘স্টান্টবাজি’ ছাড়া আলাদা করে ত্বহা গঠনমূলক কোনও পদক্ষেপ নেননি। অনেকের ধারণা তিনি আসলে নিজেকে প্রচারের আলোকে নিয়ে আসতেই চেয়েছিলেন। সে কাজে তিনি সফল হয়েছিলেন। এর বেশি কিছু তিনি চাননি। কিন্তু আব্বাসের দৃষ্টিভঙ্গি বড়। তিনি তরুণ। তাঁর চোখে গঠনমূলক স্বপ্ন রয়েছে। কেবল স্টান্টবাজি করে মাঠ ভরানোকেই তিনি নিজের একমাত্র লক্ষ মনে করছেন না। সেখানেই ‘ভাইজান’ এগিয়ে।

Who are the main characters of the Dirilish Ertugrul or Ertugrul Ghazi

এতদিনেও হুঙ্কার ছাড়া ত্বহা সিদ্দিকী কার্যত কিছু করেননি। ফুরফুরায় আম জনতার সঙ্গে কথা বললেও তা পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা যে একবারেই কমে গিয়েছে তা নয়। তবে আব্বাস যেন তুর্কি ড্রামা সিরিয়ালের আর্তুগরুল(আরতারুল) গাজী। তাঁর জোশ আলাদা। সঙ্গে রয়েছে স্বপ্ন। আগামী দিনে তা কতটা সফল হবে তা ভবিষ্যত বলবে। কিন্তু তিনি যে স্টান্টবাজির জন্য এমন নিজেকে কেবল ‘খিলাড়ি’ বানাতে চাচার মতন ময়দানে নামেননি তা অনেকটাই স্পষ্ট।

একথা ঠিক যে ত্বহা সিদ্দীকে বাংলার মানুষ বিশ্বাস করেছিল। ইনসাফের আওয়াজকে তিনি বুলন্দ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি বহু নৌকায় পা দিয়ে ব্যালেন্স করতে চাইলেন। আপনি যদি ইনসাফের কথা বলেন, তবে আপনার সীরাত(পথ ) হতে হবে সোজা। সেখানে ছকবাজির জায়গা থাকা চলবে না। যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে আপনাকে ময়দানে নামতে হবে। সে পথও সহজ নয়। আব্বাস যা করে দেখানোর পণ করেছেন তা আগেই ত্বহা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সুযোগ নষ্ট করেছেন। এখন ভাইপোর এই এগিয়ে যাওয়া তাঁকে বসে বসে দেখতেই হবে।

আব্বাসের অন্যতম প্লাস পয়েন্ট তিনি ত্বহা সিদ্দিকীকে কাছ থেকে দেখেছেন। যার ফলে নিজের পথ ঠিক করতে তাঁর সুবিধা হয়েছে। তিনি এখনও পর্যন্ত যে লক্ষের কথা বলেছেন তা অভিনব হয়তো নয়, কিন্তু তা কেবল জলসার ভাষণও নয়। এ হল রীতিমত জমিনে লড়াই। ফেসবুক, ইউটিউবের ভার্চুয়াল লড়াই নয়। আজকাল যেখানে অনেকটাই সীমাবদ্ধ ত্বহা। তবে এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, ফুরফুরার বহু পীরজাদার মধ্যে ত্বহা সিদ্দিকী প্রথম নিজেকে এমন ভাবে প্রচারের আলোকে নিয়ে আসেন। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এমন লোক খুব কম রয়েছে, যিনি ত্বহা সিদ্দিকীর নাম জানেন না। তাঁর এনজিও বেশ কিছু ভাল কাজও করছে। কিন্তু মাঠের বাইরে ‘খিলাড়ি’ হবার বাসনা তাঁকে খুব বেশি দূর এগোতে দিলো না। সেখানে এখনও পর্যন্ত আব্বাস এগিয়ে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ রয়েছে, যার অর্থ হল, ‘সকাল বুঝিয়ে দেয় দিন কেমন যাবে।’ আব্বাসের এই উদ্যম তাঁকে কতদূর নিয়ে যায় সেটাই এখন দেখার।

অভিমত ব্যক্তিগত

আরও পড়ুন : রিচার্জ করুন ১০০ টাকার কম, পেয়ে যান ১২ জিবি ডেটা, দুর্দান্ত অফার VI- এর

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest