ওয়েব ডেস্ক: শুক্রবার ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ভোর সাড়ে পাঁচটায় একসঙ্গে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয় নির্ভয়ার চার অপরাধীকে। ফাঁসির পরে বিধি মেনে ৩০ মিনিট অপেক্ষাও করা হয়। চারজনেরই মৃত্যু নিশ্চিত করেন ডিজিপি (জেল) সন্দীপ গোয়েল। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় দীনদয়াল হাসপাতালে।
ফাঁসির আগের রাতে খাবার খেতে অস্বীকার করে দুই অপরাধী পবন ও অক্ষয়। মুকেশ ও বিনয় অবশ্য তাদের শেষ নৈশভোজ করে। রাতে মুকেশ তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে। সূত্রের খবর, তিহাড়ের কর্তব্যরত কর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে পবন ও বিনয়।জেল কর্তৃপক্ষের থেকে এখন জানা গিয়েছে অপরাধীদের শেষ ইচ্ছে কি ছিল। এরমধ্যে অবশ্য মুকেশ সিং ও বিনয় শর্মার ইচ্ছে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন অবশেষে ফাঁসি হয়ে গেল নির্ভয়ার চার ধর্ষক-হত্যাকারীর
এদিন সকাল সাড়ে পাঁচটার সময় ফাঁসি হয় এই চার অপরাধীর। তার এক ঘণ্টা আগে জেল কর্তৃপক্ষ ও পশ্চিম দিল্লি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নেহা বনসল তাদের সঙ্গে জেলে দেখা করেন। নিয়ম অনুযায়ী, বন্দিদের কোনও উইল বানানোর ইচ্ছে থাকলে সেটি জেল সুপারিনটেনডেন্ট ও জেলা ম্যজিস্ট্রেটের সামনে বললে তখনই তা বানিয়ে দেওয়া হবে। তবে নির্ভয়াকে খুন করা এই চার অপরাধী উইল বানাতে চায়নি।
তিহাড় জেলসূত্রে খবর, ফাঁসির দুদিন আগে লিখিতভাবে নিজের দেহদানের কথা জানায় মুকেশ সিং। বিনয় শর্মা জেল আধিকারিকদের বলেছিল, তার সমস্ত হাতে আঁকা ছবি সে দান করতে চায়। পাশাপাশি তার সংগ্রহে থাকা হনুমান চালিশা ও বাবাজির ছবি সে দিতে চায় তার পরিবারের লোকজনকে। পবন ও অক্ষয় ঠাকুরের শেষ ইচ্ছা অবশ্য জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: Nirbhaya convicts: জেনে নিন নির্ভয়ার ৬ খুনির আসল পরিচয়
ফাঁসির দিন যতই এগিয়ে এসেছে, নির্ভয়ার অপরাধীরা ততই মুখে কুলুপ এঁটেছে। জেল কর্তৃপক্ষরা জানিয়েছিলেন, আইনি ফাঁকফোঁকর নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা ছাড়া তাদের আর বিশেষ কোনও কাজ ছিল না। আইনি পথ কার্যকরী না হলে জেল কর্তৃপক্ষের উপর দোষ চাপানোই ছিল তাদের কাজ। এতদিন তাদের কোনও শেষ ইচ্ছা জানা যায়নি, এমনকি শেষ ইচ্ছার কথা জানাতেও চায়নি তারা।
জেলের আধিকারিকরাই বলছেন, ফাঁসির আগে শেষবার পরিজনদের সঙ্গে দেখা করানো হয় আসামিদের। তাঁরা শেষ ইচ্ছার কথাও জানান। কিন্তু এই চার আসামির কথাবার্তায় তেমন কিছু জানা যায়নি। বরং ফাঁসি কীভাবে পিছনো যায় সেই আলোচনাই শোনা গেছে বারবার। জেলের আধিকারিকদের কথায়, অনেক সময়েই মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের মধ্যে তীব্র মানসিক উত্তেজনা দেখা যায়। অনেকে আত্মহত্যাপ্রবণও হয়ে ওঠে। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেখা যায় অনেককে। তবে নির্ভয়ার চার দোষীর মধ্যে তেমন কিছু আঁচ করা যায়নি।
ফাঁসির আগের দিন তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে শেষ ইচ্ছার কথা জেল সুপারকে জানায়। জেলে তাদের কামাইও মন্দ হয়নি। দোষী অক্ষয় ঠাকুর ৬৯ হাজার টাকা রোজগার করেছে গত কয়েক বছরে। পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মার রোজগার ৩৯ হাজার টাকা। তিহাড় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিনয়-পবন-মুকেশের পারিশ্রমিকের টাকা তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে যা ছিল তাও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।