ওয়েব ডেস্ক: শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটা। সাত বছরের অধ্যায় শেষ হল। ফাঁসিকাঠে নির্মম অপরাধের সাজা পেল চার দণ্ডিত—মুকেশ কুমার সিং (৩২), পবন গুপ্ত (২৫), বিনয় শর্মা (২৬) ও অক্ষয় ঠাকুর (৩১)। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের রাতের স্মৃতি মুছবে না, কিন্তু অপরাধীদের যোগ্য শাস্তিতে স্বস্তি পেল নির্ভয়ার পরিবার। হাসি ফুটল দেশবাসীর মুখে।
অপরাধীর সংখ্যা ছয়। রাতের রাজধানীতে চলন্ত বাসে তেইশ বছরের প্যারামেডিক্যাল তরুণীর উপর নৃশংস নির্যাতন চালিয়েছিল ছ’জনেই। তার মধ্যে এক জন রাম সিংয়ের মৃত্যু হয়েছে জেলের ভিতরেই। সেটা ২০১৫ সালে। জেলের ভিতরে রাম সিং আত্মহত্যা করেছে এমন খবরই সামনে এসেছে। বাকি একজন মুক্তি পেয়েছে নাবালক আইনে।
আরও পড়ুন: আস্থা ভোটের আগেই ইস্তফা দিলেন কমল নাথ, ফের ‘পদ্ম’ মধ্যপ্রদেশে!
দক্ষিণ দিল্লির আর কে পুরম এলাকার বস্তির বাসিন্দা ছিল ছয় অভিযুক্ত। দেখে নেওয়া যাক তাদের পরিচিতি সম্পর্কে কিছু তথ্য।
মুকেশ সিং (৩৩): বাসের ক্লিনার মুকেশ সেই রাতে তরুণী ও তাঁর বন্ধুকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটায়। বন্দি অবস্থায় জেলে বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে জানিয়েছিল, রাতে রাস্তায় বেরিয়ে হেনস্থার শিকার হলে মহিলারাই ওই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
অক্ষয় ঠাকুর (৩৩): আদতে বিহারের অওরঙ্গাবাদের বাসিন্দা অক্ষয়ও স্কুলছুট। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে কনিষ্ঠতম। তার স্ত্রী ও ছোট ছেলে রয়েছে। খুনির স্ত্রী পরিচয়ে বাঁচতে না চেয়ে সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেছিলেন তার স্ত্রী।
বিনয় শর্মা (২৭): পেশায় জিম প্রশিক্ষক তরুণীকে গণধর্ষণের রাতে বাস চালাচ্ছিল। পরে মুকেশের হাতে স্টিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে সে-ও ধর্ষণে অংশগ্রহণ করে। অভিযুক্তদের মধ্যে একমাত্র সে-ই স্কুলের পাঠ শেষ করেছিল। অল্পস্বল্প ইংরেজিও সে বলতে পারত।
আরও পড়ুন: করোনার থাবা বলিউডে, করোনায় আক্রান্ত ‘বেবি ডল’ গায়িকা কণিকা কাপুর
পবন গুপ্তা (২৫): ফল বিক্রেতা পবন গণধর্ষণ ও নিগ্রহে অংশগ্রহণ করেছিল। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় সে স্নাতক কোর্সে পড়াশোনা করে।
রাম সিং (৩৩): মুকেশের দাদা রাম সিং সেই বাসের মূল চালক ছিল। তার বিরুদ্ধে আইন ভাঙার পুরনো রেকর্ড ছিল। তরুণীকে ধর্ষণের পরে লোহার রড নিয়ে সে আক্রমণ করে, যার জেরে তাঁর অন্ত্র শরীর থেকে বেরিয়ে আসে।
নাবালক: দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয় এক নাবালকও। তার বিচার হয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের অধীনে। বিচারে তাকে তিন বছর সংস্কারমূলক হোমে রাখার নির্দেশ দেয় বোর্ড। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সাজার মেয়াদ শেষ হলে সে ছাড়া পায়। মুক্তি পাওয়ার পরে প্রথমে দক্ষিণ ভারতে পথের ধারে এক দোকানে রাঁধুনি হিসেবে সে কাজ পায়। তারপর এক নামী হোটেলে পাচক হিসেবে সে বহাল হয়। জানা গিয়েছিল, ১১ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে ২৪০ কিমি দূরে দিল্লিতে এসে সে থাকতে শুরু করে। পরিবারে তার শয্যাশায়ী বাবা, অসুস্থ মা, এক দিদি এবং একাধিক ছোট ভাই-বোন রয়েছে। ওই পরিবার এখনও পুরনো সেই গ্রামেই বসবাস করে।