সৈয়দ আলি মাসুদ
রোজা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু শুরুটা একেবারেই চেনা মনে হল না। কিরকম যেন অপরিচিত। রোজা অত্যন্ত কঠিন অনুশীলন। তাকে সহজ করে নিতে বিষয়টিকে অনেকে সেলিব্রেশনের মোডে নিয়ে যান। দেখে মনে হয় এটিও বুঝি বেশ মজার ব্যাপার। কিন্তু এবার সেটি হওয়ার জো নেই।
১৪শ’ বছরে এই প্রথম রমজানে মুসল্লিবিহীন আল আকসা মসজিদ।পবিত্র রমজান মাসজুড়ে হাজার হাজার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জামাতে নামাজ পড়েন। মাসের শেষের দিকে কখনও মানুষের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়।এবার একজনও মানুষ নেই মসজিদে। নামাজ পড়ার মতো কেউ নেই। প্রাণঘাতী ভাইরাস যেন গোটা দুনিয়ার সমস্ত হিসাব-নিকেশ বদলে দিয়েছে।
এই সময় প্রতিটি মসজিদ গমগম করে। বহু নতুন নামাজিদের দেখা মেলে। মসজিদ কানায় কানায় ভরে ওঠে। মসজিদ থেকে মাইকে ভেসে আসে সুললিত পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত(রিসাইটেশন/আবৃত্তি)। শুনতে তা অপরূপ মনে হয়। অনেকে বলেন, অর্থ না বুঝে কুরআন তিলাওয়াত শুনে কি হবে? যারা একথা বলে, তারা অনেকেই নিজের বাচ্চাকে দিয়ে ‘মম চিত্তে, নিতি নৃত্যে’ গাওয়ায়। লোককে ডেকে তা শোনায় ।তখন তার একবারও মনে হয় না, বাচ্চা তো এসবের কিছুই বোঝে না। কোকিলের কুহু আওয়াজ আমাদের কাছে অর্থহীন ধ্বনি ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু তা বলে কি শুনতে ভাল লাগে না? এমন বহু গান ও কবিতা রয়েছে তার অর্থ সকলের কাছে খুব স্পষ্ট তা নয়। কিন্তু তা শুনতে বড় ভালো লাগে।
আরও পড়ুন: World Book Day: স্মার্টফোনে নয়, এই গ্রাম আজও বুঁদ বইয়ের মায়াজালে
তবে একথা ঠিক এখন কুরআন তিলাওয়াত শোনার হরেক বন্দোবস্ত হয়েছে। ঘরে বসে ইউটিউবে আমরা বিশ্বের বিখ্যাত মানুষদের তিলাওয়াত শুনতে পারি। কিন্তু রমজানে মসজিদ থেকে ভেসে আসা সুরে বাড়তি কিছু থাকে। ধরুন আপনার সন্তানের জন্মদিন ১০ জানুয়ারি। সেদিন সেলিব্রেশনে যে আনন্দ তা কি অন্য যে কোনো দিনে পাওয়া যায়? আনন্দ, কেক পেস্ট্রি কিংবা পায়েসে থাকে না। আনন্দ লুকিয়ে থাকে সন্তানকে আপন করে পাওয়ার ওই দিনটিতে। সেখানেই খুশি। তাই রমজানে মসজিদ থেকে ভেসে আসা সুললিত তেলাওয়াত কানে অন্য পরশ ঢালে।
আরবি ক্যালেন্ডারের বাকি সবকটি মাসের নাম আরবরা রেখেছে। কিন্তু রামাদানের অর্থাৎ রমযানের কথা রয়েছে পবিত্র কুরআনে। রমজ মানে হল পুড়ে শুদ্ধ হওয়া। যেমন লোহাকে পুড়িয়ে তার মরচে ছাড়ানো হয়, এটি তেমনই। অর্থাৎ ফি বছর রমজান আসে যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে আমাদের খাঁটি মানুষ বানাতে। প্রশ্ন উঠতে পারে সত্যিই কি রমজানের পর মানুষ এই কূ-প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়? ভাবছেন তো তাতে তাহলে লাভ কি?
আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করেছেন সে পড়াশুনা শিখবে এই বিশ্বাসেই। কিন্তু স্কুলে ভর্তি করলেই তো দায়িত্ব শেষ হয় না।শুরু হয় মাত্র।তেমনি রোজা কেবল রাখলেই চলে না।রোজায় কূ-প্রবৃত্তি এড়িয়ে চলার যে শপথ আমরা নিয়েছি, তা বছরভর মেনে চললে তবে সাফল্য মিলবে। নিছক ব্যাগ নিয়ে স্কুলে গেলে কি আপনার ছেলে পাশ করে যাবে? তেমনি সারাদিন পানাহার বর্জন করে সন্ধে বেলায় ইফতার করলেই রোজা হয় না। এটি আসলে প্রবৃত্তি পরিহার করে চলার মাধ্যম। এটি একজন বিশ্বাসী মুসলিমের পরিচয়। তবে যিনি এটিকে বাইরের পরিচয় না করে ভিতরের পরিচয় করেছেন, তিনি সাফল্যের দিকে এগোচ্ছেন সন্দেহ নেই।রোজা নিয়ে নিয়মিত আরও বহু কথা লিখব সঙ্গে থাকবেন।আর অবশ্যই বাড়িতে থাকবেন।
আরও পড়ুন: Ramadan 2020: রোজা সম্পর্কে কয়েকটি সহজ কথা