জেনে নিন নাকফুলের ইতিহাস ও ৯ ধরনের ফ্যাশনেবল নোজপিন সম্পর্কে!

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ওয়েব ডেস্ক: এ দেশে নাকফুল শুধুই একটি গয়নার নাম নয়। স্মৃতিমধুর কিছু উদাস সময়েরও নাম। মায়ের নাকে দুপুরের রোদ পড়ে ঝিক করে ওঠা আলোর নাম নাকফুল। কিংবা পথের পাঁচালিতে দুর্গার আনমনে বলে যাওয়া ‘হলুদ বনে বনে, নাকচাবিটি হারিয়ে গেছে, সুখ নেইকো মনে’ ছড়া পড়ে উদাস হয়ে যাওয়া কিশোরীটির ছেলেবেলার নামও নাকফুল। আকৃতি, নকশা বা রং বদলে নাকফুল বারবার ঠাঁই করে নিয়েছে এ দেশের সাধের গয়নার তালিকায়। নতুন চেহারা আর ধারা নিয়ে নাকফুল এখন আবার জনপ্রিয়।

নাক ফোঁড়ানো নেই, তাই পরা হয় না নাকফুল। এ কথাকে বিদায় দেওয়া যায়। এখনকার নাকফুলগুলোর সুবিধাই হলো এটা। বানানোই হচ্ছে এমনভাবে যে কেউ পরতে পারবেন। নকশাগুলোতেও বেশ ভিন্নতা পেয়ে যাবেন। কখনো থাকছে দেশীয় নকশার ছোঁয়া, কখনো বা পেয়ে যাবেন অন্য দেশের নকশার ছোঁয়া। বর্তমানে মেয়েদের ফ্যাশনে নাকফুল খুবই পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে। আজকে আমরা আমাদের নাকফুল সমাচার সাজিয়েছি ইতিহাসের পাতা এবং নাকফুলের বিভিন্ন ধরন আলোকপাত করে।

নাকফুলের ইতিহাস

বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় যে নবম এবং দশম শতাব্দী থেকে জনপ্রিয় হতে শুরু করে নাকফুল। ধারণা করা হয়, নারী প্রথম যে অলঙ্কার ব্যবহার করেছিল সেটি ছিল নাকফুল। কিন্তু ইতিহাসে নাকফুল নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এখানে আমরা কিছু টুকরো ইতিহাস আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।

ইসলামিক ইতিহাসের দিকে নাকফুল নিয়ে আলোকপাত করলে দেখা যায় নাকফুলের চল মুসলিম নারীদের মধ্যে অনেক আগ থেকেই রয়েছে। আবার হিন্দু রীতিতে নাকফুলের ব্যবহারের প্রথার প্রমাণ মেলে তাদের প্রতিমা দেখলেই। হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরাও সেই আদিকাল থেকেই নাকফুল ব্যবহার করে আসছে।

খৃষ্টানদের বাইবেলে লেখা আছে, ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে ছেলের বউ রেবেকাকে স্নেহ এবং ভালবাসার চিহ্ন স্বরূপ নাকফুল উপহার দেন আব্রাহাম। এর কিছুদিন পর থেকেই বেদুইন এবং যাযাবরদের মাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে নাকে গয়না পড়ার রীতি। আবার এও কথিত আছে যে ষোড়শ শতাব্দিতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘলদের আগমনের পরই ওইসব অঞ্চলে মেয়েদের নাক ফোঁড়ানোর রেওয়াজ শুরু হয়। সে সময় সেখানে নারীরা ঢাউস আকৃতির নাকফুল পড়তো, এখন সেখানে এর আকারে এসেছে পরিবর্তন, তবে এখনও কেউ কেউ জয়পুরি বড় নাকফুল পড়তে ভালবাসেন।

ফ্যাশনে নাকফুল বা নোজপিন

একসময় বিবাহিত মেয়েরাই নাকফুল বেশি পড়তো। কিন্তু আজকাল মেয়েদের পছন্দের গয়নার মধ্যে ছোট একটি নাকফুল সবার আগেই স্থান পেয়ে গেছে। নাকফুল মেয়েদের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণী, কর্মজীবী ও সদ্য বিবাহিতা নারীদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নাকফুল। তাই বলাই চলে মেয়েদের ফ্যাশনে নাকফুল খুবই পছন্দনীয়।

Gmail 4

 

 

 

 

 

নাকফুল বা নোজপিনের প্রকারভেদ   

১) ছোট পাথরের নাকফুল:

IMG 5074 1

বিভিন্ন রঙের এক পাথরের নাকফুল মেয়েরা আজকাল পড়ে থাকে। রেগ্যুলার ব্যবহারের জন্য এ ধরনের নাকফুল বেছে নিতে পারেন। শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ, ফতুয়া, টি-শার্ট সবকিছুর সাথেই এক পাথরের ছোট নাকফুল মানানসই। সাধারণত মেয়েরা সাদা রঙ এর পাথরের নাকফুলই বেশি পড়ে থাকে কিন্তু বাজারে এখন বিভিন্ন রঙের পাথরের নাকফুল পাওয়া যাচ্ছে। আপনি চাইলে ড্রেসের সাথে ম্যাচ করে পছন্দের রঙ এর নাকফুলটি সিলেক্ট করে নিতে পারেন।

 

২) নথ:

IMG 5089 1

ফ্যাশনে নাকফুল এর পাশাপাশি পছন্দের তালিকায় নথও এখন অনেক আলোচনায় আছে। গোলাকার, ত্রিকোণ বা চৌকোণ বিভিন্ন ডিজাইনের নথ এসেছে বাজারে। শুধু সোনা বা সোনার মধ্যে পাথর বসানো নথেই রয়েছে বেশ কয়েকটি নকশা। এছাড়াও অ্যান্টিক, রুপা এবং ডায়মন্ডের নথও মেয়েদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

আরও পড়ুন: #SafeHands: নয়া চ্যালেঞ্জ নিলেন দীপিকা-অনুষ্কা, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করলেন ভিডিও

৩) নোলক:

IMG 5079 1

আগে গ্রামাঞ্চলে নোলকের চল অনেক বেশি ছিলো। তবে আজকাল নোলক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসাবে গণ্য হচ্ছে । অনেকে নিজের ফ্যাশনের ট্রেন্ড হিসেবে নোলককে বেছে নিচ্ছেন।

 

৪) ঝুমকো নাকছাবি:

IMG 5114 1

নাকছাবি হচ্ছে এমন একটি ফ্যাশন অ্যাকসেসরি, যা চট করে পাল্টে দিতে পারে আপনার লুকটা। নাকছাবি খুবই ফ্যাশনেবল এবং আকর্ষনীয় একটি লুক নিয়ে আসে। এটি সোনালী রঙ এর হলে সবচেয়ে ভালো। সোনার তৈরি কিংবা ইমিটেশন ও হতে পারে। তবে ট্র্যাডিশনাল সাজ, শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে সোনার নাকছাবিই বেশি মানাবে।

 

৫) টিপ নাকফুল:

IMG 5106 1

নাকফুল পড়তে সব মেয়েরাই পছন্দ করে। বিশেষ করে ট্র্যাডিশনাল সাজ দিলে নাকফুল না পড়লে সাজটা যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। কিন্তু নাক ফোঁড়াতে অনেকেই পছন্দ করে না। আবার অনেকে ব্যথা পাওয়ার ভয়েও নাক ফোঁড়ায় না। কিন্তু তাই বলে কি নাকফুল পড়বে না? তা কি হয়? আজকাল বাজারে অনেক ধরনের টিপ নাকফুল পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েরা নাক না ফোঁড়ালেও এখন খুব সহজেই নিজের নাকফুল পড়ার শখ পূরণ করে নিচ্ছে।

আরও পড়ুন: Coronavirus: জেনে নিন প্রকোপ এড়াতে কী দিয়ে ও কীভাবে হাত ধোবেন?

৬) মারাঠি নথ:

IMG 5140 1

এই নথটি মূলত মারাঠি মেয়েরা পড়লেও আজকাল ফ্যাশন জগতে এটি খুব ট্রেন্ডি। সাধারণ সোনা মুক্তা ও লাল-সবুজ পাথর দিয়ে তৈরি হয় এই মারাঠি নথ। এককালে নাক ফোঁড়ানো না থাকলে এই নথ পড়াটাই সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন নকল মারাঠি নথও পাওয়া যায়। ফলে সাজতে চাইলে যখন খুশি পরতে পারেন এরকম নথ।

 

৭) নাকপাশা:

IMG 5094 1

এটি একটু বড় আকারের হয়ে থাকে। সাধারণত সোনালী রঙের নাকপাশাই মানানসই। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের নাকপাশা আজকাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যাদের নাক এবং মুখ একটু বড় তাদের এই ধরনের পাশাগুলো বেশি মানাবে।মুখ ছোট হলে এই নাকপাশাগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।

 

৮) ব্রাইডাল নথ:

IMG 5145 1

বিয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গয়না হচ্ছে ব্রাইডাল নথ। কনের নাকে একবিন্দু ঝকমকে নথ চারদিকের আলো আরও বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের নথ ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ওভারসাইজড নথের চাহিদা এখন একটু বেশি। হেভি নথ না পরতে চাইলে ছোট নথেও নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। তবে মুখের আকার অনুযায়ী নথ সিলেক্ট করাই সবচেয়ে ভালো।

 

৯) ট্রাইবাল নথ:

IMG 5121 1

এ ধরনের নথগুলো মাল্টি কালারের পাথর এবং পার্ল দিয়ে তৈরি হয়। অনেক কালারফুল হয় এই ট্রাইবাল নথ। শাড়ি, লেহেঙ্গা ইত্যাদি যেকোন আউটফিটের সাথে মানানসই এইসব নথ। ট্রাইবাল নথ আপনাকে খুবই দারুণ একটা লুক এনে দিবে।

 

নাকফুল নিয়ে সবচেয়ে সত্যি কথাটা সম্ভবত এই যে সবার নাকে সব নাকফুল মানায় না। নাক ও মুখের আকৃতির সঙ্গে নাকফুলের সমীকরণ মেলাতে পারলেই আপনার লুক বদলানো সম্ভব। এই যেমন মুখ ছোট হলে নাকফুল ছোট হবে, মুখ বড় হলে নাকফুলও বড়। সমীকরণ না মিললেও সমস্যা নেই, শখ তো শখই। মেকআপ আর পোশাকের জ্যামিতিতেও কিন্তু নাকফুল ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest