Site icon The News Nest

লকডাউন কি হবে ? গুজবের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত

lockdown return

NEW DELHI, INDIA - MARCH 22: Indian policemen push barricades to place them in the center of a a road leading to historic India Gate, during a one-day nationwide Janata (civil) curfew imposed as a preventive measure against the COVID-19 on March 22, 2020 in New Delhi, India. Death toll due to coronavirus in India reached seven on Sunday with three more fatalities as the country observed a "janta curfew" or public lockdown on the appeal of Prime Minister Narendara Modi. Besides placing under lockdown till March 31st, 75 districts with confirmed coronavirus cases , the government also decided to shut down train, metro and inter-state services to curb the spread of the global pandemic in India. (Photo by Yawar Nazir/Getty Images)

গুজব ও আতঙ্কের সম্পর্ক খুবই গভীর। আতঙ্ক গুজবে উৎসাহ প্রদান করে। ঠিক তেমনই গুজব মিথ্যা আতঙ্ককে বাজারে নিয়ে আসে। এটা চিরকালীন। সোশ্যাল সাইট এই গুজব ছড়ানোর পরিধিকে আরও ব্যাপ্ত করেছে সন্দেহ নেই। আসলে আমরা যা করি , পরে তার ফল ভুগতে হয় আমাদেরই।

মিথ্যা, কুৎসা, অপপ্রচারের যে রূপালী সংস্কৃতি আমাদের রাজনেতারা তৈরী করেছেন তাতে আমারও জড়িত। আম আদমি বলে আমরা ধোয়া তুলসী পাতা নয়। এই নেতাদের মিথ্যাচার, কুৎসা, আমরা রসিয়ে রসিয়ে সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করে ও শেয়ার করে মজা পাই। যদি বুঝতে পারি কথাটি সোলো আনাই মিথ্যা তাও শেয়ার করার মহান দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে আনি না। অথচ আমরাই আবার সোশ্যাল সাইটের গুজব ছড়ানো নিয়ে রাগ করি।

আরও পড়ুন : অশোকনগর, মঙ্গলকোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ, খারিজ কমিশনের

গুজব পাকাপাকি ভয় দেখাতে পারে না, তার জীবন কিছুকালের। আম আদমিকে ভয় ধরাতে পারলে তবে সেই গুজবের গুরুত্ব বাড়ে। লোকে বেশি করে লাইক ও শেয়ার করে। পলকে তা পৌঁছে যায় কোটি কোটি মানুষের কাছে। তবে এদেশে গুজবের এমন শ্রীবৃদ্ধিতে রাজনেতা ও রাষ্ট্রনেতারদের ভূমিকা সবথেকে বেশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথায় ধরুন না। উনি নিজের চা বিক্রি সম্পর্কে যে গল্পের অবতারণা করেছিলেন, তা যে নিছকই গপ্পো, সে কথা বুঝতে আজ আর কারও বাকি নেই। সিরিয়াস ভাষণে উনি নিয়মিত অসত্য ও অর্ধসত্য বলে থাকেন।

নিজের দল ও সরকারের ব্যর্থতার দায় নেহরুর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেন। নিজের বিনোদনমূলক ভাষণ ভঙ্গি এবং মিথ্যা আশ্রিত কটাক্ষ দিয়ে তিনি বিরোধী নেতাদের মূলত অবজ্ঞা করেন। তিনি ভোট প্রচারের জন্য যেকোনও  মিথ্যাকে ‘জায়েজ’ মনে করেন। তাঁর অসত্য ও অর্ধসত্যের ডালি সাজানো। বাংলাদেশের মাটিতে গিয়ে তিনি নিজেকে বেমালুম ‘মুক্তি যোদ্ধা’ বলে দাবি করে এলেন। ও বললেন তাঁর জন্য তাঁকে নাকি জেলও খাটতে হয়েছিল। গল্পের গোমাতার এমন বৃক্ষে আরোহণ করাতে তাঁর মোকাবিলায় সকলেই ফেল। ডমরুধর বেঁচে থাকলে হয়ত পাঙ্গা নিয়ে দেখতে পারতেন।

যে অসত্য বচন তাঁর মুখ নিঃসৃত হয়, পরে সেগুলিই গুজব হয়ে সোশ্যাল সাইটের শোভা বর্ধন করে। ভক্তদের উৎসাহিত করে। মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিংয়ের বিরুদ্ধে সোনিয়ার প্রতি আনুগত্যের অভিযোগ ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদটির মহিমা এমন করে তিনি গুজবময় করে তোলেননি। তিনি কংগ্রেস নেতা হয়ে কথা বলেছেন খুব কম। যতদিন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু যিনি প্রচারক হিসাবে গর্বিত। তিনি তো খানিকটা বেশি কথা বলবেনই। আর বেশি কথা মানেই বেশি অসত্য। মোদী জমানায় গুজব প্রচারে অবশ্য সোশ্যাল সাইটকেও বহু সময় টেক্কা দিয়েছে গদি মিডিয়া। নোটবন্দির সময় বেমালুম তারা প্রচার করেছিল নতুন কারেন্সিতে জিপিএস সিস্টেম আছে। এই টাকা আর জাল করা যাবে না। সন্ত্রাসবাদীরা ধরা পরে যাবে। দিনের পর দিন গুজব ছড়িয়েছিল কর্পোরেট চ্যানেলগুলি। মোদীকে মানবের মধ্যে অতিমানব করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিল তারা। এর পিছনে পুঁজিপতি সংস্থাগুলির প্ৰত্যক্ষ ভূমিকা ঠিক কি তা স্পষ্ট না হলেও , যুক্তির খাতিরে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

দুর্বল শরীরে যেমন যেকোনো রোগ দ্রুত বাসা বাঁধে , তেমন দেশের বাতাবরণ যখন অস্থির হয়ে ওঠে তখন গুজব সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে। মানুষ তখন গুজবে আতঙ্কিত হয় আরও বেশি করে। গুজব ও আতঙ্কেই মানুষ বাঁচে। মরে। বর্তমানে করোনা নিয়েও মানুষের মনে নানা ধোঁয়াশা। গরিব মানুষ করোনা ভয় পায় না। তাদের ভীতি লকডাউন নিয়ে। রোদে পড়া লোকেদের করোনা হচ্ছে না। মেডিক্যাল জার্নাল যাই বলুক না কেন, বাস্তবতা সেটাই। তারা খেয়ে পরে বাঁচতে চাইছে। লকডাউন তাদের সবার জন্য করোনার থেকে অনেকে বেশি প্রাণঘাতী। কিন্তু বাতাসে গুজব। ফোনে দাপট গুজবের। সেখানেই অনেকেই বলছেন ভোটের পরে ফের লকডাউন। আর তাতেই আতঙ্কে অস্থির হয়ে রয়েছেন অনেকেই। এই আতঙ্ক কাটবে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী বহুবার এমন আতঙ্ক দিয়ে দেশবাসীর পরীক্ষা নিয়েছেন। আতঙ্ক এবং গুজবের যুগলবন্দী মোদী জমানায় সবথেকে বেশি সফল। তাই কাউকে একথা বলাও যাচ্ছে না যে আতঙ্কিত হবেন না। কারণ রাত ৮ টার পর মোদী কি বচন দেবেন কেউ জানে না। তাই এখন হর হর গুজব, ঘর ঘর গুজব।

আরও পড়ুন : দৈনিক সংক্রমণে বিশ্ব রেকর্ড ভারতের, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩ লক্ষের বেশি

 

Exit mobile version