Site icon The News Nest

আজ বিশ্ব মানবিক দিবস ? দেখে নিন ঠিক কত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মানবতা?

world human

আজ ১৯ আগস্ট। ২০০৩ সালের এই দিনে ইরাকের বাগদাদে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ ২২ মানবাধিকার কর্মী আততায়ীর হাতে নিহত হন।

এর পাঁচ বছর পর জাতিসংঘ এই দিনটিকে বিশ্ব মানবিক দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন সংকটের শিকার সাধারণ মানুষ ও তাদের সাহায্যে নিয়োজিত বিভিন্ন মানবিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সম্মানকে সংহত করা।

এ বছর দিনটির প্রতিপাদ্য বিষয় একটু ভিন্নতর- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিপদাপন্ন মানুষের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের বিপদাপন্নতা বাড়ছে ক্রমাগত।

এতে একদিকে অসংখ্য মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও জীবিকায়নের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে; অপরদিকে মানবিক কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। দিনটিতে বিশ্বনেতাদের কার্যকর জলবায়ু পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) পুনঃউপস্থাপন করা হবে।

বিশ্বজুড়ে মানবিক সংকট কখনো থেমে থাকছে না। যুদ্ধবিগ্রহ আর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের নিত্যসঙ্গী। ঠিক এ মূহূর্তে পৃথিবীজুড়ে দেশে দেশে কত যে যুদ্ধ- হয় গৃহযুদ্ধ, না হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ- লেগে আছে, এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। বর্তমান আফগান পরিস্থিতি ও সেখানকার মানবিক বিপর্যয় এখন দক্ষিণ এশিয়ায় তথা সারা বিশ্বে বহুল আলোচিত ঘটনা।

সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে চীন ও ভারতের বন্যা। আর গেল শনিবার হাইতিতে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প মানবিক সংকটের আরেক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাংলাদেশেও ২০১৭ সাল থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও প্রতি বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, পাহাড় ধস ইত্যাদি লেগেই আছে। ২০২০-এর শুরুতে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি তো যেন এক অপ্রতিরোধ্য মানবিক সংকট হয়ে আছে।

এসব সংকটে সরকার এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবিক সাহায্য নিয়ে আসে। বাংলাদেশে একসময় সরকারের পাশাপাশি মূলত রেড ক্রিসেন্টই মানবিক সাহায্যের জন্য পরিচিত ছিল। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পরে দেখা গেছে, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশীয় এনজিও এবং রেড ক্রিসেন্টের পাশাপাশি বিত্তশালীরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

সাম্প্রতিককালে প্রায় সব এনজিওই তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা প্রশংসনীয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো এসব দেশীয় এনজিওকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে থাকে। আশার কথা, এ ধরনের সাহায্য সংস্থার সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। একমাত্র রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে শতাধিক সংস্থা মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আরও পড়ুন:বিশ্বাস হারাবেন না, এখনও তুষাররা আছে …

এক সময়ে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় সুবিধাভোগীদের কাছে সাহায্য সংস্থার দায়বদ্ধতার বিষয়টি গুরুত্ব পেত না। মনে করা হতো, মানবিক সাহায্য অনেকটা অনুগ্রহ প্রদর্শন, অসহায় বা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা এসব সাহায্য দিয়ে ‘ধন্য করছি’। যদিও বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব নথিতে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে অনেক নীতির কথাই উল্লেখ থাকে; তবে খুব কম ক্ষেত্রেই বাস্তবে এসব নীতি মেনে চলতে দেখা গেছে।

১৯৯৪ সালে রেড ক্রস, অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ ৮টি আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবিক সহায়তা বিতরণের সময় ১০টি আচরণবিধি (সিওসি) নির্ধারণ করে। এই সিওসি’তে অন্তর্ভুক্ত উল্লেখযোগ্য বিধির মধ্যে রয়েছে- দয়া নয়, সাহায্য পাওয়া মানুষের অধিকার; সাহায্য গ্রহণকারীকে দয়ার পাত্র হিসাবে গণ্য না করে সম্মানীয় গণ্য করা; পরিচয় নয়, বরং ক্ষতি বা দুর্ভোগের ব্যাপকতার ভিত্তিতে সাহায্য বিবেচনা করা; সাহায্য বিতরণের সময় স্থানীয় কৃষ্টি-প্রথাকে সম্মান প্রদর্শন; কোনো গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সাহায্য প্রদান করা যাবে না এবং সর্বোপরি স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ বিপদাপন্নতা লাঘবের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা। ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৪৭টি সংস্থা এই সিওসিতে স্বাক্ষর করেছে।

আরও পড়ুন: শোনো কমরেড শোনো…এই সিপিমের ইতিকথা !

Exit mobile version