মমতা বাংলার মহিলাদের এমন ভোটমুখী করেছেন যা গোটা দেশে বিস্ময়

গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে অনেকে পরে। যদিও তা পন্থা হিসাবে খুব ভালো একথা হলফ করে বলা যায় না। বলা যেতে পারে এর বিকল্প কোনও সার্বজনীন পন্থা আজ পর্যন্ত মানুষের কাছে নেই।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সৈয়দ আলি মাসুদ

গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে অনেকে পরে। যদিও তা পন্থা হিসাবে খুব ভালো একথা হলফ করে বলা যায় না। বলা যেতে পারে এর বিকল্প কোনও সার্বজনীন পন্থা আজ পর্যন্ত মানুষের কাছে নেই। তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে শিবরাত্রির সলতের মত গণতান্ত্রিক অধিকার বোধ অনেকটাই টিম টিম করে জেগে রয়েছে নিছকই ভোটদানে।

গণতন্ত্রের উৎসব বলে এই ভোটদানকেই গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকগণ উপভোগ করেন। তবে তাতেও হানাহানি, হিংসা কম নেই। এদেশে গণতন্ত্র কতটা মজুবত তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নিঃসন্দেহ রয়েছে। তবে একথা সত্য যে মহিলাদের মধ্যে বিশেষ করে বাংলার মেয়েদের মধ্যে ভোট চেতনা বেড়েছে। তারা ভোট দিতে গিয়ে আর পুরুষের মুখাপেক্ষী হচ্ছে না। নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে পারছে।

আরও পড়ুন : Sitalkuchi Firing: ২ অফিসার-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৬ জন ও মাথাভাঙার এসআই-কে তলব সিআইডির

মমতা বিরোধীরা হাজার রাগ করলেও বাংলায় এর কৃতিত্বের একমাত্র দাবিদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা দেশের মধ্যে বাংলায় পুরুষদের থেকে মহিলা ভোট বেশি পড়েছে। এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় ব্যাপার। আগামী দিনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চর্চার বিষয়।
ইংল্যান্ডে তখন ভোটাধিকার হয়ে গিয়েছে। ভোট দিচ্ছিলেন পুরুষরা।

মেয়েদের ভোটাধিকার তখনও স্বীকৃত হয়নি। বলা হত মেয়েরা কেবল পুরুষের কথা মত ভোট দেন। তাদের নিজেদের কোনও মতামত নেই। ফলে একজন নারীর ভোটাধিকার স্বীকার করে নেওয়ার অর্থ হল, পুরুষের আরও একটি ভোট। কারণ মহিলারা পুরুষদের মতের বাইরে গিয়ে ভোট দিতে পারে না। সে পরিস্থিতি যে কেটে গিয়েছে তা নয়। কিন্তু বাংলা নতুন পথ দেখাল।

বাংলার মেয়েরা গোটা দেশকে বোঝাল, নিজের স্বার্থে ভোট দিতে হবে। পুরুষের কথা শুনে নয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মেয়েদের মধ্যে এই শক্তি জাগিয়ে তুলেছেন । তারা ভোট দানের ব্যাপারে পুরুষের মতামতকে বেদবাক্য ভাবা বন্ধ করে দিয়েছে। সে কারণেই পুরুষের ভোট সংখ্যাকে এমন করে টপকাতে পেরেছে বাংলার মহিলারা।মমতার বিভিন্ন প্রকল্প হয়েছে মেয়েদের সামনে রেখে। কন্যাশ্রী,রূপশ্রী,এমনকি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প তৈরী হয়েছে মেয়েদের নাম দিয়ে।

এই প্রকল্পের সুবিধা সংসারের ঢুকতে পারে কেবল একজন মেয়ের কিংবা মহিলার হাত ধরেই। সব মহিলা মুখ্যমন্ত্রী যে এমন করে ভাবতে পারেন তা নয়। জয়ললিতা বহু বছর তামিলনাড়ুতে রাজ্ করেছিলেন। মায়াবতী ইউপিতে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু সে রাজ্যের মেয়েরা তাদের শাসনের সঙ্গে নিজেদের এক করতে পারেনি। রাজনৈতিক পালাবদল সেখানেও হয়েছিল, করুণানিধিকে হঠিয়ে আম্মা এসেছিলেন, কিন্তু মেয়েদের মনরাজ্যে এমন করে প্রভাব বিস্তার তিনি করতে পারেননি।

মায়াবতী ইউপি জুড়ে হাতি তৈরিতে যতটা ব্যাস্ত ছিলেন, তার সিকি পরিমাণ চেষ্টা রাজ্যের মেয়েদের জন্য করেননি। মেয়েদের হাত ধরেই সমাজ বদলায়। চেতনা বাহিত হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, বিদ্বেষও। গাছের গোড়ায় জল না ঢেলে কেবল আগায় জল ঢালা খুব একটা বুদ্ধির কথা নয়।

আগায় জল ঢাললে যে সমুদয় বিফলে যাবে তা বলা যায় না। তখন অপেক্ষা করতে হয়, আগার জল কখন কান্ড বেয়ে নেমে মাটিতে যাবে। মেয়েদের কথা ভেবে কোনও সরকার প্রকল্প রূপায়ন করলে জল সরাসরি মাটিতে মিশে যায়। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা বাড়ে। গণতন্ত্রে অংশগ্রগণের ইচ্ছা বাড়ে। মমতার তৃণমূল বঙ্গনারীদের মধ্যে সে ইচ্ছা পুঁতে দিতে পেরেছেন।

ভোটার সংখ্যার অনুপাতে ,পশ্চিমবঙ্গের ৭.৩২ কোটি ভোটারের মধ্যে ৩.৭৩ কোটি পুরুষ ও ৩.৫৯ কোটি নারী৷ তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না৷ অর্থাৎ প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ নারী ভোটার। তাঁরা ভোটে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও মহিলা মতদানকারীর সংখ্যা প্রতি ভোটেই বাড়ে। তাই যে কোনও পার্টিই বিধান সভা দখল করতে চাইলে মহিলাদের সমর্থন পেতে তৎপর হবে।

কেউই এ ব্যাপারে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। কিন্তু দিদির দল পেরেছে। কারণ দিদি কেবল ভোটের আগে মেয়েদের ভোট হাতাতে আসেননি। তিনি বিভিন্ন প্রকল্প দিয়ে মেয়েদের ভোট পেতে চেয়েছেন। তাঁর শাসনকে বাংলার মেয়েদের শাসন হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সেখানেই তিনি সফল। রাজনীতি জিনিসটা কেবল ফাটকাবাজি নয়। কয়েকদিন জমিয়ে প্রচার করলে মানুষের মন পাওয়া যায় না। সেই ভুলটাই মোদী করে বসেছিলেন।

লোক তাঁকে এবং তাঁর কপ্টার দেখতে ভিড় করেছিল। আর তাতেই তিনি উৎসাহী হয়ে পড়ছিলেন। এই বাংলায় তার দলের লোকেদের মানুষের সঙ্গে তেমন কোনও সংযোগই ছিলনা। তারা কেবল বিদ্বেষের ”পাইরেটেড’ রাজনীতি করেছে। ইউপির রাজনীতিকে কপি করার চেষ্টা করেছে। মানুষের কথা বলেনি।

লাগাতার ‘ভাইপো ভাইপো’ বলে চিৎকার করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার মানুষের মনে হয়েছে, এরা বিদ্বেষ কিংবা হিংসা ফেরি করতে পারে। কিন্তু জনকল্যাণমুখী প্রকল্প দেবার ক্ষমতা ওদের নেই। মেয়েদের কাছে আলাদা করে পৌঁছানোর কোনও তাগিদ অনুভব করেননি এই মনুবাদী দলটি। ফলে অবলীলায় তাদের গোল দিয়েছেন বাংলার মেয়ে মমতা।

বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়, এই কথার মধ্যে বাংলার মেয়েরা নিছক আবেগ দেখেনি। তারা এর মধ্যে কন্যাশ্রী দেখেছে, রূপশ্রী দেখেছে, স্বাস্থ্যসাথী দেখেছে। অন্যদিকে বিজেপি এলে যে এসব বন্ধ হয়ে যাবে, কেন্দ্রের কুর্সিতে বসা মোদীজিকে দেখে তাদের অনেকের মনেই সেই সিঁদুরে মেঘ উঁকি দিয়েছে। যার পরিণতি দিদির হ্যাটট্রিক।

আরও পড়ুন : ব্রাত্য ‘আদি’ বিধায়ক মনোজ টিগ্গা, বিরোধী দলনেতা হলেন শুভেন্দুই

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest