ওলাওঠা সেকেলে, এখন ট্রেন্ডিং গালাগালি হল ‘করোনা’

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সৈয়দ আলি মাসুদ

গ্রামে বেশ কিছু গালাগালি ছিল। সেগুলিকে খিস্তি বলা যাবে না কখনই। এই গালাগালির মধ্যে অন্যতম ছিল ওলাওটো এবং আঁটকুড়ে। ওলাওটো ছিল লিঙ্গ নির্বিশেষে একটি গালাগালি আর আঁটকুড়ে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। ছেলেবেলায় এই দুটিকে খুবই অশ্লীল শব্দ মনে করতাম। কৈশোরে শরৎ বাবুর লেখায় জানলাম ওলাওটো, ওরফে ওলাওঠা আসলে ছিল একটি ভয়াবহ সংক্রমিত অসুখের নাম। বমি ও পায়খানা হয়ে রোগী মরে যেত বিনা চিকিৎসাতেই। ওষুধ না থাকায় গ্রামের পর গ্রাম সাবাড় করে দিত এই অসুখ। মুমূর্ষু রোগীকে ফেলে বহু সময় প্রাণ ভয়ে পালাতো নিকট জনেরাও। আসলে সকলেই প্রাণে বাঁচতে চাইত। তবে এই বেঁচে যাওয়ার যন্ত্রনা অনেকই বয়ে বেড়াত জীবনভর। অসুখটি দুরারোগ্য ছিল বলেই পরে তা গালাগালিতে পরিণত হয়। আটকুঁড়ো অবশ্য তেমন নয়। সন্তানহীনা মহিলাকে মানসিকভাবে আঘাত করার জন্য এই গালি ব্যবহার করা হত। সন্তান না হওয়ার দায় চিরদিন আমাদের সমাজ মহিলাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। সে কারণেই সন্তানের জন্য পুরুষরা বারবার বিবাহ করেছে। আর মন্দিরে ও মাজারে ছুটে বেড়িয়েছে মহিলারা। বহু সময় এই প্রতিষ্ঠান গুলিতে গিয়ে অলৌকিক নয় লৌকিক উপায়েই তাদের সন্তান হয়েছে। যা কোনকালে তারা প্রকাশ করতে পারেনি। বাপের পরিচয় পেতে অবশ্য সন্তানের কোনো অসুবিধা হয়নি।

আরও পড়ুন: আজ ইস্টার! জেনে নিন দিনটির নেপথ্যে থাকা আসল কাহিনি

প্রথমটি ছিল অসুখ, দ্বিতীয়টি ছিল মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি।আজকের দিনে সেই অর্থে হাড়হিম করা গালাগালির নাম করোনা। তাবড় বিশ্বে কোথাও এই ভাইরাস মোকাবিলার ওষুধ নেই । নিজেদের গৃহবন্দী রেখে সব দেশ এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে চাইছে। চিন , ইরান, ইটালি , ফ্রান্স , স্পেনে তান্ডব নৃত্য করে এখন করোনা সবথেকে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যারা কথাই কথাই গোটা বিশ্বকে চমকায় তারা করোনার আতঙ্কে অস্থির। কোনও ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা পারমানবিক বোমা দিয়ে এর মোকাবিলা সম্ভব নয়। ফলে পাকা চুল ছেঁড়া ছাড়া ট্রাম্পের হাতে বর্তমানে কিছু নেই।

এই মুহূর্তে শক্তিধর দেশগুলিকে বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। আসলে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মত দেশের জনগণ বরাবরই টিকে রয়েছে তাদের ইমিউন দিয়ে। চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে নয়। এখানে ফি বছর কত মানুষ যে ম্যালেরিয়া, চিকেনগুনিয়া, নিউমোনিয়া ও পেটখারাপ হয়ে মারা যায় তার হিসেবে নেই। ভারত, এবং একদা ভারতের অংশ এই দেশগুলির সরকারি হাসপাতালে ঢুঁ মারলে দেখতে পাবেন একই চেনা ছবি। ইমার্জেন্সির বাইরে বেডের অভাবে মেঝেতে রোগী ছটফট করছে যন্ত্রনায়। এক দৃশ্য দেখতে দেখতে সংবেদনহীন হয়ে পড়েছেন চিকিৎসকরা। অভাবী মা যেমন সন্তান খিদেয় কাঁদলে বিরিক্ত হন, এদেশের সরকারি ডাক্তাররাও তেমন।

আরও পড়ুন: করোনার জেরে ‘রং ফিকে’ হালখাতার, ম্লান এবারের বাংলা নববর্ষ

বড় তুচ্ছ কারণে এদেশের লোককে মরতে হয়। বাড়ির ফ্রিজে মাংস রাখার জন্য মরতে হয়। ভিনধর্মে প্রেম করে মরতে হয়। ভিন জাতে বিয়ে করে মরতে হয়। মন্দিরে ভগবানের আশীষ পেতে গিয়ে মরতে হয়। গার্হস্থ্য হিংসায় মরতে হয়। রাজনৈতিক নেতাদের তৈরী করা দাঙ্গার চিত্রনাট্যে মরতে হয়। চাষ করার অপরাধে কৃষককে মরতে হয় ঋণের দায়ে। যাদের পরিবারের লোকের মৃত্যু হয়েছে এইভাবে সেই পরিবারগুলির মনে কীভাবে করোনার ভয় ঢোকানো যাবে বলতে পারেন?

কেবল ভারত নয়, একই ডিএনএ বয়ে বেড়ানো পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অবস্থায় একই। স্বাধীনতার পর কেবল এই দেশগুলিতে বেড়েছে বেড়েছে ধন বৈষম্য। একদল লোক কেবল ধনী হয়ে সরকার চালাচ্ছে। তারা দেশে চিকিৎসা করায় না। এই সব দেশগুলিতে কিছু বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। যেখানে চিকিৎসা করানো ধনীদের পক্ষেই সম্ভব। এদেশের মন্ত্রী আমলারাও অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন না। আর যদি সরকারি হাসপাতালে ভর্তিও হন, তাহলে তার জন্য ভিআইপি চিকিৎসা। আম রোগী কল্পনাও করতে পারে না এখানেও এমন চিকিৎসা মেলে।

আরও পড়ুন: জেনে নিন করোনা মুক্ত ৪ দেশ যেভাবে ফিরছে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে

তবে হাসপাতাল বাঁচাতে পারে না। মানুষ বেঁচে যায় তারা ইমিউন সিস্টেমে। স্বাধীন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আমজনতার সেটাই সম্পদ। হয়তো হাসপাতালের ইমার্জেন্সির বাইরে শুয়ে শুয়ে এই মানুষগুলো নিজেদের ইমিউন বাড়িয়ে নিচ্ছেন। কে জানে আগামী দিনে তাদের হয়তো করোনা হবে না। আফ্রিকার বেশি কিছু আদিম জনগোষ্ঠী রয়েছে , যাদের ম্যালেরিয়া হয় না। দীর্ঘদিন ধরে এরা ম্যালেরিয়ায় মরেছে। এক সময়ে তাদের দেহে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। এখন আর তাদের ম্যালেরিয়া হয় না।

coro660 1

করোনা আসলে জাতি, ধর্ম বর্ণ , ধনী , দরিদ্র নির্বিশেষে হামলা করেছে। করোনা পোশাক দেখে টার্গেট করেনি। দেশ দেখেও নিশানা বানাইনি। বরং যারা আর্থিক ও সমর শক্তিতে যত প্রবল করোনার দাপট যেন সেখানেই বেশি। সে কারণেই তো সেলেবদের সাহায্য করার এমন হিড়িক। তা না হলে এরা ঘাম ফোঁড়া সারাতে বিদেশ যায়। এদেশের সরকারি হাসপাতাল নিয়ে তাদের কোন ইন্টারেস্ট নেই। কিন্তু এখন কোথায় যাবে বাবারা ! গরিব মানুষদের হেবি টেম্পো! একসময় এরা ওলাওঠা ঠেঙিয়ে এসেছে। করোনাও হজম করে ফেলবে। তাছাড়া এটা থেকে না হয় পরিত্রান পেল। কিন্তু সংঘটিত দাঙ্গা, ঋণের ফাঁদ, অপুষ্টি, অশিক্ষা, বিদ্বেষ থেকে এদের বাঁচাবে কে? ছাদে দাঁড়িয়ে থালা বাজিয়ে কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে তা হবে না। ওরা ইমার্জেন্সির বাইরে মেঝেয় ছটফট করতে করতেই সুস্থ হয়ে যাবে। প্রকৃতি এই সুবিচার না করলে এরা এতদিনে শেষ হয়ে যেত। আর এখন ওদের কথাতেই বেঁচে থাকবে করোনা। ‘তোর করোনা হোক’- এই গালাগাল দিয়ে হাসতে হাসতে নিজেদের মধ্যে ঠিক ইমিউন তৈরি করে ফেলবে এদেশের খেতে না পাওয়া মানুষজন।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন: অনন্যা! ভিনরাজ্যে আটকে ছেলে, ১৪০০ কিমি স্কুটি চালিয়ে ঘরে ফেরালেন মা

Gmail
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest