Site icon The News Nest

গদি হারাচ্ছেন ট্রাম্প, জেল হেফাজতে অর্ণব, মন খারাপ আরএসএস প্রেমীদের

modi trump

সৈয়দ আলি মাসুদ

ট্রাম্প হারছেন। নিশ্চিত। আর চান্স নেই। শুরু করেছেন ভুল বকতে। অবশ্য ওটাই ওঁর নিজস্ব পরিচয়। ভুল বকে তিনি নিজেকে প্রতিদিন জনগণের চর্চায় রেখেছিলেন। নিয়ম করে মার্কিন সম্মান ও ঐতিহ্যের ১২ টা বাজিয়েছেন তিনি। দেশ চুলোয় যাক। তিনি ব্যস্ত থেকেছেন নিজের প্রচারে। কুর্সিতে বসার আগেই তিনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করেন। অন্য বহু রাষ্ট্রনেতার মত সন্ত্রাস ও ইসলামকে সমার্থক করে হুঙ্কার ছাড়েন। তাতে প্রাথমিকভাবে খানিকটা জনসমর্থনও মিলেছিল। কিন্তু দেশটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বিদ্বেষ ফেরি করে টিকে থাকা যায় না।

ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন তাঁর দেশটা যদি ভারত হত, তাহলে কি সুবিধাই না হত! তাঁর পিছনে যদি আরএসএসের মত একটি সংগঠন থাকত কি মজায় না হত! লোকে কাজ চাইলে মন্দিরের কথা বলা যেত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেওয়া যেত। ‘গুলি মারো শালোকো’ বলা যেত। ‘জয় শ্রী রাম’ আর ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে বিরোধীদের সাড়ে বারোটা বাজানো যেত। সেক্ষেত্রে ‘বন্ধু মোদী’ ভাগ্যবান। তার দেশের লোক তাঁর প্রতি কত সহানুভূতি প্রবণ। কত ভোলা !

আরও পড়ুন : করোনা সামলাতে ব্যর্থ ট্রাম্প, ভোটযুদ্ধে বন্ধু হোঁচট খেতেই সুর বদল নাড্ডার

ডিমনিটাইজেশনে কোনো উপকার হবে না গোটা দেশ জানত। তবুও তারা মোদির পাশে দাঁড়ায়। এতে নাকি পাকিস্তান জব্দ হবে। আর যায় কোথা । আমাদের ক্ষতি হোক। পাকিস্তান জব্দ হবে শুনেই গোটা দেশের আড্রিনালিন ক্ষরণ হতে শুরু করে। তাঁর দেশ এমন হলে কি ভালোই না হত ! কুর্সি থেকে কেউ হঠাতে পারত না।

সাংবাদিক সম্মেলন করতে হত না। কারও প্রশ্নের জবাব দিতে হত না। কেবল ‘মন কি বাত’ করলেই হত। এই মার্কিন মুলুকের সাংবাদিকগুলো কি নিজেদের ভালোও বুঝবে না ? আরে বাবা সরকারের সঙ্গে থাকলে তো তোদেরই সুবিধা। তা না। কেবল ঘ্যানর ঘ্যানর। প্যানোর প্যানোর। কই মোদিকে তো কেউ প্রশ্ন করে না। তাঁকে তো উত্তর দিতে হয় না। কত ‘মডেস্ট’ সাংবাদিক সেখানে। পাছে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন শুনে  কষ্ট পান, তাই তারা বিরোধীদের প্রশ্ন করে। তাদের দায়ী করে। এটা যদি এখানকার এই আহাম্মকগুলো করত, তাহলে বাইডেন কী জায়গায় পেত ?

শাখাপ্রেমীরা হয়ত শান্তনা দিয়ে বলবে,আর আফসোস করে লাভ নেই। সবাইকে একদিন না একদিন যেতেই হয়। তাছাড়া আপনার জন্য গেরুয়া শিবির তো কম করেনি। আপনার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় যজ্ঞ হয়েছে। মার্কিন মুলুকে যখন আপনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, তখনই আপনাকে গেরুয়ায় শিবির এমন আপন করে নিয়েছিল।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর ভাই মোদী স্বয়ং আপনার এই আচরণে মুগ্ধ হলেন। আরএসএসের অনেকেই তো মার্কিন মুলুকে শাখা খোলার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিল।

আসলে সময়টাই বোধহয় সংঘপ্রেমীদের জন্য ভালো যাচ্ছে না। একদিকে আপনার এই হাল। অন্যদিকে জেলে গোসাঁই। আপনাদের তো আবার ইভিএমও নেই। তাহলেও কিছু একটা চেষ্টা করা যেত। সব রাস্তা তো নিজেরাই বন্ধ করে রেখেছেন। তাছাড়া এমন নয় যে পরে কিছু লোককে কেনা যাবে। তাহলে আমাদের ‘চাণক্য’ বন্দোবস্ত করে দিত। এসব কাজে ওঁর জুড়ি নেই। আপনারা পড়ে রয়েছেন সেই নিরপেক্ষ ভোট সিস্টেমে। তাঁর ঠ্যালা সামলান। আপনার তো টাকার অভাব নেই অর্ণব গোস্বামীদের মত একটা সংবাদিক বাহিনী বানাতে পারলেন না। তাহলেও তো কাজ দিত। এখন আর ভুল-ভাল বকে কি হবে। মনের কষ্ট অবশ্য কিছুটা কমে।

অর্ণবের কথা মনে পড়তেই মনটা কেমন যেমন খারাপ হয়ে গেল। নিজের চ্যানেলে বসে  কি সুন্দর হুমকিটাই না দিত ছেলেটা। টাইপটা যদিও চেনা। তাতে কি এদেশে দাঙ্গার টাইপই তো চেনা । তা বলে তার গুরুত্ব কী নষ্ট হয়ে গিয়েছে? প্রধানমন্ত্রী তো কর্মসংস্থা ও দেশের আর্থিক উন্নতির একই কথা বলেন। কেউ কেউ হয়ত বিশ্বাস করে। তাতে কি ! তাবলে তার বাজার নেই, এমনটা নয়। । অর্ণবও ভালো বাজার ধরেছিল। টিআরপি বাড়ানোর জন্য খানিকটা কারচুপি করেছিল। সেটা বড় ব্যাপার নয়। ‘এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন পলিটিক্স এণ্ড রিপাবলিক টিভি!’

 

বিজেপির জন্য অর্ণবের এই ‘কুরবানী’ হয়ত সংঘের ইতিহাসে গেরুয়া অক্ষরে লেখা থাকবে। মাঝে মাঝে ভুল কার হয় না বলতে পারেন। সবার হয়। এই যে মোদী বিনা ফর্মাল আমন্ত্রণে পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন, সেই ভুল কি উনি আর করেছেন? তখন কুর্সিতে নওয়াজ। তিনি বলতে গেলে ঘরেই লোক ছিলেন। এই ট্রাম্প টাইপ। তিনি থাকলে কি সুন্দর একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ব্যাপার হয়ত করা যেত। এটা দুই দেশের জন্যই জরুরি। এতে কিছু প্রাণ গেলে যাবে। সেটা বড় কথা নয়। এতে সেনার মনোবল বাড়ে। দেশবাসীর দেশপ্রেমের ভ্যালিডিটি শেষ হবার আগেই তা রিচার্জ হয়ে যায়। আরে বাবা, অর্ণব তো সে কাজও করেছে। কতবার যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব তুলেছে তার হিসাব নেই। সেনাপ্রধানরাও হয়ত কনফিউজ হয়ে যেতেন !

যেকোনো জিনিসের পাইওনিয়ার হওয়া সহজ কথা নয়। আগের বিশ্বে লোক কেবল ‘ইয়েলো’ জার্নালিজমের কথা জানত। অর্ণবদের মত কয়েকজনের কল্যাণে বিশ্ব এখন স্যাফ্রন (গেরুয়া ) সাংবাদিকতার কথাও জানল। সেটা খারাপ না ভাল, তা ভিন্ন প্রশ্ন। অর্ণব ‘দেশপ্রেম’ মতান্তরে ‘বিদ্বেষ’,মতান্তরে ‘বিজেপির হিন্দুত্ব’ প্রচারের যে কাজটি আন্তরিকতার সঙ্গে করেন, তা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর খুবই পছন্দের। তিনি তাঁর কাজের তারিফ করছেন প্রকাশ্যে। তাকে ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তাও দেওয়া হয়েছে। যদি মুম্বই পুলিশ হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাবার সময় তা খুব একটা কাজে আসেনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অর্ণব গোস্বামী উভয়েই বিদ্বেষকে প্রচারের হাতিয়ার করছিলেন। ট্রাম্প ভেবেছিলেন এটা তাঁকে সাহায্য করবে। অর্ণব ভেবেছিলেন তাঁর রক্ষাকর্তা বিজেপি। কিন্তু সময়ের নিজস্ব খেলা আছে। সে খেলায় বহু রথী মহারথীকে হারতে হয়। তখন পাশে কেউ থাকে না। যারা সচেতন তারা তার থেকে শিক্ষা নেয়। যারা তা নয় তারা হিংসা ও বিদ্বেষের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

নিজেদের বিজেপি ও হিন্দু বলে দাবি করা সেই বিদ্বেষীরা বোধহয় ট্রাম্পকে যোগী আদিত্যনাথের ‘বড়দা’ ভাবতেন। সে কারণেই তাদের আবেগ এমন করে ঝরে পড়ছে। নরেন্দ্র মোদী তাঁর অসাধারণ বডি ল্যাংগুয়েজ দিয়ে তাঁর ভক্তদের যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তা হল মার্কিন মুলুকেও ‘ওদের’ অবস্থা খারাপ করে ছাড়বো। যারা মানব কল্যাণে নয়,প্রকৃত হিন্দুধর্মে নয়, কেবল বিদ্বেষে বাঁচতে চায়, তাদের বাঁচাকে সহজ করে দিয়েছে বিজেপি। সে কারণে ট্রাম্পের পরাজয়ের খবরে তাদের মন খারাপ। সেই একই কারণে তারা অর্ণবের জন্য  দুঃখী।

ট্রাম্প হারলে ভারতের কি ক্ষতি হবে তা বেশিরভাগ সংঘপ্রেমীই জানে না। বাইডেন এলে কি লাভ হবে তাও তাদের অজানা। তবে তারা জেনেছে বাইডেন মুসলিম বিদ্বেষী নয়। তিনি কাশ্মীরের মানুষকে মানুষ হিসাবে দেখেন। জঙ্গি ও মুসলিম হিসাবে নয়। আর তাতেই বাইডেনকে দেশ বিরোধী মনে করছে বহু সংঘপ্রেমী।

তবে রাজনীতি ও কূটনীতির মধ্যে ফারাক রয়েছে।  ট্রাম্পের পতন আসন্ন জেনেই সুর বদলালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেন তিনি।  সুযোগ পেয়েই আরও একবার প্রশংসা করেন মোদির। বলেন, মোদী অসাধারণ দক্ষতায় মোকাবিলা করেছেন করোনার। তবে একথা ঠিক যে মার্কিন কুর্সিতে যিনিই বসুন, তাদের বিদেশ নীতি বিশেষ বদলাবে না। তাই ভয় কিংবা ভরসা, কোনওটিরই কারণ নেই।

আরও পড়ুন : অজয়ের ‘দরবারে’ অমিত শাহ, গেরুয়া ব্রিগেডে নাম লেখাচ্ছেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী? কী বললেন পন্ডিতজি ?

অভিমত ব্যক্তিগত

Exit mobile version