শিক্ষার আলো জ্বললেও,মুসলিম পরিচালিত বহু প্রতিষ্ঠানে সবথেকে অবহেলিত মুসলিমরাই!

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সৈয়দ আলি মাসুদ

বাঙালি-অবাঙালি সব মুসলিম ছেলে-মেয়েরাই ভালো লেখাপড়া করছে। একথা সত্য। বাঙালি মুসলিমদের এই শিক্ষাগত উন্নয়নটা এখন খোলা চোখে ধরা পড়ছে। নিঃশব্দে বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের একটা ব্যাপক আগ্রহ তৈরী হয়েছে। যার পিছনে কার অবদান তা জানতে কারও বাকি নেই। ঠিকই ধরেছেন, তিনি প্রচারবিমুখ মোস্তাক হোসেন।শিক্ষা বিস্তারের জন্য এমন করে অর্থ সাহায্য করেনি কোনও বাঙালি মুসলিম। আর যাঁরা দুআনা করেছেন তারা ১৪ আনা প্রচার চেয়েছেন।

তবে যাঁরা মনে করছেন ছেলেরা লেখাপড়া শিখলেই সমাজটা এগিয়ে আসবে, তারা গোটাটা ভাবছেন না। আসলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যে লেখাপড়া শিখছে তার মূল লক্ষ হল রুপালি পেশাগত জীবন ছুঁয়ে ফেলা। নিঃসন্দেহে এই ভাবনাটা ভীষণ জরুরি। কিন্তু সব নয়। কিন্তু পরের স্টেপটা দেখার  সঠিক সময় এখনও আসেনি। আপাতত শিক্ষাকেই এগিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার করতে হবে।

আল আমীন মিশন থেকে ফি বছর বহু পড়ুয়া ডাক্তারিতে সুযোগ পাচ্ছে। মোস্তাক হোসেনের সঙ্গে সঙ্গে এক্ষেত্রে নুরুল ইসলামের নাম করতেই হয়। এই দুজনের সদিচ্ছা এবং প্রয়াসে একেবারে সাধারণ বাড়ির বাঙালি মুসলিম পরিবারগুলি ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখতে পারছে। যা বাস্তব হচ্ছে প্রতিবছর। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারের বাজারটা আগের মত নেই। তাই বাড়ছে ডাক্তার হবার প্রবণতা।

আরও পড়ুন : মিটার রিডিং না নিয়ে কীসের ভিত্তিতে বিল পাঠিয়েছে CESC, জবাব চাইল হাইকোর্ট

একথা অস্বীকারের কোনও উপায় নেই যে চিরকাল মুসলমানের পা টেনে ধরে আর একজন মুসলমানই। ভালো করে খেয়াল করে দেখবেন ব্যাক্তি জীবনে আপনার যত ক্ষতি হয়েছে তার জন্য কোনও হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি কিংবা শিখ দায়ী নয়। আপনার ক্ষতি করেছে নিশ্চয় আপনার কোনও আত্মীয়। যারা ক্ষতি করে তাদের চিনে নিতে হবে।

এদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এবং সরকার মুসলিমের পাশে নেই। তার দরকারও নেই। আপনি অযথা কারও মুখাপেক্ষী হতে যাবেন কেন? এদেশের মুসলিমদের নিজের মত করে ব্যবহারের চেষ্টা করছে সেই কোন কাল থেকে। ‘আলহামদুল্লিলাহ’ ‘মাশাআল্লাহ’ বলে কিছু বিজ্ঞাপিত মুসলিম নেতাও সেই একই কাজ করে আসছে। মেহেরবানী করে তাদের ছলনায় পড়বেন না ।

কওম ও মিল্লাতের নাম করে গলা কাঁপানো সংবাদপত্রের সম্পাদক, স্বঘোষিত পীরজাদা কিংবা ইসলামকে ব্যবহার করা  রাজনৈতিক লোকজনদের প্রথমেই চিনে ফেলুন।এরা কেউ রাজনৈতিক কৃপার আশায়, কেউ কাঁচা টাকার লোভে, কেউ বা অন্য কোনও ধান্ধায় প্রতিদিন ইসলামকে নিলামে তুলতে পারে। কপালে নামাজের চিহ্ন, কিংবা জবানে কিছু ইসলামী শব্দবন্ধ শুনে আহ্লাদিত হবেন না। এই শব্দ দিয়েই তো বোকা বানানোর কাজটা চলছে।

বাঙালি মুসলমানের যে টাকা নেই তা নয়। তারপরও তারা সেভাবে বলার মত কোনও প্রতিষ্ঠান বানাতে পারে না। এর অন্যতম কারণ হাতে গোনা যে কটি মুসলিম পরিচালিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে সর্বদা মুসলিমদের ‘আন্ডার এস্টিমেট’ করেন ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। একই সঙ্গে অসম্মানও। তাদের ভাবখানা হল, ‘এরা যাবে কোথায়? হিন্দু পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে এদের ঠাঁই হবে না। অতএব যা টাকা দিচ্ছি মুখ বুজে নাও, আর যেটুকু অসম্মান করা হচ্ছে তাও প্রাপ্তি হিসেবে মেনে নাও।’ এই কর্তারাই মুসলিমদের বিভিন্ন সভাসমিতিতে এমন আচরণ করেন যেন  তাঁরা ‘দরবেশ’, মুসলমানের উন্নতি না হলে যেন তাদের ঘুম হয় না!

এতো গেল ডিসক্লেমার! এবার গোটা কতক কাজের কথা বলি। আজকের দিনে মুসলিমদের সবথেকে আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে শিক্ষাকে। এই শিক্ষার প্রসারের যারাই কাজ করছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দরকারে জাকাতের একটা টাকা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে দিতে হবে। পারলে গোটা টাকাটাও দিতে পারেন। তাতে এই শিক্ষা প্রসারের কাজে তাদের খানিকটা সুবিধা হবে। প্রতিটি মুসলিম এলাকায় আরও স্কুল বানাতে হবে। মাদ্রাসা এবং মসজিদগুলিকে সার্বিক ‘এডুকেশনাল হাবে’ পরিণত করতে হবে। কুরআন, হাদিস, নীতি, নৈতিকতা এবং ঈমানের চর্চার সঙ্গে সেখানে এই দুনিয়ার পেশাগত শিক্ষাকেও জুড়ে দিতে হবে।

মুসলিম মেয়েদের শিক্ষায় বাড়তি জোর দিতে হবে। সরকার যেসব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে তা পরিপূর্ণ ভাবে গ্রহণ করতে হবে। সংরক্ষণের পূর্ণ সদ্ব্যাবহার করতে হবে। ওয়াকফ সম্পত্তি কিভাবে মুসলিম শিক্ষায় আরও কার্যকর করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। সংখ্যালগু বাজেট সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। সরকারি যে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে সেগুলিকে আরও ভালো ভাবে কাজে লাগাতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানে মুসলিম পড়ুয়ারা পড়ে সেই প্রতিষ্ঠানকে NCMEI অথবা মাদ্রাসা বোর্ডে নথিভুক্ত করতে হবে।

বার খেয়ে সরকার বিরোধিতায় সর্বদা চিৎকার করা বুদ্ধির কাজ হবে না। মুসলিম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাস্তবমুখী পাঠক্রমের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারি নির্দেশিকা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে। সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মুসলমানকে নিতে হবে। অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিক করে তুলতে হবে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কাগজ পত্র ১০০ শতাংশ সঠিক থাকতে হবে।

একজন মুসলিমকে অন্য একজন মুসলিমের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাঁরা এরকম প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের কর্তব্য হবে অন্তত আর একজনের শিক্ষার খরচ বহন করা। সর্বোপরি সমস্ত রকম হীনমন্যতা ছাড়তে হবে। একই সঙ্গে আমরা কি ”ছিনু” এই ভাবনাও ত্যাগ করতে হবে।                                                                                                                                                                                                                          অভিমত ব্যক্তিগত…

আরও পড়ুন : সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নেতানইয়াহু : কিছু কি শিখবে ভারত

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest