সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নেতানইয়াহু : কিছু কি শিখবে ভারত

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

অভিজিৎ সিনহা

প্রধানমন্ত্রী নেতানইয়াহুর গদি কি এখন টলোমলো? ইসরায়েলের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টিকারী প্রধানমন্ত্রী তিনি। এত বেশি সময়কাল ধরে অন্য কেউ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী থাকেননি। কিন্তু এই রেকর্ড সৃষ্টিকারী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কি এই দেশের মানুষ ক্ষিপ্ত? অন্তত হারেৎজের প্রতিবেদন সেরকমটাই বলছে। তারা জানাচ্ছে হাজারে হাজারে ইসরায়েলি জনতা জেরুজালেমের রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী নেতানইয়াহুর পদত্যাগ দাবি করতে থাকে। পুলিশ ৫০ জন প্রতিবাদীকে গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে বাধা দেওয়া, সরকারি আধিকারিকদের কর্তব্যকর্মে বাধাদান প্রভৃতি অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে যে দুর্নীতির কারণে নেতানইয়াহুর জনপ্রিয়তা কি এখন ক্রমহ্রাসমান।

নেতানইয়াহু প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৯ সালে নির্বাচনে হারেন। তাঁর লিকুদ দলের প্রধানের পদ হারান তিনি। পরে ২০০৯ সালে আবার ফিরে পান প্রধানমন্ত্রিত্ব। তখন থেকেই টানা ১১ বছর ধরে তিনি ওই পদে। ২০১৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ। ঘুষ প্রদান, জালিয়াতির সঙ্গে ওঠে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও। শুধু তাঁর নয়, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও ওঠে অভিযোগ। পরের বছর তদন্ত শুরু হলেও ২০১৯ সালে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। হাওয়ায় ভাসে যে, নেতানইয়াহুই নাকি তাঁর প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু তাঁর ও তাঁর লিকুদ দলের জনপ্রিয়তায় এর প্রভাব পড়ে। ২০১৯-এর নির্বাচনে তিনি একক গরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন। ২০২০ সালে তাঁর কট্টর বিরোধী বেনি গানৎজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মিলিজুলি সরকার গঠন করেন তিনি। ঠিক হয় ১৮ মাস প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন তিনি। তার পর প্রধানমন্ত্রী হবেন গানৎজ। এরকম অবস্থা আগে হয়নি তাঁর। গোটা বিশ্ব ভেবে নিয়েছিল নেতানইয়াহু মানে ইসরায়েল আর ইসরায়েল মানে নেতানইয়াহু। বস্তুত, দুর্নীতির অভিযোগ ভীষণ কাবু করে ফেলছে তাঁকে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বেকারি, রপ্তানির অধোগতি, কোভিড ১৯ মোকাবিলায় তাঁর ব্যর্থতা। সব মিলিয়ে ইসরায়েল এখন উত্তপ্ত নেতানইয়াহু বিরোধী বিক্ষোভে। আর তার মধ্যেই ঘর গুছিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলবাসী আরবদের সংগঠন আরব জয়েন্ট লিস্ট।

আরও পড়ুন: নাজিব থেকে ওয়রওয়ারা, কাফিল- বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণতা এখন প্রকাশ্যে

ইসরায়েল শুধু ইহুদিদের দেশ নয়। এখানকার ১২ শতাংশ মানুষ আরব বংশোদ্ভূত। এরা প্রায় সকলেই দ্রুজ বা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আগে এরা চারটি দলে বিভক্ত ছিল। এবং কারোরই ইসরায়েলি সংসদ নেসেটে প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ইসরায়েলে নেসেটে প্রতিনিধিত্ব ঠিক হয় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে। একটা নূন্যতম ভোট থাকে। তা যারা পায় তাদের মধ্যে আনুপাতিক হারে আসন বণ্টিত হয়। আগে কোনো আরব দলই নূন্যতম গণ্ডিটি না পেরনোর কারণে নেসেট প্রতিনিধিত্ব পেত না। এখন চারটি দলের মিলনের ফলে সৃষ্ট আরব জয়েন্ট লিস্টের তা নিশ্চিত। শুধু নিশ্চিতই নয়, তাদের আসন সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমান সংসদে তাদের রয়েছে ১৫টি আসন। নেসেটে মোট আসন সংখ্যা ১২০। এই নেসেটে ১৫টি আসন পেয়ে বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে আরব জয়েন্ট লিস্ট। অনেকেই বলছেন, শুধু মুসলিম এবং দ্রুজ ভোট পেয়ে এতগুলি আসন জেতা যায় না। নিশ্চিতভাবেই কিছু ইহুদি ভোটও পেয়েছে তারা। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কোন ইহুদি ভোট গেল তাদের ঝুলিতে বর কেনই-বা গেল।

সাম্প্রতিক ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে নিতানইয়াহুর লিকুদ দলের ভোট বাড়ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাড়ছে নেতানইয়াহুর পদত্যাগের দাবি। আর লিকুদ দলের এই নেতাও স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না। কারণ লিকুদ দলের প্রতি য গতিতে সমর্থন বাড়ছে, তার থেকে অনেক বেশি গতিতে বাড়ছে আরব জয়েন্ট লিস্টের প্রতি সমর্থন। বরং সমর্থন কমছে ইহুদি প্রধান মধ্য বামপন্থী দলগুলোর। এই দলগুলি এতদিন নেতানইয়াহুর বিরোধিতা করে এলেও, আজকের এই সংকটময় সময়ে তারা নেতানইয়াহুকে কেউ প্রত্যক্ষভাবে আর কেউ পরোক্ষভাবে সমর্থন করছে। অথচ এই দলগুলি আরব জয়েন্ট লিগের পাশে থাকলে এখনই একটি নেতানইয়াহু মুক্ত ইসরায়েল দেখা যেতে পারত।

https%3A%2F%2Fcdn.cnn.com%2Fcnnnext%2Fdam%2Fassets%2F191225170219 benjamin netanyahu file

এদিকে নেতানইয়াহুর বক্তব্য পরিস্কার। তিনি খুব সোজা ভাষায় আরব জয়েন্ট লিস্টকে প্যালেস্তাইন পন্থী বলে বর্ণনা করে সকল ইহুদি প্রভাবিত দলকে জাতির স্বার্থে এক হতে বলেছেন। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নিজের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। নয়তো গানৎজের নীল সাদা দলের সঙ্গে লিকুদের জাতীয় ঐক্য সরকার আগেই গঠিত হতে পারত। কিন্তু যে সমস্ত মধ্য বামপন্থীরা আজ নেতানইয়াহুর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের অবস্থা ভয়ানক। বেনি গানৎজ এবং তাঁর নীল সাদা দলটির কথাই ধরা যাক।

যেদিন এই মধ্য বামপন্থী নেতার সঙ্গে নেতানইয়াহুর সমঝোতা হয়, তার পরের দিনই দল ছাড়েন দলের দুই নম্বর ইয়ার লেপিদ। আলাদা দল গঠন করেন তিনি। গানৎজের দলের নাম হয় ইসরায়েল রেসিলিয়েন্স পার্টি। দলের জনসমর্থন হুহু করে কমে যায়। প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ যে-সব মানুষ এতদিন নীল সাদা দলকে সমর্থন করে এসেছেন তাঁরা বুঝতে পারেন, এই দলের নেতানইয়াহু বিরোধিতা ছিল লোকদেখানো। প্রসঙ্গত জানানো যাক, লেপিদ প্রথম থেকেই আরব জয়েন্ট লিস্ট সহ সমস্ত নেতানইয়াহু দলের জোট চেয়েছিলেন।

এখন ভারতের বিষয়ে আসা যাক। আমাদের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জনবিরোধী সিএএর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে না কেন। কেন শাহীন বাগের সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে দলীয় স্তরে সহমর্মিতার কথা জানাতে পারেনি কংগ্রেস সহ কোনো দলই। কেন কাফিল খান, সফুরা জারগরদের পাশে দাঁড়ায়নি তথাকথিত বিজেপি বিরোধী দলগুলি? কেন তারা বলতে পারছে না সিএএ বিরোধী আন্দোলন সহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ধৃত রাজনৈতিক বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে? তবে কি আমরা ধরে নেব, ইসরায়েলের মতো এখানেও চলছে এক অদৃশ্য আঁতাত

এখনই সেটা বলা হয়তো কঠিন। তবে এখন সচ্ছন্দে বলা যেতে পারে যে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে না-পারলে আগামী দিনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে এক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতে পারে। একইসঙ্গে বলা যায় যে আরব জয়েন্ট লিস্টের উত্থান এক ভয়াবহ কুম্ভীপাকের মধ্যে ফেলে দিয়েছে তাঁকে। ট্রাম্পের সহযোগিতা নিয়ে প্যালেস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্বর আক্রমণ করা যায়, কিন্তু দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা যায় না।

আরও পড়ুন: দিলুদার পায়ের বল কেড়ে গোল দেবার মরিয়া চেষ্টা রেফারির, চাপে টিম বেঙ্গল গেরুয়া

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest