মোদী সরকারের সৌজন্যে কৃষিতে এ বার ছাপোষা ফড়েদের জায়গা নেবেন রাঘববোয়ালরা!

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সৈয়দ আলী মামুন

মাটিতে যাদের ঠেকে না চরণ,
    মাটির মালিক তাঁহারাই হন-
   যে যত ভন্ড ধড়িবাজ আজ সেই তত বলবান।
 

সেই কোনকালে কবি নজরুল ইসলাম বুঝিয়ে দিয়েছেন সে কথা। পরে এসিজেডের কল্যাণে নরেন্দ্র মোদী গুজরাটে আরও একবার তা স্পষ্ট করতে দিয়েছিলেন। জমিতে কৃষকদের নয়,দাপট বাড়ল শিল্পতিদের। সরকার শিল্পপতিদের হয়ে ময়দানে নেমে চাষিদের জমি কাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।প্রকৃত পক্ষে 2002 গুজরাট দাঙ্গা বাদ দিলে এটাই আসলে গুজরাট মডেল।

তখন মার্কেটে ভক্তদের এমন আমদানি হয়নি। আরএসএস অবশ্য তার কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করে আসছিল। বিদ্বেষ ফেরি তখনও হচ্ছিল। কিন্তু তা এমন করে মার্কেটিং করতে পারেনি কেউ। মোদী জমানায় তা পূর্ণতা পায় । সবটা করা হয়েছে সচেতনভাবে। বিদ্বেষ যদি ঠিকমত ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে উন্নয়নের খবর কেই বা রাখবে। সংখ্যাগুরুকে যদি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে দিয়ে বলা হয় হিন্দু সংকটে আছে। তার জন্য দায়ী কংগ্রেস। তাহলে কে আর কাজ চাইবে। মুসলিমরা যদি কাজের কথা বলে, তাদের না হয় পাকিস্তানে চলে যাওয়ার একটা নিদান দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং মুসলিমদের আর একবার একবন্ধনীতে জুড়ে দেওয়া যাবে।

713036 farmer pti

এর মধ্যে একটা কথাও নেই যা নতুন। ধান ভাঙতে শিবের গীত না গেয়ে আসল কথায় আসা যাক। এবার কৃষকদের প্রতি ‘নেক নজর’ পড়েছে সরকারের। এমনিতে ‘মিতরোঁ’ শব্দের মধ্যে হাড়হিম করা একটা শিরশিরানি আগেই দেশবাসী টের পেয়েছেন। কিন্তু অনেকে কবুল করেনি। মোদী সরকারের অন্যতম সাফল্য ছিল সবকিছুতেই তারা ধর্মের ফোড়ন দিতে পারে নিপুণভাবে। ধর্ম হলেও একটা কথা ছিল, ধর্মের নাম দিয়ে এরা বিদ্বেষ ফোড়ন দেয়।মোদী যা করেন তাতে নাকি পাকিস্তানের ক্ষতি হয়। এদেশে যেসব ‘মোগলের বাচ্চারা’ আছে তাদেরও ক্ষতি হয়। অতএব ‘হর হর মোদী, ঘর ঘর মোদী।’

মোদী বাবু সংস্কারের কথা বললেই হাড় হিম হয়ে যায়। নোট বাতিলের যে সিদ্ধান্ত তিনি অকস্মাৎ নিয়েছিলেন, তা কেবল তিনিই পারেন। এমন অবিবেচনার জন্য কলজের জোর লাগে বস। তাছাড়া তাঁর দলের সাংসদ স্বামী বলেছেন, উনি নাকি শিক্ষিত লোকেদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন না। যারা তাঁর কথায় ঘাড় নাড়বে তিনি তাদের ‘মন কি বাত’ শোনান। এবার তিনি পড়েছেন কৃষকদের পিছনে। তিনি কারো কল্যাণের কথা ভাবলে তাদের থরহরি কম্পমান অবস্থা হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে দেশের কৃষকদের। আম আদমির কপাল ফের পপুড়বে। তাতে অসুবিধা নেই।  ‘মন্দির ওহি বানেগা। ‘

‘অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স’, ‘ফারমার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিয়েশন) বিল’ এবং ‘ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল’— এই তিনটির মাধ্যমে মোদী সরকার এখন মূলত তিনটি উদ্দেশ্য সাধন করতে চাইছে:

১. কৃষিক্ষেত্রে ফড়ে বা দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো।২. রাজ্যগুলিতে চুক্তি-ভিত্তিক চাষব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা। ৩. কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন রয়েছে তা দূর করে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দেওয়া।

সরকার চাইছেন কৃষিকাজ লাভজনক হোক এবং কৃষকের রোজগার দ্বিগুণ হোক আর যাঁরা বিরোধিতা করছেন তাঁরা মনে করছেন যে বিপণন পুরোটাই যেহেতু লগ্নিভিত্তিক, এতে কৃষক কোথাও নেই, এর লাভ পুরোটাই কর্পোরেটের ঘরে উঠবে। এই কর্পোরেট তাঁরা, যাঁরা রাজনীতিকে অর্থ জোগান, বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং অনেকাংশই পাবলিক পলিসিকে প্রভাবিত করেন। ইদানিং তো সামাজিক ক্ষেত্রেও কর্পোরেটদের সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

171120 beginning farmers

কে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, তার সাথে খাদ্য আইনের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কারণ আমাদের পাতের খাবারটি শেষমেশ আমাদের গরিব অন্নদাতারাই দেবেন, কোনও রাজনেতা বা বিত্তশালী কর্পোরেট কর্তা নন। নয়া যে সিস্টেম মোদী বাবুরা নিয়ে যেন তাতে নিজেদের দায় তারা ঝেড়ে ফেলছেন। মাঠে নামবে কর্পোরেটরা। তাদের লাভ হবে এমন ফসল তারা ফলাতে চাইবে। আর একদফা যদি নীল চাষের মত ঘটনা ঘটে তাতে অবাক হবার কিছু নেই।

দিন দিন কৃষক জমি হারিয়ে কর্পোরেটদের দাস হয়ে যাবে। চাষীদের কাছে থেকে ফসল কিনে নেবেন রাঘব বোয়ালরা। আগে তো তাও এই কাজ কাজ করত ছোট খাটো কিছু ফড়ে। এরপর যারা মাঠে নামবে তারা আসলে সরকারকেই নিয়ন্ত্রণ করবে। তাহলে কৃষকদের অবস্থা কি হবে তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। এরাই এবার কৃষিজাত পণ্যের দাম ঠিক করবে। কৃষক হয়ে পড়বেন দিন মজুর। দ্রব্যমূল্য বাড়বে হু হু করে। কিন্তু  সরকার চোখ বুজে থাকবে। এবার কৃষিতে বিনিয়োগ করতে দেখা যাবে এনআরআইদের। ভক্তরা ঘোষণা করবেন ডিজেলের দামের মতই কৃষির মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন মোদীজি। গত সত্তর বছরে এই কাজ কেউ করতে পারেনি !

অভিমত ব্যক্তিগত

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest