কলকাতা: শেষ হল একটা সোনার অধ্যায়ের৷ চলে গেলেন বাংলা তথা ভারতের অন্যতম সেরা ফুটবলার ও কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়৷
Indian football legend P K Banerjee has died, says family source
— Press Trust of India (@PTI_News) March 20, 2020
গত ৩ মার্চ অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় বর্ষীয়ান প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফুসফুসে সংক্রমণ-সহ বার্ধক্যজনিত একাধিক সমস্যা ছিল তাঁর। শুরু থেকেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা চালু করা হয়। শুরু হয় ডায়ালিসিসও। শেষে তাঁর শরীরে মাল্টি অর্গ্যান ফেইলিওর জনিত জটিল সমস্যা।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা মহামেডানের মতো বড় ক্লাবে খেলেননি কখনও। তবু এরিয়ানস, ইস্টার্ন রেলের মতো ক্লাব থেকে ভারতীয় ফুটবলের নক্ষত্র হয়ে উঠেছিলেন পিকে। ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন জলপাইগুড়িতে জন্ম তাঁর। ছোট থেকেই ফুটবল ছিল ধ্যানজ্ঞান। একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বল না পেলে ছোবড়া সমেত নারকেল নিয়েই দু’পায়ে নাচাতেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলেছিলেন পিকে। তারপর বাবার চাকরি সূত্রে গোটা পরিবার চলে আসে কলকাতায়। পিকে যোগ দেন এরিয়ানে।
আরও পড়ুন: World Happiness Day 2020: করোনা আতঙ্কে ম্লান গোটা বিশ্বের হাসি
১৯৫৪ সালে এক মরশুম এরিয়ানে খেলার পর ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পিকের ক্লাব বলতে গোটা ময়দান জানত ইস্টার্ন রেলকে। ১৯৫৮ সালে তাঁর নেতৃত্বেই কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল ইস্টার্নে রেল। তাৎপর্যপূর্ণ হল এই তারপর আর কোনও তথাকথিত ছোট ক্লাব কলকাতা লিগ জেতেনি। মাঝে কয়েকবার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব জিতলেও সাতের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সাদা-কালোর অশ্বমেধের ঘোড়া থেমে যায়।কার্যত কলকাতা লিগ হয়ে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ট্রফি। কিন্তু ৫৮-র পর এবারই প্রথম ইস্ট-মোহনের বাইরে ছোট দল হিসেবে পিয়ারলেস স্পোর্টস ক্লাব কলকাতা লিগ জেতে।
ভারতের জার্সি গায়ে ৪৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন পিকে। তাঁর বুট থেকে এসেছিল ১৪টি গোল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বারবার ঝলসে উঠেছিলেন পাঁচফুট সাড়ে আট ইঞ্চির এই স্ট্রাইকার। ১৯৫৮, ৬২ এবং ৬৬-এর এশিয়াডে ভারতের জার্সি গায়ে খেলেছিলেন পিকে। এর মধ্যে ৬২-র জাকার্তা এশিয়াডে চুনি গোস্বামী, তুলসীদাস বলরাম, জার্নাল সিং, পিটার থঙ্গরাজদের সঙ্গে নিয়ে সোনা জিতেছিলেন পিকে।
১৯৬১ সালে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হন প্রবাদপ্রতীম এই ফুটবলার তথা কোচ। ১৯৯০ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের বিচারে বিংশ শতকের সেরা ভারতীয় ফুটবলার নির্বাচিত হন পিকে। ২০০৪ সালে ফিফা তাদের সর্বোচ্চ সম্মান অর্ডার অফ মেরিট প্রদান করে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনিই এশিয়ার একমাত্র ফুটবলার, যাঁকে ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ার প্লে পুরস্কার প্রদান করে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থা।
আরও পড়ুন: আস্থা ভোটের আগেই ইস্তফাই দিলেন কমল নাথ, ফের ‘পদ্ম’ মধ্যপ্রদেশে!
পিকের মৃত্যু ময়দানের অপূরনীয় ক্ষতি। ময়দান শুধু একজন প্রাক্তন ফুটবলার বা কোচকে হারাল না, হারাল তার অভিভাবককে। কিন্তু তাঁর ধমক, বুকে জড়িয়ে ধরা, বকুনি, আদর আর বিখ্যাত ভোকালটনিক—থেকে যাবে ময়দানের ঘাসে। আজীবন।