কলকাতা: প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষ প্রয়াত। বুধবার সকাল ০৭.১০ নাগাদ নিজ বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ডিসেম্বর থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। “শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসছিল।গত তিন দিন খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। আজ কথা ছিল রাইলস টিউব দিয়ে খাওয়ানোর। সে সময়টা দিলেন না উনি।’’ জানালেন নিমাই ঘোষের চিকিৎসক কৌশিক ঘোষ। বুধবারই ১২.৩০ নাগাদ কেওড়াতলা মহাশ্মশান শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে তাঁর।বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবুও ছবি তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিছুদিন আগেও তাঁর মৃত্যুর ভুয়ো খবর কানে এসেছিল। তখন প্রখ্যাত ফোটোগ্রাফার মজা করে বলেছিলেন, ”ভালই হল। আমি চলে গেলে কী হতে চলেছে দেখে নেওয়া গেল একবার।”
আরও পড়ুন: কণিকা কাপুরের টেস্ট ফের করোনা পজিটিভ, সংস্পর্শে আসা তিনজনের রিপোর্ট নেগেটিভ
নিমাই ঘোষের কথা এলেই তাঁর সঙ্গে উঠে আসে আরও এক কাল্টের কথা । তিনি সত্যজিৎ রায় । তাঁর ছবি তুলেই চিত্রগ্রাহকের জীবন শুরু করেছিলেন তিনি । ট্যাক্সির মধ্যে কুড়িয়ে পাওয়া একটা ক্যামেরা দিয়ে তাঁর ছবি তোলা শুরু। এক দিন খবর পেলেন, বোলপুরে সত্যজিৎ রায় ‘গুগাবাবা’র শ্যুটিং করছেন। সটান পৌঁছে গেলেন সেখানে। সে দিন শ্যুটিং ছিল না। ছিল রিহার্সাল। সেখানেই আনকাট সত্যিজিৎ-কে ক্যামেরাবন্দি করলেন নিমাই ঘোষ। “তুমি তো আমার অ্যাঙ্গেল মেরে দিয়েছো হে! ছবি তোলো, ছবি তোলো।” পিঠ চাপড়ে বলা সত্যজিৎ রায়ের এই বাক্যটাই বদলে দিয়েছিল সেদিনের তরুণের ভবিষ্যত। তারপর থেকেই যাত্রা শুরু। গুপি গায়েন বাঘা বায়েন থেকে আগন্তুক একের পর এক সত্যজিতের ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, অপর্ণা সেনের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন নিমাই ঘোষ।
আরও পড়ুন: সবসময় রাত আটটাতেই বলেন আর সময় দেন ৪ ঘণ্টা, মোদির লকডাউন ঘোষণার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অনুরাগ
২০১০ সালে ভূষিত হয়েছিলেন পদ্মশ্রী সম্মানে। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি ‘রে’স লেন্সম্যান’ নামেও পরিচিত ছিলেন।দীর্ঘ ২৫ বছরের চিত্রগ্রাহক জীবনে নিমাই ঘোষ ৯০ হাজারের বেশী ছবি তুলেছেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদে চলচ্চিত্র মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
আরও পড়ুন: করিনাকে অশ্লীল অপমান, তৈমুরের ধর্ম নিয়ে কুৎসিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন অর্জুন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকবার্তায় জানিয়েছেন,“বিশিষ্ট আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। দু দশকের বেশি সময় ধরে তিনি বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে আলোকচিত্রী হিসাবে অসামান্য কাজের নজির রেখেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘মানিক দা: মেমোয়ার্স অব সত্যজিৎ রে’। পদ্মশ্রী সহ বহু সম্মানে ভূষিত নিমাই ঘোষের প্রয়াণে ফটোগ্রাফি জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।আমি নিমাই ঘোষের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি”।