ওয়েবডেস্ক: ২১ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে পদত্যাগ করে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকারকে পতনের মুখে টেনে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে উঠেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। স্বাধীনতার সময়ে ভারতের সর্বোচ্চ মর্যাদার ‘রাজঘরানা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া অল্প কয়েকটি পরিবারের অন্যতম সিন্ধিয়া পরিবার। এই পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে কংগ্রেস থেকে চারবার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৪৯ বছর বয়সী জ্যোতিরাদিত্য। জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত।
স্বাধীনতার সময়ে এ দেশে সর্বোচ্চ মর্যাদার ‘রাজঘরানা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল হাতে গোনা যে ক’টা পরিবার, সিন্ধিয়ারা তাদের অন্যতম। স্বাধীন ভারতের রাজনীতিতে তাদের উত্থান কিন্তু কংগ্রেস বিরোধী শিবির থেকে হয়নি, বরং কংগ্রেসের হাত ধরেই হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন ভারতে অলিখিত ভাবে ‘রাজনৈতিক রাজঘরানা’র উষ্ণীস বহন করছিল যে পরিবার, সেই গান্ধীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে গোটা সিন্ধিয়া ঘরানা মিশে গেল বিজেপিতে।
মধ্যপ্রদেশের মারাঠা রাজবংশের সর্বশেষ ‘মহারানি’ ছিলেন রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া। ১৯৫৭ সালে গুণা লোকসভা আসন থেকে কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হন বিজয়ারাজে। ১৯৬২ সালেও কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচন করলেও দলটির শীর্ষ ক্ষমতায় ইন্দিরা গান্ধীর উত্থানের জেরে দূরত্ব বাড়তে থাকে তার। ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে যোগ দেন জনসঙ্ঘ পার্টিতে। বিজেপি গঠনেও ভূমিকা রাখেন তিনি।
নিজের ছেলে মাধবরাও সিন্ধিয়াকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন তিনি। তবে ১৯৭৭ নাগাদ মাধবরাওয়ের সঙ্গে জনসঙ্ঘের সম্পর্কে ভাঙন ধরে যায়। কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০২ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কংগ্রেসেই ছিলেন মাধবরাও।
পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পর রাজনীতিতে আসেন বিদেশে পড়ালেখা করা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। উপনির্বাচনে পিতার আসনেই ৩০ বছর বয়সী জ্যোতিরাদিত্যকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। বিপুল ব্যবধানে জিতে জ্যোতিরাদিত্য লোকসভায় পৌঁছান। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আসন ধরে রাখার পুরস্কার হিসেবে তিন বছর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও করা হয় তাকে।
২০০১ সালে রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া মারা যান। কিন্তু তার দুই মেয়ে বসুন্ধরা রাজে এবং যশোধরা রাজে ততদিনে বিজেপিতে জায়গা করে নিয়েছেন। বসুন্ধরা রাজস্থানের রাজনীতিতে আর যশোধরা রয়েছেন মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায়।
২০১৮ সালের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ঘিরে কংগ্রেসে কোণঠাসা হয়ে পড়েন জ্যোতিরাদিত্য। রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তাকে বাদ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় কমলনাথকে। রাজ্য সভাপতিও করা হয়নি তাকে। এমনকি রাজ্যসভার সদস্যও করা হয়নি। এসব নিয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব হোতে থাকে তার। ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছর নভেম্বরের শেষ দিকে টুইটার একাউন্ট থেকে নিজের কংগ্রেসি পরিচয় মুছে ফেলেন জ্যোতিরাদিত্য। ইউপিএ আমলের সাবেক মন্ত্রীর বদলে, ‘জনসেবক’ এবং ‘ক্রিকেটপ্রেমী’ হিসাবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। তখন থেকেই তার বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
সাম্প্রতিকতম সমস্যাটা শুরু হয়েছিল রাজ্যসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে। মধ্যপ্রদেশের যে ৩টি আসনে নির্বাচন হবে, তার মধ্যে ১টি আসনে কংগ্রেসের এবং ১টিতে বিজেপির জয় নিশ্চিত ছিল। অন্য ১টি আসনেও কংগ্রেসের পাল্লাই ভারী ছিল, কিন্তু নিশ্চিত ছিল না। জ্যোতিরাদিত্য চাইছিলেন নিশ্চিত আসনটি থেকে প্রার্থী হতে। কমল নাথ রাজি ছিলেন না বলে গুঞ্জন। রাহুল গান্ধীর ‘কিচেন ক্যাবিনেটের’ সদস্য মনে করা হত যাঁকে, সেই জ্যোতিরাদিত্যের এ হেন সঙ্কটে ১০ জনপথ হস্তক্ষেপ করবে বলে সম্ভবত আশা ছিল গ্বালিয়রের মহারাজার। কিন্তু নয়াদিল্লি সূত্রের খবর, ১০ জনপথের তরফ থেকেও কোনও উষ্ণতা টের পাননি মাধবরাও-পুত্র।যার ফল আজকের এই দিন।
গান্ধি পরিবার চেষ্টা করলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে আটকাতে পারত। কংগ্রেস তরফে এমন হা-হুতাশ শোনা যাচ্ছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কুলদীপ বিষনোইয়ের টুইট, “জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগ কংগ্রেসের কাছে বড় ধাক্কা। ওকে বোঝাতে শীর্ষ নেতৃত্বের আরও একটু সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন ছিল। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কংগ্রেসের সংগঠনের বড় স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছেন। উনার মধ্যে গোটা দেশে এমন আরও কংগ্রেস কর্মী আছেন, যারা নিজেদের বঞ্চিত মনে করেন।”