কলকাতা: বেহালা পূর্ব ও ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায় । পুরভোটে প্রাক্তন মেয়রের কেন্দ্র এই দায়িত্ব তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছিল তৃণমূল। আচমকা তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরই ফের শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে নতুন করে জল্পনা ছড়াল।
রত্না চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বেহালা পূর্বের কাউন্সিলরদের থেকে তিনি সহযোগিতা পাচ্ছিলেন না। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েই দায়িত্ব ছেড়েছেন তিনি। যদিও কানাঘুষো বলছে, শোভনের ‘মান’ রাখতেই রত্না চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রত্নার কথায়, “আমি তৃণমূলের কর্মী। আমি ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মানুষের পাশে থাকব। আমার বেহালা পূর্বের দায়িত্ব ছাড়ার সাথে বৈশাখী ও মুখ্যমন্ত্রীর মিটিংয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।” উল্লেখ্য, এদিন ‘বাংলা গর্ব মমতা’ কর্মসূচিতে বেহালা পূর্বে ‘জলযোগ যোগাযোগ’ অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু সকালে সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়। তারপরই সামনে আসে পুরভোটের দায়িত্ব থেকে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সরে দাঁড়ানোর কথা। আর এরসঙ্গেই জোরালো হয়েছে তৃণমূলে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফেরার জল্পনা। তাঁর বদলে দায়িত্বে এলেন ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ১৩ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ ওরফে বুয়া।
আরও পড়ুন: শুভ জন্মদিন মি: পারফেকশনিস্ট! রইল আমির খানের সেরা ও খারাপ সিনেমার তালিকা
তৃণমূলের অনেকে বলেন, গত পৌনে দু’বছর শোভনবাবু যে কয়েকজন হাতেগোনা তৃণমূল নেতার সঙ্গে রোজ যোগাযোগ রাখতেন, তাঁর মধ্যে এই কাউন্সিলর অন্যতম। শাসকদলের এক নেতার কথায়, শোভনের স্নেহভাজন হওয়ার সুবাদেই ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান করা হয়েছিল বুয়াকে। দিল্লি যাত্রার পরও এই কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রাক্তন মেয়রের। দলের প্রথম সারির উজ্জ্বল সহকর্মীকে ফেরত পেতে তৃণমূলের অনেকেই উন্মুখ। প্রাক্তন মেয়রের বিধানসভা কেন্দ্রে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া সুশান্ত সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
শোভনের সঙ্গে যে সব বিষয় নিয়ে তৃণমূলের মনোমালিন্য চলছিল, তার মধ্যে অন্যতম দলে রত্নার উত্থান। শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দিলেও, তাঁকে তৃণমূলে ফেরানোর চেষ্টাও চলছিল সমান্তরাল ভাবে। কিন্তু সে পথে কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। কারণ দলে তাঁর গুরুত্ব ক্রমশই বাড়ছিল, যা শোভনের আপত্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তা কার্যত নিষ্ফলা হয়।
আরও পড়ুন: ‘একলা চলে রে’ ট্যাটু, এবার আলোচনায় কিয়ারার উন্মুক্ত শরীর
তবে সেই পরিস্থিতি আচমকা গতি পায় গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টার সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, তা নবান্ন থেকে বেরিয়ে স্পষ্ট করেননি বৈশাখী। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, সে দিনের বৈঠকের ফলই এ বার ফলতে শুরু করেছে। তাঁদের মতে, বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে দলীয় কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব থেকে রত্নার সরে যাওয়া আসলে পুরভোটের আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া।