The News Nest: পুরীর কথা বলতেই প্রথমে মনে আসে জগন্নাথ দেবের মন্দির, আর বিশাল রথযাত্রা উৎসব। চার ধামের মধ্যে পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির অবশ্যই অন্যতম। সারাবছর ধরেই দেশে বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্তরা জগন্নাথ দেশের দর্শনের জন্য পুরীর এই মন্দিরে এসে ভিড় জমান। এই ঐতিহাসিক জগন্নাথ মন্দির ১০৭৮ সালে তৈরি হয়। ১১৭৪ সালে তা মেরামতির পর আজকের জগন্নাথ মন্দিরর রূপ ধারণ করে। এই পুরী জগন্নাথ মন্দিরের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট আছে। যা অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় তবে বাস্তবও বটে।
মন্দিরের চূড়ায় যে পতাকাটি লাগানো রয়েছে তা সবসময় হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে।
হাওয়ার চলন সাধারণত দিনের বেলায় হাওয়া সমুদ্রের দিক থেকে তটের দিকে আসে। আর সন্ধ্যের সময় তটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে। কিন্তু পুরীর ক্ষেত্রে তা ঠিক উল্টো। সকাল তটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে, এবং সন্ধ্যায় সমুদ্রের দিকে থেকে তটের দিকে হাওয়া বয়।
পুরীর যে কোনও জায়গা থেকে তাকালে মন্দিরের চুড়ার সুদর্শন চক্র আপনার সম্মুখীন থাকবে।
মন্দিরের উপর কোনও পাখি বা বিমান পুরী মন্দিরের উপর দিয়ে উড়তে পারে না।
মন্দিরের সবচেয়ে বড় প্রাসাদটির ছায়া দিনের যে কোনও সময় অদৃশ্য থাকে।
আরও পড়ুন:
পুরী মন্দিরের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট হল প্রসাদ। সারা বছর ধরেই সমপরিমান প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমান প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ হোক বা ২০ লক্ষ মানুষকে খাওয়ানো হোক তবু প্রসাদ কখনও নষ্ট হয় না বা কখনও কম পড়ে না।
মন্দিরের হেঁশেলে একটি পাত্রের উপর আর একটি এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচের তারপরে। এভাবে করতে করতে সবচেয়ে দেরিতে সবচেয়ে নিচের পাত্রের রান্না হয়।
মন্দিরের ভিতরে সিংহদ্বারের মন্দিরে প্রবেশ করার পর প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের আওয়াজ আর শুনতে পারবেন না। কিন্তু ওই সিঁড়িটি টপকে গেলে আবার সমুদ্রের শব্দ শুনতে পাবেন। সন্ধ্যাবেলায় এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
সাধারণত কোনও মন্দিরে বিগ্রহ নয় পাথর নয় ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা তিনজনের বিগ্রহই কাঠের তৈরি। প্রত্যেক ১২ বছর পর একটি গোপন রীতি মেনে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে নতুন শরীর দেওয়া হয়। অর্থাৎ নতুন রূপে তৈরি করা হয় যাকে বলা হয় পুনর্জন্ম তথা নবকলেবর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মন্দিরের মুখ্য পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পান যে গাছের কাঠ দিয়ে নবকলেবর হবে তা কোথায় পাওয়া যাবে। সেই গাছের কিছু বিশেষত্ব থাকতে হবে। গাছটি নিমগাছ হবে কিন্তু তাতে চন্দনের গন্ধ থাকবে, গাছে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মর চিহ্ন থাকবে। সেই গাছে যেন কোনওদিনেও কোনও পাখি না বসে, পশু না চড়ে। আর গাছটি সাপেরা ঘিরে রাখবে।
এখনকার জগন্নাথ মন্দিরটির সঙ্গে প্রথম তৈরি হওয়া পুরী মন্দিরের অনেক তফাৎ। শুধু মূল মন্দিরটা তৈরি করেছিলেন ইন্দ্রদুম্ন । কিন্তু পরে তৎকালীন সম্রাট ও শাসকদের নেতৃত্বে ক্রমে মেঘানন্দ পাচেরি, মুখশালা , নটমণ্ডপ প্রভৃতি আরও বহু সম্পদ যুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: