হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। সেই পার্বণের মধ্যে এক ঐতিহ্যপূর্ণ পার্বণ হল রান্না পুজো। বাংলা বছরে দু’দিন অরন্ধন উৎসব পালিত হয়। মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরদিন শীতলষষ্ঠীতে শিলনোড়া পুজোর দিন, আর ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিন। এ দু’দিন উনুন জ্বালানো হয় না। পূর্ণ দিবস বিশ্রাম। এ দু’দিন আগের দিনের রান্না করা খাবার অর্থাৎ বাসি বা পান্তা খাবার খাওয়ার রীতি। রান্না পুজো বা অরন্ধন উত্সব পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই পালিত হয়। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে এই পুজো বা ব্রত ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। বিশ্বকর্মার আগের দিন এই ব্রত পালন করা হয়। এ বছর আগামী ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর রান্নাপুজো পালিত হবে।
বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন সাধারণত অমাবস্যার অন্ধকার থাকে। গৃহস্থের একটি বড় লৌকিক উৎসব। ঐতিহ্য মেনে,রান্না পুজো আসলে গৃহদেবতার পুজো এবং উনুনের পুজো। রান্না পুজোর দিন রাতে গৃহদেবতাকে পুজো করে রান্না বসানো হয়। ঘোর অন্ধকারে বাড়ির সবাই সারা রাত ধরে কুটনো, বাটনা, রান্না করেন। আর পর দিন মা মনসাকে নিবেদন করে তবে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চলে। রান্না পুজোর পরের দিনকে পান্না বলে।
আরও পড়ুন: Ganesh Chaturthi 2021: বাড়িতে সহজে বানিয়ে নিন Eco-Friendly গণেশ
রান্নাপুজোর খাদ্যতালিকা-
ভাত, মুগ আর খেসারি ডাল, আলু ভাজা, বেগুন ভাজা, পটল ভাজা, কুমড়ো ভাজা, চিচিংগে ভাজা, করলা ভাজা, কাঁচকলা ভাজা,ওলের বড়া, নারকেল কুরো ভাজা, ছোলার ডাল, পুঁইশাক, মাছ ভাজা, মাছের ঝাল,চালতাকে গুড় দিয়ে চাটনি ইত্যাদি। তবে অনেক বাড়িতে ইলিশ মাছ রান্না করার নিয়ম রয়েছে।
খাবার নিবেদনের রীতি
মনসা ঠাকুরের বেদীকে শোলার মালা দিয়ে সাজানো হয়। সব ধরনের কাঁচা সবজি, বাতাসা, ধূপ-প্রদীপ দিয়ে সাজিয়ে কুল পুরোহিতকে দিয়ে পুজো করানো হয়। এরপর রান্নাঘরটিকে সুন্দর ভাবে পরিস্কার করে গোবল দিয়ে নিকিয়ে তাতে আলপনা দেওয়া হয়। উনুনের মুখে শালুক ফুল এবং ফণি মনসার ডাল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়। আসলে উনুন হল হিন্দু ধর্মের অনন্য প্রতীক। রান্না পুজোর দিন সিদুঁর দিয়ে একটি মানুষের চিহ্ন আঁকা হয়। এরপর পাঁচটি খাবারের থালায় খাবার সাজিয়ে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। হেঁসেলে ধূপ-প্রদীপ দিয়ে প্রণাম করেন বাড়ির সকলে।
আরও পড়ুন: Radha Ashtami 2021: রাধাষ্টমীর ব্রত পালনে দূর হয় অর্থের অভাব, জেনে নিন পুজোর নিয়ম ও সামগ্রী