Site icon The News Nest

বাবা লোকনাথের এক আশ্চর্য ছবি, যা আজও বহু মানুষকে ভাবিয়ে তোলে

baba loknath

জীবনদশায় একশ ষাট বছরের মধ্যে বাবা লোকনাথ বেশি সময় কাটিয়েছেন ধ্যান এবং যোগসাধনায়। হিমালয়ের নির্জন পাহাড়ের গুহা, গভীর অরণ্য, পরিত্যক্ত পর্ণকুটিরে তাঁর এই সাধনা চলেছিল।

জ্ঞানের সন্ধানে তিনি মক্কা, মদিনাও ঘুরে বেড়িয়েছেন। চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের। তিনি সর্বব্যাপী মানুষের কল্যাণ সাধনে মগ্ন ছিলেন আজীবন।

বাংলা ১১৩৭ সনের ১৮ই ভাদ্র কলকাতার অদূরে চব্বিশ পরগনার চৌরাশি চাকলা গ্রামে তাঁর দেহাগমন ঘটেছিল। ‘আমি শতাধিক বছর ধরে কত পাহাড়-পর্বত পরিভ্রমণ করে বড়ো রকমের একটা ধন কামাই করেছি। তোরা বসে বসে খাবি। ‘রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে যখনি বিপদে পড়বি, আমাকে স্মরণ করবি, তার পরের ভার আমার।’ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বিখ্যাত উক্তি।

লোকনাথ বাবার অগণিত ভক্ত। ভারতীয় আধ্যাত্মজগতের অন্যতম রহস্যময় ব্যক্তিত্ব লোকনাথ ব্রহ্মচারীকে দৈব অবস্থানে বসাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনি বাঙালি। তিনি ‘রহস্যময়’ কারণ, তাঁর সম্পর্কে তেমন বিশদ তথ্য পাওয়া যায় না। অসংখ্য অলৌকিক কাহিনি তাঁর জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হয়। তাঁর উপদেশাবলিও খুবই সংক্ষিপ্ত। কিন্তু বাঙালির কাছে তাঁর ভাবমূর্তি নিয়ত উজ্জ্বল হয়ে। ঘরে ঘরে পূজা পান তিনি।

আরও পড়ুন: স্বামী বিবেকানন্দের জীবন বদলে দেওয়া কিছু বাণী, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই

তাঁর এক ছবি নিয়ে রয়েছে বিপুল রহস্য। ঢাকার বারোদি গ্রামের শ্রীলোকনাথের একটি প্রতিকৃতিকে ঘিরে এমন এক রহস্যের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যা সত্যিই রোমাঞ্চকর। লেখক অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় এক নিবন্ধে লেখেন সেই কাহিনি। তিনি জানিয়েছেন, বাবা লোকনাথের যে ছবিটি আমদের চোখের সামনে বিরাজ করে, তার উৎস একটি ফোটোগ্রাফ। সেই ছবিটি তুলেছিলেন দেশীয় রাজ্য ভাওয়ালের তৎকালীন রাজা।

আজ থেকে ১৩০ বছর আগে সেই ফোটো থেকে একটি পেন্টিং তৈরির কথা ভাবেন রেণুকা নাগ। রেণুকাদেবী ঢাকার বিখ্যাত নাগ পরিবারের প্রেমরঞ্জন নাগের স্ত্রী। রেণুকাদেবী লোকনাথ বাবার সেই ছবিটি দেখেন, যেটি ভাওয়ালের রাজা তুলেছিলেন।

ছবিটি ছিল নেহাতই ছোট— মাত্র ৩ ইঞ্চি বাই ৫ ইঞ্চির। রেণুকাদেবী বাবার একটি বড় প্রতিকৃতি তৈরি করাতে মনস্থ করেন। ঢাকার এক প্রতিভাবান অথচ দরিদ্র শিল্পী দুর্গেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রীলোকনাথের একটি পেন্টিং আঁকার বরাত দেন। এবারেই শুরু হয় অতিলৌকিক কিছু ব্যাপার।

দুর্গেশবাবু প্রথমে এ ফোর সাইজের একটি কাগজে প্রতিকৃতিটি আঁকতে শুরু করেন। সাদা কাগজে চাইনিজ ইঙ্কেই তিনি প্রাথমিক স্কেচটি করতে থাকেন। আসল প্রতিকৃতিটি তাঁর সামনে দেওয়ালে টাঙানো ছিল। স্কেচ কিছুদূর এগোনোর পরে এমন কিছু অনুভূতি দুর্গেশবাবুর হতে থাকে, যা ব্যাখ্যাতীত। পরে তিনি জানান, আঁকতে আঁকতে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ছেন। এবং তার পরে কী ঘটছে, তিনি জানেন না।

রেণুকাদেবীর দৌহিত্র অভিজিৎ রুদ্র বর্তমানে কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা। অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর বক্তব্য অনুয়ায়ী, আবিষ্ট অবস্থায় দুর্গেশবাবুর হাত অবিশ্বাস্য গতিতে চলতে শুরু করে। একটি এ ফোর কাগজে বাবার মুখাবয়বটি আঁকা হয়। তাঁর শরীরের বাকি অংশ অন্য কয়েকটি এ ফোর-এ এঁকে একত্র করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দান করা হবে ঠিক হয়। সব শেষে দুর্গেশবাবু প্রতিকৃতির চোখ আঁকবেন বলে স্থির করেছিলেন।

কিন্তু চোখ আঁকতে গিয়ে বার বার বিপত্তি দেখা দেয়। চোখ আঁকতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন, যে আবেশে তিনি পুরো ছবিটি এঁকেছেন, তা লুপ্ত হয়েছে। কিছুতেই তিনি প্রতিকৃতিতে প্রকৃত চক্ষুদান করে উঠতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের মতো করে প্রতিকৃতির চোখ আঁকেন।

নাগ পরিবারের এক প্রবীণ সদস্যকে নিয়ে এসে সেই প্রতিকৃতি দেখানো হয়। তিনি জানান, বাল্যকালে তিনি বাবা লোকনাথকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি দুর্গেশবাবুর আঁকা প্রতিকৃতির চোখের সঙ্গে বাবা লোকনাথের চোখের কোনও মিল নেই বলেন। বার বার দুর্গেশবাবু চোখ আঁকেন, বার বার সেই প্রবীণ ভদ্রলোকও হচ্ছে না বলে জানান দিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত অবস্থায় সেই ছবি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে থাকে।

প্রায় দেড় বছর পরে এক শীতের রাতে দুর্গেশবাবু ঢাকায় বুড়িগঙ্গার ধারে একটি পার্কে বেড়াচ্ছিলেন। পার্কের দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়ে তিনি টের পান সেটি বন্ধ এবং সামনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে হয় তাঁর। মুখ তুলে তিনি দেখতে পান, এক দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। একটি আচ্ছাদনে তাঁর মুখটি ঢাকা।

ফ্রেমে সেই পুরুষ তাঁর মুখাবরণটি সরান। দুর্গেশবাবু দেখতে পান, অতি তীব্র আলোকজ্যোতিসম্পন্ন চক্ষুদ্বয় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্বয়ং শ্রীলোকনাথ। দুর্গেশবাবু জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরতে তিনি কারোকে আর দেখতে পাননি। এবারে তিনি একদৌড়ে রেণুকাদেবীর বাড়ি আসেন এবং দ্রুত হাতে প্রতিকৃতিতে চক্ষুদান করেন।পরের দিন সেই প্রবীণ ভদ্রেলোককে নিয়ে আসা হয়, তিনি প্রথম দর্শনেই চমকিত হন। ‘বাবা’ বলে উচ্চৈস্বরে ডেকে তিনি জ্ঞান হারান।

আরও পড়ুন: লোকনাথ বাবার অমর বাণী, যা আপনার জীবন বদলে দেবে

 

Exit mobile version