ভাইফোঁটা হিন্দুদের একটি বিশেষ উৎসব । এই উৎসবের পোষাকি নাম ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে (কালীপুজোর দুই দিন পরে) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাঙ্গালী হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিন উদযাপিত হয়। মাঝেমধ্যে এটি শুক্লপক্ষের ১ম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে ।
পশ্চিম ভারতে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পরিচিত । সেখানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন । আবার, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ । নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ভাইটিকা নামে । সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল যমদ্বিতীয়া ।
কথিত আছে, এই দিন মৃত্যুর দেবতা যম তাঁর বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন । অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয় । ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে বলে-
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোটা
যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা ।
কাটা যেন নড়েনা
ভাই যেন মরেনা ।’ (কোচবিহার)
এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে । তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায় । ভাইও বোনকে কিছু উপহার দেয় ।
বলা হয়ে থাকে ভাইফোঁটা যদি ভাইয়ের জন্মবারে পরে তবে ভাই সেবার ফোঁটা খেতে পারে না। তাই দেখে নিন এবছর কোন বারে ভাই ফোঁটা, আর কোন সময়েই বা ফোঁটা খেতে পারবেন-
নভেম্বর ৫ তারিখ শুক্রবার রাত্রি ১১ টা ১৪ মিনিট থেকে দ্বিতীয়া তিথি শুরু হয়ে শেষ হবে পরের দিন ৬ নভেম্বর শনিবার রাত্রি ৭ তা ৪৪ মিনিটে। আর ভাই ফোঁটার সময় ৬ নভেম্বর শনিবার দুপুর ১২ টা ২৭ মিনিট থেকে ২টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত, মাত্র ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট।
কোন দিকে মুখ করে বসা উচিত?
ফোঁটা নেওয়ার সময় দিকেরও সম্পর্ক রয়েছে। শাস্ত্র অনুযায়ী সব সময় পূর্ব দিকে মুখ করে ফোঁটা নেওয়া শুভ। তবে সমস্যা থাকলে উত্তর দিক বা উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করে ফোঁটা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, কখনই দক্ষিণ দিকে মুখ করে ভাইফোঁটা নেবেন না। এটা অত্যন্ত অশুভ বলে বিবেচিত হয়।